পর্বতচূড়ার দেশ আমার দেখা ভূটান

Share on Facebook

টাইগার নেষ্টের অবস্থান ও নির্মাণ কৌশল ধর্মীয় চেতনার বাইরে বিশ্ববাসীর নিকট ধরা দেয় পর্যটক কেন্দ্র হিসাবে। তাই অসংখ্য পর্যটক তা দর্শন করতে প্রায় প্রতিদিনই। ভীড় জমায় বাঁধ ভাঙ্গা কৌতুহল নিয়ে। অতি উৎসাহী পর্যটকেরা তিন থেকে সাড়ে তিন ঘন্টা সময় ধরে দূর্গম পাহাড়ী পথে ট্র্যাকিং করে পৌঁছায় নেষ্টের গোড়ায়। যদিওবা পাহাড়ে চড়বার জন্য আছে ঘোড়ার ব্যবস্থা। তবু ঢালু পথে কষ্ট করে হলেও পায়ে হাঁটাই বেশি নিরাপদ।

টাইগার নেষ্টের ইতিহাস ও
নামের সাথে টাইগার মহোদয়ের নাম সম্পৃক্ত থাকলেও বাস্তবে তার অস্তিত্ব আছে বলে মনে
হয় না। যা আছে তা হলো, লোম খাড়া, স্বাস্থ্যবান, অসংখ্য বেটে কুকুর। কখনো শৃংখলে,
কখনোবা বিশৃংখলে সদলবলে চলতে দেখা যায় তাদের। মোটামুটি দুপুরের দিকে আমরা পৌঁছাতে
পারলাম টাইগার নেষ্ট পর্বতের গোড়ায়। পাকিংয়ে অনেক গাড়ি, আশেপাশে আছে হরেক রকমের
খাবার-দাবার, ফল-মূল, পোশাক, প্রসাধনী, খেলনার দোকান। এবং সব দোকানেই রয়েছে মানুষের
উপস্তিতি। আর আছে মানুষ, গাড়ি ও গাছের আড়ালে আবডালে স্বাস্থ্যবান কুকুরগুলোর
যথেষ্ঠ আনাঘোনা। ভূটানের কারু ও হস্ত শিল্পের দোকানগুলোতে বিদেশি পর্যটকদের ভীড়
চোখে পড়ার মত। ঘুরলাম, দেখলাম, কিন্তু কিনলাম না কিছুই। টাইগার নেষ্ট ঘুরে ফিরবার
পথে কিনব বলে স্থির করলাম।

ট্র্যাকিং করার জন্য
নূন্যতম প্রস্তুতি থাকা উচিত। যেমন- চকলেট, চুইংগাম, স্যালাইন, পানি, লাঠি, এমনকি
পরনের পোশাকের ব্যাপারে পর্যন্ত খেয়াল রাখতে হয়। গুছিয়ে নেয়ার বিষয়টা আমাদের সবই
জানা থাকা সত্ত্বেও প্রস্তুতিটা আমাদের গুছিয়ে নেয়া হলনা। যেহেতু অপরাহ্নেই উঠা, দেখা
এবং ঘুরে আসা, তাই কাল বিলম্ব না করে দল ধরে শুরু হলো আমাদের পথ চলা। আবেগ আর
পাহাড় জয় যে সম্পূর্ন ভিন্ন বিষয়, তা ভুলেই গিয়েছিলাম আমরা। ঘন সবুজ পাইন বন, ঝিরি
ঝিরি পাতায় বাতাসের গুঞ্জরণ, সাথে আছে পাহাড়ীপথের পাখ-পাখালির কল কাকলি, বাঁধন
হারা কুকুরগুলোর ডলাডলি। চলছি আমরা পায়ে হেঁটে দূর্গম পাহাড়ের ঢালুপথে। চলছি তো চলছিই।
একটু জিরিয়ে নিয়ে আবার চলি। ঐ যে দেখা যায় টাইগার নেষ্ট, কিন্তু না তখনও বহুদূর!

ঢালু, মেটো পথ, ঝর্ণা,
ব্রীজ, সিড়ির ধাপ ধরে ধরে, বহু পরে পাওয়া যায় তথাকথিত বাঘের গুহা। পথের বর্ণনা
হরেক রকমের হতে পারে। তবে সকল রকমেই উল্লেখ থাকবে, ‘সে পথ যে বড়ই কষ্ঠের পথ!’ এটাও
সত্য যে একবার সেখানে পৌঁছাতে পারলে সে কষ্টও হয় স্বার্থক।

অপরুপ সৌন্দর্যে গড়া সে তাক্তুসাং
মন্দির ছোট নয়। আকারে বেশ বড় পাথুরে পাহাড়ের দেওয়ালে ঝুলানো। ধর্মীয় অনুভূতি
সম্পৃক্ত থাকায়, শিল্পী তার সর্বোচ্চ কল্পনাশক্তি দিয়ে কারুকার্য খচিত করেছে
মন্দিরটিকে। প্রাচূর্যের মাঝে কৃত্রিমতার শৈল্পিক ছোঁয়ায় উপচে পড়া সৌন্দর্য্যে
পরিপূর্ণ মন্দিরের ভিতরে ও বাহিরের নকশা দেখে পর্যটকদের মন ভরবেই ভরবে। ঘুরে ঘুরে
দেখলাম মন্দির। আমাদের মনও ভরলো। ভালো করে। দেখলাম, দূরের পারো শহরকেও।

ক্লান্ত-শ্রান্ত, অবসন্ন
দেহে, একটু জিরিয়ে নিতে নিতে ভাবলাম, অরণ্য ঘেরা পাথুরে পাহাড় এতোটাই দূর্গম
প্রান্তরে, সেখানে ইনসানতো দুরের কথা ভূত-পেত্নীও ভয় পায়। ডোরাকাটা পাহাড় নিজেই এক
দৈত্য। নির্জনতা যেন এক মৃত্যুপুরী। এখনই যদি হয় এমন চিত্র! শতবর্ষ পূর্বে কেমন
ছিল? সহস্র বর্ষ পূর্বেই বা কেমন ছিল? একেতো মানুষ ছিল কম, তার ওপর জঙ্গল। জঙ্গল
থেকে লোকালয় ছিলো বহুদুরে। তবুও জগত জুড়ে ধর্মগুরু, সাধু-সন্নাসী, অবতারেরা ধর্ম-কর্ম
করার জন্য নদীর পাড়, অরণ্য, পাহাড় বা সাগরকেই বেছে নিয়েছিলো। সত্যিই তারা
বুদ্ধিমান ছিল। তারা ঠিকই বুঝেছিল, পশুপাখির সাথে যতটা নির্ভূল ভাবে ধর্ম পালন করা
যায়, মানুষের সাথে ততটা যায় না।

এমনই সব অলস ভাবনার সাথে পাহাড় থেকে উপভোগ করলাম পারো শহরের রুপ। পাহাড় মারার ক্লান্তি আর নেই বটে, কিন্তু কোথায় যেন ভুল হয়েছে! আমরা যখন পাহাড় চূড়ায়, তখন আমাদের সঙ্গীরা কেউ নেই সাথে। আছি মাত্র দু’জন। আমি আর মামুন ভাই। অচেনা অজানা কিছু বিদেশি পর্যটকদের দেখা মিলেছিল, কিন্তু তা যথেষ্ট নয়। দিনের দম শেষে, সন্ধ্যা আসবে বলে দাড়ানোর সময় নেই বিকেলেরও। শীতল আবহাওয়ায় তেজী রোদ্র দূর্বল হয়ে, লেজ গুটিয়ে যায় যায় অবস্থা! এখন আমরা????

One thought on “পর্বতচূড়ার দেশ আমার দেখা ভূটান

Leave a Reply