বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে ঢাকার উৎপত্তি।

Share on Facebook

৪০০+ বছর আগে নদীর তীরেই গড়ে উঠেছিল ঢাকা শহর, নদীটির নাম বুড়িগঙ্গা। ব্রহ্মপুত্র আর শীতলক্ষ্যার পানি এক স্রোতে মিশে বুড়িগঙ্গা নদীর সৃষ্টি হয়েছিল। তবে বর্তমানে এটা ধলেশ্বরীর শাখাবিশেষ। কথিত আছে, গঙ্গা নদীর একটি ধারা প্রাচীনকালে ধলেশ্বরী হয়ে সোজা দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরে মিশেছিল। পরে গঙ্গার সেই ধারাটির গতিপথ পরিবর্তন হলে গঙ্গার সাথে তার সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। তবে প্রাচীন গঙ্গা এই পথে প্রবাহিত হতো বলেই এমন নামকরণ। মূলত ধলেশ্বরী থেকে বুড়িগঙ্গার উৎপত্তি। কেরানীগঞ্জ এর কলাতিয়া এর উৎপত্তিস্থল। বর্তমানে উৎসমুখটি ভরাট হওয়ায় পুরানো কোন চিহ্নর খোঁজ পাওয়া যায় না।

জোয়ারের সময় বুড়িগঙ্গা নদীর উত্তাল ঢেউ মুঘলদের মুগ্ধ করেছিল। ১৬২৬-২৭ সালে সৌন্দর্য বাড়ানোর কাজ করেছিলেন বাংলার সুবাদার মুকাররম খাঁ, তার শাসনামলে শহরের যেসকল অংশ নদীর তীরে অবস্থিত ছিল, সেখানে প্রতি রাতে আলোক সজ্জা করা হতো। এছাড়া নদীর বুকে অংসখ্য নৌকাতে জ্বলতো ফানুস বাতি। তখন বুড়িগঙ্গার তীরে অপরুপ সৌন্দের্য্যের সৃষ্টি হতো।

১৬২৭ সালে তার অধিনস্ত কর্মচারীদের নিয়ে বজরা নৌকা নিয়ে নদী ভ্রমনে বের হন, মাগরিব নামাজের ওয়াক্ত হওয়াতে মাঝী মাল্লাদের আদেশ দেন নৌকা নিয়ে ঘাটে ফিরে যাবার, ফেরার পথে প্রচন্ড ঝড়ো হাওয়ায় নৌকাটি ডুবে যায়, সেখানে সবার সাথে তার মৃত্যু হয়, কিন্তু সেটা কি বুড়িগঙ্গা নদীতে হয়েছিল না অন্য জায়গায় তার আর উল্লেখ নেই কোথাও, তবে কথিত আছে ঢাকার পার্শবর্তী কোন এক নদীতে তাদের বজরা নৌকা ডুবে যায়।

১৮৪০ সালে সরকারি আদেশে প্রকাশিত ‘অ্যা স্কেচ অব দ্য টপোগ্রাফি অ্যান্ড স্ট্যাটিস্টিক্স অব ঢাকা’ গ্রন্থে জেমস টেলর লিখেছিলেন, বুড়িগঙ্গা নদী বর্ষাকালে যখন পানিতে ভরপুর থাকে তখন দুর থেকে ঢাকাকে দেখায় ভেনিসের মতো। ‘শুরুর দিকে লালবাগ কেল্লা বুড়িগঙ্গা সংলগ্ন ছিল। এখন তা সরে গেছে অনেকটা।’ বইটি যখন লেখা হয় তখনই নদী ও লালবাগ কেল্লার মধ্যে দূরত্ব তৈরি হয়েছিল।

ব্রিটিশ আমলে সোয়ারীঘাটে গয়নানৌকা বুড়িগঙ্গার ঘাটে বাধা থাকত । ঢাকা থেকে মালামালভর্তি হয়ে নৌকাগুলো যেত দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সাথে বার্মার রেঙ্গুন এবং ভারতের কলকাতা বন্দরে যাতায়াত করত। দেশভাগের আগ পর্যন্ত নৌকার যাতায়াত ছিল বেশ রমারমা। এরপর থেকেই বুড়িগঙ্গার মরণকাল শুরু। যার কারনে অনেক পরিবার বাধ্য হয় গয়নানৌকার ব্যবসা গুটিয়ে মুদি-মনিহারি মালামালের ব্যবসায় চলে আসতে।

সুদুর অতীতে বুড়িগঙ্গা নদী ধলেশ্বরী নদীর সাথে মিলিত হয়ে বঙ্গোপসাগরে পতিত হত। তবে, নদীর প্রবাহ পরিবর্তনের ফলে গঙ্গা নদীর সাথে সংযোগ হারানোর পর এই নদীটি বুড়িগঙ্গা নামে পুনঃনামকরন করা হয়।

বুড়িগঙ্গা সাকুল্যে ৩০ কিমি দীর্ঘ। গড়পড়তা ৪০০ মিটার প্রশস্ত। ১৯৮৪ সালে এর পানি প্রবাহের পরিমাণ ছিল সর্বোচ্চ ২ হাজার ৯০২ কিউসেক। তবে বর্তমানে বুড়িগঙ্গার পানি প্রবাহের পরিমাণ প্রায় অর্ধেকের বেশি নেমে এসেছে।

বুড়িগঙ্গার আগের সেই ঐতিহ্য আর নেই। কালের বিবর্তনে দখল হয়ে যাচ্ছে বুড়িগঙ্গার নদী তীর।
পলিথিন, কারখানার বর্জ্য এবং নদীর তীরে অবস্থিত ভবনগুলো ভেঙ্গে ফেলার ফলে এই নদীটি ব্যাপকভাবে দূষিত হচ্ছে।

আমাদের এই ঐতিহাসিক নদী আর তার সাথে প্রানীকুল রক্ষা করা এখন সময়ের দাবি। সবার একান্ত প্রচেষ্টায় এই নদীর ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখা সম্ভব।

(তথ্য সুত্রঃ ঢাকা সমগ্র ৩, মুনতাসীর মামুন,
কিংবদন্তির ঢাকা, নাজির হোসেন, Travel.xyz এ নদী নিয়ে কলাম, মোঃ বোরহান উদ্দিন, কালের কন্ঠ)

Leave a Reply