Rituparno Ghosh: শুভ জন্মদিন ঋতুপর্ণ

Share on Facebook

রবীন্দ্রনাথ এবং সত্যজিৎ রায়ের সৃষ্টি তাঁর কাজের উপর গভীরভাবে লক্ষ্য করা যেত। আজ তাঁর ৫৮তম জন্মতিথি। ২০১৩ সালে তিনি হঠাৎ চলে না গেলে ভারতীয় সিনেমা আরও বেশ খানিকটা সমৃদ্ধ হতে পারত তাঁর ছোঁয়ায়।

  • কখনও অমিতাভ বচ্চন, কখনও সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, ঐশ্বর্য রাই
  • তিনি ছিলেন অস্বাভাবিক রকমের বাঙালি মনষ্ক।
  • তাঁর সৃষ্টির পরতে পরতে তা অনুভব করা যেত।

ভারতীয় চলচ্চিত্র (Indian Cinema) জগতে পরিচালক ঋতুপর্ণ ঘোষ (Rituparno Ghosh) একজন স্মরণীয় ব্যক্তিত্ব। কেবল পরিচালক হিসাবেই নয় অভিনেতা, গীতিকার, লেখক হিসাবেও তাঁর প্রতিভা ছিল উল্লেখযোগ্য।  তৃতীয় লিঙ্গের মুক্তমনা মানুষ ছিলেন তিনি। তাঁর পরিচালিত একাধিক সিনেমার জন্য জাতীয় পুরস্কার-সহ বহু আন্তর্জাতিক সম্মানেও সম্মানিত হয়েছেন। রবীন্দ্রনাথ এবং সত্যজিৎ রায়ের সৃষ্টি তাঁর কাজের উপর গভীরভাবে লক্ষ্য করা যেত। আজ তাঁর ৫৮তম জন্মতিথি। ২০১৩ সালে তিনি হঠাৎ চলে না গেলে ভারতীয় সিনেমা আরও বেশ খানিকটা সমৃদ্ধ হতে পারত তাঁর ছোঁয়ায়।

ঋতুপর্ণ ঘোষের জন্ম ৩১ আগস্ট ১৯৬৩ সালে কলকাতায়। তাঁর বাবা সুনীল ঘোষ ছিলেন তথ্যচিত্র নির্মাতা এবং চিত্রশিল্পী। ঋতুপর্ণ ঘোষের প্রাথমিক পড়াশোনা শুরু সাউথ পয়েন্ট স্কুল থেকে। পরবর্তী কালে তিনি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। এই সময় থেকেই তাঁর সিনেমার প্রতি আগ্রহ প্রকাশ পেতে থাকে।

চলচ্চিত্র জগতে প্রবেশের আগে তিনি ‘রেসপন্স ইন্ডিয়া’ নামের একটি বিজ্ঞাপন সংস্থায় ক্রিয়েটিভ কপিরাইটার বিভাগে চাকরি করতেন। সাধারণত সেই সময় যে কোনও বিজ্ঞাপনের ভাষা সরাসরি ইংরেজি বা হিন্দি থেকে বাংলায় অনুবাদ করে দেওয়া হত। কিন্তু ১৯৮০ সাল নাগাদ তিনি বাংলা ভাষায় আলাদা ভাবে বিজ্ঞাপন তৈরি করতে থাকেন যা বাংলার সংস্কৃতি এবং মানুষের আবেগ স্পর্শ করে। বলা বাহুল্য তাঁর লেখা ওয়ান লাইনার, টু লাইনার বিশেষ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। ‘সুরভিত অ্যান্টিসেপটিক ক্রিম বোরোলিন – বঙ্গ জীবনের অঙ্গ’ ইত্যাদি লেখা আজও জনপ্রিয়। ‘ফ্রুটি’-এর জন্য তাঁর বানানো বিজ্ঞাপন পানীয়টিকে সারা ভারতে বেস্টসেলার করে তুলেছিল। সাধারণ মধ্যবিত্ত সমাজের কাছে তাঁর রচনা সাদরে গৃহীত হত বলে অনেকের ধারণা।

১৯৯০ সালে প্রথম তাঁর কাছে সুযোগ আসে দূরদর্শনের জন্যে ‘বন্দেমাতরম’-এর উপর একটি তথ্যচিত্র নির্মান করার। এর পর থেকেই তিনি সিনেমা পরিচালনার কাজে যুক্ত হন। ১৯৯২ সালে তাঁর তৈরি প্রথম সিনেমা ‘হীরের আংটি’ মুক্তি পায়। শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের উপন্যাস অবলম্বনে এই ছবিটি পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তথ্য ও সংস্কৃতি বিভাগ প্রযোজনা করেছিল। এই ছবিতে বসন্ত চৌধুরী, শকুন্তলা বড়ুয়া, মুনমুন সেন, সুনীল মুখোপাধ্যায়-সহ আরও অনেকে অভিনয় করেন। তাঁর দ্বিতীয় ছবি ‘উনিশে এপ্রিল’ ১৯৯৪ সালে মুক্তি পায়। এই সিনেমাটি দুটি জাতীয় পুরস্কার পায় যার মধ্যে বর্ষসেরা সিনেমা হিসাবে একটি। এই ছবিতে প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়, দেবশ্রী রায়, দীপঙ্কর দে প্রমুখরা অভিনয় করেন।

১৯৯৭ সালে তাঁর পরের ছবি ‘দহন’ মুক্তি পায় যেটি কলকাতার রাস্তায় শ্লীলতাহানি হওয়া এক নারীর জীবনের সত্য ঘটনাকে কেন্দ্র করে বানানো। সেরা চিত্রনাট্যকার হিসাবে সেই বছর এই সিনেমার জন্য জাতীয় পুরস্কার পান ঋতুপর্ণ। ১৯৯৯ সালে তাঁর পরিচালনায় ‘অসুখ’ ছবিটিও জাতীয় পুরস্কারে সম্মানিত হয়। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় এই সিনেমায় অনবদ্য অভিনয় করেন। ২০০০ সালে মুক্তি পায় তাঁর পরবর্তী ছবি ‘বাড়িওয়ালি’। চিরঞ্জিৎ চক্রবর্তী, রূপা গঙ্গোপাধ্যায়, কিরন খের এই সিনেমায় মুখ্য ভূমিকায় অভিনয় করেন। কিরন খের এই ছবিতে অভিনয়ের জন্য পান সেরা অভিনেত্রীর জাতীয় পুরস্কার। এ ছাড়াও ঋতুপর্ণ পরিচালক হিসেবে জাতীয় পুরস্কার পান ২০০০সালে ‘উৎসব’ সিনেমাটির জন্য। এটি বাঙালি জীবনের ঐতিহ্যময় দুর্গাপুজোকে কেন্দ্র করে বানানো ব্যক্তিজীবনের গল্প।

২০০২ সালে তাঁর পরিচালনায় পরবর্তী ছবি ‘তিতলি’ মুক্তি পায়। এই সিনেমার মুখ্য ভূমিকায় অভিনয় করেন মিঠুন চক্রবর্তী। ২০০৩ সালে আগাথা ক্রিস্টির ‘দ্য মিরর ক্র্যাকড ফ্রম সাইড টু সাইড’ অবলম্বনে ‘শুভ মহরৎ’ এবং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের উপন্যাস অবলম্বনে ‘চোখের বালি’ সিনেমা দুটি মুক্তিলাভ করে। ২০০৪ সালে তাঁর পরিচালনার প্রথম হিন্দি ছবি ‘রেনকোট’ মুক্তি পায়। ছবিটি সে বছরের সেরা হিন্দি সিনেমার জাতীয় পুরস্কার পায়। ও হেনরির ছোটোগল্প অবলম্বনে নির্মিত ছিল ছবিটি। এ ছাড়াও অন্তরমহল, খেলা, সব চরিত্র কাল্পনিক, দোসর, দ্য লাস্ট লিয়ার, আবহমান – একের পর এক মাস্টারপিস উপহার দিয়েছেন ঋতুপর্ণ।

একটা বিষয় এখানে অত্যন্ত লক্ষ্যণীয়, প্রতিটি সিনেমায় তিনি তারকাদের নিয়ে কাজ করেছেন। কখনও অমিতাভ বচ্চন, কখনও সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, ঐশ্বর্য রাই, মনীষা কৈরালা, সোহা আলি খান, বিপাশা বসু, রাইমা সেন, প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়, ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত… কিন্তু কখনও নিজের সৃষ্টির ভাবনাকে বিজাতীয় করে ফেলেননি। তিনি ছিলেন অস্বাভাবিক রকমের বাঙালি মনষ্ক। তাঁর সৃষ্টির পরতে পরতে তা অনুভব করা যেত।

 

Leave a Reply