দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া…পর্ব- ০১

Share on Facebook

তানভীর রোমেলঅনেকদিন থেকেই একটা ট্র্যাভেল গাইড লিখার ইচ্ছা। কিন্তু আলসেমির কারণে লিখা হচ্ছে না। আজ অনেক কষ্টে আলসেমি কাটিয়ে লিখার চেষ্টা করলাম। আশাকরছি ভ্রমণপিয়াষু মানুষদের কিছু প্রয়োজনীয় তথ্য দিতে পারবো।

রাতারগুল সোয়াম্প ফরেস্টঃ
দেশের একমাত্র স্বীকৃত সোয়াম্প ফরেষ্ট বা জলার বন রাতারগুল সিলেটের গোয়াইনঘাট এলাকায় অবস্থিত। উত্তরে গোয়াইন নদী, দক্ষিণে বিশাল হাওর। মাঝখানে ‘জলার বন’ রাতারগুল যা বাংলার অ্যামাজন নামে পরিচিত। সিলেট জেলার সীমান্তবর্তী উপজেলা গোয়াইনঘাটের ফতেহপুর ইউনিয়নে রাতারগুলের অবস্থান। সিলেট নগরী থেকে দেশের একমাত্র স্বীকৃত রাতারগুল সোয়াম্প ফরেস্টের (Ratargul Swamp Forest) দূরত্ব প্রায় ২৬ কিলোমিটার। অনিন্দ্য সুন্দর বিশাল এ বনের গাছ-গাছালির বেশিরভাগ অংশই বছরে চার থেকে সাত মাস থাকে পানির নিচে।
এই বনের আয়তন তিন হাজার ৩২৫ দশমিক ৬১ একর। এর মধ্যে ৫০৪ একর বন ১৯৭৩ সালে বন্য প্রাণী অভয়ারণ্য ঘোষণা করা হয়। মূলত প্রাকৃতিক বন হলেও বেত, কদম, হিজল, মুর্তাসহ নানা জাতের পানি সহিষ্ণু গাছ লাগিয়েছে বন বিভাগ। বিশাল এ বনে রয়েছে জলসহিষ্ণু প্রায় ২৫ প্রজাতির উদ্ভিদ। বড়ই অদ্ভুত এই জলের রাজ্য। কোনো গাছের হাঁটু পর্যন্ত ডুবে আছে পানিতে। একটু ছোট যেগুলো, সেগুলো আবার শরীরের অর্ধেকই ডুবিয়ে আছে জলে। কোথাও চোখে পড়বে মাছ ধরার জাল পেতেছে জেলেরা। ঘন হয়ে জন্মানো গাছপালার কারণে কেমন অন্ধকার লাগবে পুরো বনটা। মাঝেমধ্যেই গাছের ডালপালা আটকে দিবে পথ। হাত দিয়ে ওগুলো সরিয়ে তৈরি করতে হবে পথ। হাওরের স্বচ্ছ পানির নিচে বনগুলো দৃশ্যমান থাকায় বর্ষাকালে অনেক পর্যটকের সমাগম ঘটে এখানে। আবার শীত মৌসুমে ভিন্নরূপ ধারণ করে এ বন। পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে জেগে ওঠে মূর্তা ও জালি বেতের বাগান। সে সৌন্দর্য আবার আবার অন্য রকম! বর্ষা কাটলেই দেখা যাবে অন্য চেহারা। তখন বনের ভেতরের ছোট নালাগুলো পরিণত হবে পায়ে চলা পথে। সেই পথ দিয়ে হেঁটে অনায়াসে ঘুরে বেড়ানো যায়।

রাতারগুল সোয়াম্প ফরেস্ট

রাতারগুলে কায়াকিং

রাতারগুলে গেলে কায়াকিং করতে পারেন। কায়াকে ঘুরে আপনি যে মজা পাবেন সেটার সাথে নৌকায় ঘোরার মজা এক হবে না নিশ্চিত। কায়াক নিয়ে আপনি রাতারগুলের যেখানে সেখানে ঢুকতে পারবেন। ইচ্ছা হলেই থামতে পারবেন। যেটা নৌকা নিয়ে আপনি পারবেন না। আর রাতারগুলের ভিতরে ঢুকে কিছু সময় চুপচাপ কায়াকে বসে থাকবেন যেখানে গাছের ঘনত্বের কারনে সূর্যের আলো যায় না, চারিদিকে দিনের বেলাতেই ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক, স্রোতের কল কল শব্দ, হটাৎ পাখির ডানা ঝাপটানোর শব্দ, পানির ভিতরে ঘাটি গেড়ে থাকা বিশাল বিশাল গাছ, ওয়াচ টাওয়ার হতে চারপাশের ভিউ। সর্বোপরি আপনি মুগ্ধ হতে বাধ্য!

কিভাবে যাবেন!

রাতারগুল যাওয়া যায় বেশ কয়েকটি পথে। তবে যেভাবেই যান, যেতে হবে সিলেট থেকেই। ঢাকা থেকে প্রথমে যেতে হবে সিলেট শহর। সড়ক, রেল ও আকাশ পথে ঢাকা থেকে সরাসরি সিলেট আসতে পারেন। চট্টগ্রাম থেকেও সিলেটে আসা যায়। ঢাকা থেকে গ্রীনলাইন পরিবহন, সোহাগ পরিবহন, সৌদিয়া পরিবহনের এসি বাস যায় সিলেটে। ভাড়া ১০০০ টাকা থেকে ১২০০ টাকা। এছাড়া ঢাকার ফকিরাপুল, কমলাপুর, সায়দাবাদ প্রভৃতি জায়গা থেকে শ্যামলী পরিবহন, হানিফ এন্টারপ্রাইজ, সৌদিয়া, মামুন পরিবহন, ইত্যাদি সংস্থার নন-এসি বাসও সিলেটে যায়। ভাড়া ৪০০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা।
ঢাকার কমলাপুর থেকে মঙ্গলবার ছাড়া সপ্তাহের প্রতিদিন সকাল ৬টা ৪০ মিনিটে ছেড়ে যায় আন্তঃনগর ট্রেন পারাবত এক্সপ্রেস। সপ্তাহের প্রতিদিন দুপুর ২টায় ছাড়ে জয়নন্তিকা এক্সপ্রেস। বুধবার ছাড়া সপ্তাহের প্রতিদিন রাত ৯টা ৫০ মিনিটে ছাড়ে উপবন এক্সপ্রেস। শ্রেণিভেদে ভাড়া ২৫০ টাকা থেকে ১০০০ টাকা।
ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বিমান বাংলাদেশ, ইউনাইটেড এয়ার, রিজেন্ট এয়ার, নভো এয়ার এবং ইউএস বাংলা এয়ারের বিমান প্রতিদিন যায় সিলেটের ওসমানী বিমানবন্দরে। শ্রেণিভেদে ভাড়া ২৫০০ টাকা থেকে ৮০০০ টাকা।

রাতারগুল সোয়াম্প ফরেস্ট

সিলেট থেকে রাতারগুল
প্রথম উপায়ঃ

সিলেট থেকে জাফলং – তামাবিল রোডে সারীঘাট হয়ে সরাসরি গোয়াইনঘাট পৌঁছানো। এরপর গোয়াইনঘাট থেকে রাতারগুল বিট অফিসে আসবার জন্য ট্রলার ভাড়া করতে হবে, ভাড়া ১০০০ – ১৫০০ টাকার মধ্যে (আসা-যাওয়া) আর সময় লাগে দুই ঘণ্টা। বিট অফিসে নেমে ডিঙ্গি নৌকা নিয়ে বনে ঢুকতে হবে, এতে ঘণ্টাপ্রতি লাগবে ২৫০-৩০০ টাকা।

দ্বিতীয় উপায়ঃ

সিলেটের আম্বরখানা পয়েন্ট থেকে সিএনজি নিয়ে গোয়াইনঘাট পৌঁছানো, ভাড়া পড়বে ৬০০-৮০০ টাকা। ওসমানী এয়ারপোর্ট–শালুটিকর হয়ে যাওয়া এই রাস্তাটা বর্ষাকালে খুবই সুন্দর। এরপর একইভাবে গোয়াইনঘাট থেকে রাতারগুল বিট অফিসে আসবার জন্য ট্রলার ভাড়া করতে হবে।

তৃতীয় উপায়ঃ

সিলেটের আম্বরখানা পয়েন্ট থেকে সিএনজি নিয়ে মোটরঘাট (সাহেব বাজার হয়ে) পৌঁছাতে হবে, ভাড়া নেবে ৪০০-৫০০ টাকা আর সময় লাগবে ঘণ্টাখানেক। এরপর মোটরঘাট থেকে সরাসরি ডিঙ্গি নৌকা নিয়ে বনে চলে যাওয়া যায়, এতে ঘণ্টাপ্রতি ২৫০-৩০০ টাকা লাগবে। এই তৃতীয় পথটিতেই সময় ও খরচ সবচেয়ে কম।

কোথায় থাকবেন!

সিলেটে থাকার মত অনেকগুলো হোটেল আছে,সিলেটে আপনি আপনার প্রোয়োজন ও সামর্থ অনুযায়ী যে কোন ধরনের হোটেল পাবেন। তবে ঈদের সময় সিট সংকট থাকতে পারে তাই যাওয়ার ২/৩ দিন আগে এডভান্স বুকিং দিলে ভালো হয়৷ হোটেলের মানভেদে প্রতিরুমের ভাড়া ৮০০-২৫০০টাকা।

রাতারগুল ভ্রমণে সাবধাণতাঃ

বর্ষায় ডুবে যাওয়ার পর অনেক ধরণের সাপ সাধারণত গাছের ডালে আশ্রয় নেয়, এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। এছাড়া এখানে জোঁকের উপদ্রবও আছে। সাঁতার জানা না থাকলে লাইফ জ্যাকেট সাথে রাখুন। বর্ষায় গেলে ছাতা বা রেইনকোট সাথে নিয়ে যাবেন।

তথ্যসূত্রঃ উইকিপিডিয়া, সিলেট বিভাগের ওয়েবসাইট ও নেক্সটজেন হলিডেজ। ছবিঃ ডি, ডাব্লিউ (বাংলা)

২ thoughts on “দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া…পর্ব- ০১

Leave a Reply