দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া…পর্ব- ০২

Share on Facebook

তানভীর রোমেল– অনেকদিন থেকেই একটা ট্র্যাভেল গাইড লিখার ইচ্ছা। কিন্তু আলসেমির কারণে লিখা হচ্ছে না। আজ অনেক কষ্টে আলসেমি কাটিয়ে লিখার চেষ্টা করলাম। আশাকরছি ভ্রমণপিয়াষু মানুষদের কিছু প্রয়োজনীয় তথ্য দিতে পারবো।

আমিয়াখুম জলপ্রপাতঃ
আমিয়াখুম বান্দরবানের অসাধারণ একটি জলপ্রপাত। পাথর আর সবুজে ঘেরা পাহাড়ের মধ্য দিয়ে প্রবল বেগে নেমে আসছে জলধারা। দুধসাদা রঙের ফেনা ছড়িয়ে তা বয়ে চলেছে পাথরের গা বেয়ে। নিমেষেই ভিজিয়ে দিচ্ছে পাশের পাথুরে চাতাল। সঙ্গে অবিরাম চলছে জলধারার পতন আর প্রবাহের শব্দতরঙ্গ। লোকালয় ছেড়ে গহিন পাহাড়ের মাঝে এমন দৃশ্য—একবার দেখলে মনের গভীরে গেঁথে থাকবে আজীবন। প্রকৃতি এমন অপার সৌন্দর্যের ডালা সাজিয়ে বসে আছে আমাদের এই সবুজ শ্যামল বাংলায় – বান্দরবানে। বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের পাশে আমিয়াখুম জলপ্রপাতকে দেখা হচ্ছে বাংলার ভূস্বর্গ হিসেবে। কারো কারো মতে এটা বাংলাদেশের সবচেয়ে সুন্দর জলপ্রপাত। এর অবস্থান বান্দরবানের থানচি উপজেলার দুর্গম নাক্ষিয়ং নামক স্থানে। বাংলাদেশে এমন ঐশ্বর্যের অবস্থান যারাই দেখে তারাই বিমোহিত হয়ে তাকিয়ে থাকে। পাথুরে পাহাড়ের মাঝে এমন দৃশ্যের সামনে দাঁড়িয়ে সবাই যেন কথা হারিয়ে ফেলে। সেই সঙ্গে হারিয়ে যায় শতকষ্ট স্বীকার করে এখানে আসার সব ক্লান্তি, অবসাদ। বর্ষায় টগবগে যৌবন ফিরে পায় আমিয়াখুম। সুবিশাল জলধারা প্রবল গতিতে নেমে যায়। পাথর কেটে তীব্র বেগে ছুটে চলে নিচের দিকে।

সাঙ্গু নদী

কিভাবে যাবেন!
ঢাকা থেকে যেকোন বাসে প্রথমে বান্দরবান যেতে হবে। নন এসি বাসের ভাড়া ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা আর এসি বাসের ভাড়া ১২০০ থেকে ১৫০০টাকা। বান্দরবান থেকে বাস বা জীপে সোজা চলে যাবেন থানচিতে। থানচি যেতে প্রায় ৪/৫ ঘন্টার মতো লাগে। বাসের ভাড়া ২৫০-৩০০টাকা আর রিজার্ভ জিপে গেলে ৩০০০ থেকে ৪০০০ টাকা পড়বে। থানচি নেমে প্রধান কাজ হলো একজন গাইড ঠিক করা, আর থানা ও বিজিবি’র অনুমতি নেয়া। এবার থানচি থেকে নৌকা নিয়ে রোমাক্রি বাজারে চলে যান, থানচি থেকে রোমাক্রি প্রতিজন ২০০ টাকা করে তবে টুরিস্টদের দেখলে রিজার্ভ ৩০০০/৪০০০ টাকা হয়ে যায়। যদি থানচি থেকে সকাল সকাল রওয়ানা দেন তাহলে রোমাক্রি নেমে হাঁটা ধরুন নাফাখুম ঝর্ণার উদ্দেশ্য। প্রায় আড়াই থেকে তিন ঘন্টা হাঁটলে আপনারা পেয়ে যাবেন নাফাখুমের দেখা। নাফাখুম ঝর্ণা থেকে হাঁটা শুরু করলে ৩/৪ টা ঘন্টার মধ্যেই আপনারা পৌঁছে যাবেন সাজিয়াপাড়া। সাজিয়াপাড়াতে রাতটুকু কাটিয়ে পরদিন সকাল সকাল উঠে পড়ুন এবং সাজিয়াপাড়া থেকে একজন গাইড নিয়ে রওয়ানা হয়ে যান আমিয়াখুমের উদ্দেশ্যে। এক্ষেত্রে গাইডকে ৫০০ টাকার মত দিতে হবে। প্রায় আড়াই থেকে তিনঘন্টা অসাধারণ সব পাহাড়ি রাস্তা দিয়ে হাঁটলেই পেয়ে যাবেন আমিয়াখুম জলপ্রপাত।

অমিয়াখুমের পথে

কোথায় থাকবেন!
থানচি পৌঁছতে যদি বিকেল বা সন্ধ্যা হয়ে যায় তাহলে রাতটা এখানে কাটিয়ে যাওয়াই ভালো। এখানে বিজিবি’র খুব সুন্দর একটা রেস্টহাউস আছে পাহাড়ের উপর। এছাড়াও কিছু বেসরকারি রেস্টহাউস আছে, ভাড়া ৮০০ থেকে ১৫০০টাকা। রেমাক্রি গিয়ে আদিবাসী পল্লীতে থাকতে পারেন। তাছাড়া খাওয়া-থাকার ব্যাপারে গাইড আপনাকে সাহায্য করবে। পর্যটন মৌসুমে এসব থাকার জায়গাগুলো খালি না পাওয়া গেলে আপনি স্থানীয় চেয়াম্যানের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। তিনি আপনাদের একটা না একটা ব্যবস্থা করে দেবেন।

অমিয়াখুম জলপ্রপাত

যা যা দেখবেন!
বান্দরবান থেকে থানচির দুরত্ব প্রায় ৮০ কিলোমিটার। আপনি যদি জীবনে প্রথমবার এই রাস্তায় যান। তাহলে এর কথা আপনার সারাজীবন মনে থাকবে, কেনো মনে থাকবে সেটা গেলেই বুঝবেন। আমার মনে হয়েছে পৃথিবীর ভয়ংকরতম রোলার কোস্টার এর কাছে নস্যি, সে এক রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা! যাওয়ার পথে দেখতে পাবেন শৈল প্রপাত, নীলাচল, চিম্বুক পাহাড়, নীল দিগন্তসহ কয়েকটা ট্যুরিস্ট স্পট, যেগুলো সাধারণত মানুষ একদিনের ট্যুরে ঘুরতে যায়। সাংঙ্গু নদী বেয়ে থানচি থেকে রোমাক্রী যাওয়ার পথে নদীর দুপাশের দৃশ্য বলে বা লিখে বুঝানো সম্ভব না। রেমাক্রী হতে নাফাখুম পর্যন্ত আর কোন বাহন আপনি পাবেন না। ওই পথটা আপনাকে হেঁটে যেতে হবে। রেমাক্রী বাজার হতে নদীর কোল ঘেঁষে প্রায় ২/৩ ঘন্টা হেঁটে পৌছবেন নাফাখুম। নদীর তীরটা পাথুরে এবং বালুকাময়; এখানে জনবসতি একেবারেই কম, মাঝে মাঝে দু’একজন উপজাতীদেরকে মাছ ধরতে দেখা যায়। এই পথে বেশ কয়েক বার বুক সমান গভীর নদী পার হতে হয়। দীর্ঘ পথ পারী দিয়ে আমিয়াখুমে পৌঁছবেন, ক্লান্ত পা জলপ্রপাতের পানিতে ভেজানোর সাথে সাথে সব ক্লান্তি দুর হয়ে যাবে নিমিষেই। আর অসাধারন সব দৃশ্যাবলী দেখে মনে হবে আপনি হলিউডের কোন সিনেমার দৃশ্যে ঢুকে পড়েছেন।
(তথ্যসূত্রঃ উইকিপিডিয়া ও নেক্সটজেন হলিডেজ। ছবিঃ ইন্টারনেট।)

দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া…  পর্ব ০১   https://www.porjotonia.com/?p=8871

 

Leave a Reply