বিচার বিভাগের দুর্নীতির মূলোৎপাটনের সময় এসেছে : হাই কোর্ট

Share on Facebook

 

দুর্নীতি ছাড়া বিচার বিভাগ আইনের শাসন কল্পনাও করা যায় না মন্তব্য করে একটি রায়ের পর্যবেক্ষণে হাই কোর্ট বলেছে, জনগণের শেষ আশ্রয়স্থল বিচার বিভাগের আমূল সংস্কার করে দুর্নীতির মূল উৎপাটনের সময় এসেছে। বিচার বিভাগের দুর্নীতি রোধে করণীয় সম্পর্কে সংবাদমাধ্যমে প্রতিবেদন, লেখা কম আসা নিয়েও উষ্মা প্রকাশ করেছে আদালত। পরিত্যক্ত সম্পত্তি নিয়ে একটি রিট মামলার রায়ে বিচারপতি মো. আশরাফুল কামাল ও বিচারপতি রাজিক-আল-জলিলের হাই কোর্ট বেঞ্চ এ পর্যবেক্ষণ দিয়েছে।

চার ব্যক্তির আবেদনে সাড়া দিয়ে ঢাকার কাকরাইলের সাড়ে ১৬ কাঠা জমি পরিত্যক্ত সম্পত্তির তালিকা থেকে বাদ দিয়ে ১৯৯৫ সালে ঢাকার প্রথম সেটেলমেন্ট আদালত যে রায় দিয়েছিল, তাকে কল্পিত, জালিয়াতি ও প্রতারণামূলক বলেছে হোই কোর্ট।

আড়াই দশক আগের ওই রায়ের বিরুদ্ধে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের করা রিট আবেদন মঞ্জুর করেছে উচ্চ আদালত। সেই রায়ের পর্যবেক্ষণে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় বিচার বিভাগকে দুর্নীতিমুক্ত করার প্রয়োজনীয়তা স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়েছে।

বিচারক, বিচার বিভাগের দুর্নীতির বিষয়ে সতর্ক করে রায়ে বলা হয়েছে, “মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার সর্বশেষ আশ্রয়স্থল হচ্ছে বিচার বিভাগ। যখন এই শেষ আশ্রয়স্থলের বিচারকরা দুর্নীতির মাধ্যমে রায় বিক্রি করেন, তখন সাধারণ মানুষের আর যাওয়ার জায়গা থাকে না।

“তারা হতাশ হন, ক্ষুব্ধ হন, ক্রুদ্ধ হন, বিক্ষুব্ধ হন এবং বিকল্প খুঁজতে থাকেন। তখনি জনগণ মাস্তান, সন্ত্রাসী এবং বিভিন্ন মাফিয়া নেতাদের আশ্রয় গ্রহণ করেন এবং তাদের বিচার সেখানে চান।”

রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, “দুর্নীতিমুক্ত বিচার বিভাগ আইনের শাসনের অন্যতম শর্ত। দুর্নীতিমুক্ত বিচার বিভাগ ছাড়া আইনের শাসন কল্পনাও করা যায় না।…বিচার বিভাগ ব্যর্থ হলে জনগণ বিকল্প খুঁজতে বাধ্য হবে, যেটি কল্পনাও করা যায় না। সুতরাং এখন সময় এসেছে জনগণের শেষ আশ্রয়স্থল বিচার বিভাগের আমূল সংস্কার করে দুর্নীতির মূল উৎপাটন করা। নির্ভরযোগ্য, বিশ্বাসযোগ্য এবং আদর্শ প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা।

“আইনের শাসন এবং বিচার বিভাগের দুর্নীতি এক সাথে চলতে পারে না। বিচার বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যদি দুর্নীতিগ্রস্ত হন তাহলে আইনের শাসন বই পুস্তকেই সীমাবদ্ধ থাকবে। এটি বাস্তবে কখনোই রূপ লাভ করবে না।”

দেশ স্বাধীনের পর বাংলাদেশে অনেক সম্পত্তি পরিত্যক্ত বলে চিহ্নিত হয়। এসব সম্পত্তির নিয়ন্ত্রণ, ব্যবস্থাপনা, নিষ্পত্তির ব্যবস্থার জন্য রাষ্ট্রপতি ১৯৭২ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ পরিত্যক্ত সম্পত্তি (নিয়ন্ত্রণ, ব্যবস্থাপনা ও নিষ্পত্তি) আদেশ জারি করেন।

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের পর বাংলাদেশর প্রজাতন্ত্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধে কিংবা সামরিক অভিযানে নিয়োজিত ছিল এমন ব্যক্তি বা যে ব্যক্তি বাংলাদেশে উপস্থিত নেই বা ব্যক্তির নাম পরিচয়-ঠিকানা জানা নেই বা সম্পত্তি যে ব্যক্তির দখল-তত্ত্বাবধান, ব্যবস্থাপনায় নেই, এমন ব্যক্তির সম্পত্তিকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয় আদেশ।

এই আদেশের ২৫ ধারায় প্রদত্ত ক্ষমতাবলে রাষ্ট্রপতি ১৯৭২ সালের ৮ মে বাংলাদেশ পরিত্যক্ত সম্পত্তি (জমি, ভবন ও অন্যান্য সম্পত্তি) বিধিও জারি করেন। এই বিধি অনুযায়ী পরিত্যক্ত সম্পত্তি বলতে ‘বাংলাদেশ পরিত্যক্ত সম্পত্তি (নিয়ন্ত্রণ, ব্যবস্থাপনা ও নিষ্পত্তি) আদেশের আওতায় যে কোনো প্রকারের নির্মিত কাঠামো ও জমিসহ ভবন (দালান/ইমারত) ও এসবের প্রয়োজনীয় সংলগ্ন অংশ, কৃষিজমি, উদ্যান (বাগান জমি) ও অকৃষি জমিসহ জমি ও বছরের যে কোনো এক সময় জলমগ্ন জমি এবং এ ধরনের জমি থেকে উদ্ভূত সুবিধাদিসহ জমিকে বোঝানো হয়।

পরে ১৯৮৫ সালে ‘পরিত্যক্ত বাড়ি (সম্পূরক বিধানাবলী) অধ্যাদেশ’ নামে একটি সম্পূরক অধ্যাদেশ জারি করে সরকার।

এ অধ্যাদেশ জারির পর ১৯৮৮ সালে কে এ এম আশরাফ উদ্দিন কাকরাইলের ৫৬/৫৭ হোল্ডিংয়ের ছয় কাঠা (বাড়ি নং-৫৬),লুৎফুন্নেছা রহমান চার কাঠা (বাড়ি নং-৫৬/১) এবং ১৯৮৯ সালে এ কে এম ইদ্রিস হোসেন তালুকদার ও তার স্ত্রী জামিলা খাতুন সাড়ে ছয় কাঠা (বাড়ি নং-৫৭) জামির মালিকানা দাবি করে পরিত্যক্ত সম্পত্তির তালিকা থেকে সেগুলো বাতিল চেয়ে সেগুনবাগিচার সেটেলমেন্ট আদালতে আবেদন করেন।

Leave a Reply