প্যানক্রিয়াটাইটিস বা অগ্নাশয় প্রদাহ

Share on Facebook

প্যানক্রিয়াস একটি গ্রিক শব্দ। যার অর্থ ‘অল ফ্লেশ’। প্যানক্রিয়াস শরীরের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ। বাংলায় যার নাম অগ্ন্যাশয়। পাকস্থলীর পিছনে থাকা অগ্ন্যাশয় বৃহদাকৃতির অঙ্গ; যা জারক রস এবং বিভিন্ন প্রকার হরমোন ক্ষরণ করে।অগ্ন্যাশয় প্রদাহ দুইরকম হয়, একটি হলো প্রকট অগ্ন্যাশয় প্রদাহ এবং দীর্ঘমেয়াদি অগ্ন্যাশয় প্রদাহ।অগ্ন্যাশয় প্রদাহের কারণে উদরপেটের উপরে ব্যাথা অনুভব, বমি বমি ভাব এবং বমি হয়।পিঠের মাঝামাঝি তীব্র যন্ত্রণা অনুভূত হয়।প্রকট অগ্ন্যাশয় প্রদাহে জ্বর আসে এবং কয়েকদিনের মধ্যে লক্ষণ প্রকাশ পায়। দীর্ঘমেয়াদি অগ্ন্যাশয় প্রদাহে ওজন হ্রাস পায়, মেদদাস্ত এবং ডায়রিয়া দেখা যায়।সংক্রমণ, রক্তক্ষরণ মধুমেহ অথবা অন্যান্য অঙ্গেও নানা জটিলতা দেখা যেতে পারে।

প্যানক্রিয়াসে প্রদাহ দু’ধরনের হতে পারে। একটি হল হঠাৎ প্রদাহ বা অ্যাকিউট প্যানক্রিয়াটাইটিস। দ্বিতীয়টি হল ধীরগতির প্রদাহ বা ক্রনিক প্যানক্রিয়াটাইটিস।

বিভিন্ন কারণেই অ্যাকিউট প্যানক্রিয়াটাইটিস হতে পারে। এর মধ্যে প্রধান কারণ হিসেবে বলা হয় পিত্তনালির পাথর এবং অতিরিক্ত মদ্যপান। সাধারণত পিত্তনালির পাথরের কারণে মহিলাদের মধ্যে অ্যাকিউট প্যানক্রিয়াটাইটিস হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। আর পুরুষদের ক্ষেত্রে মদ্যপানের কারণে। এ ছাড়াও দেহে লিপিড বা ক্যালশিয়ামের মাত্রা বেড়ে গেলে এই রোগ হতে পারে। এমনকি অগ্ন্যাশয়ে কোনও ভাবে আঘাত লাগলে এই রোগ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তা ছাড়াও ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে বা স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধের থেকে, ভাইরাল ইনফেকশন থেকে এবং কিছু কিছু অস্ত্রোপচারের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবেও এই রোগ হতে পারে বলে চিকিৎসকেরা মনে করেন। জিনগত কারণে বা অজানা কোনও কারণেও অ্যাকিউট প্যানক্রিয়াটাইটিস হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

দুই প্রকারের প্যানক্রিয়াটাইটিস দেখা যায়- তীব্র এবং দীর্ঘমেয়াদী। যখন পেটে হঠাৎ এবং মারাত্বক আঘাত পৌঁছায় তখন তীব্র প্যানক্রিয়াটাইটিস হয়। এর ফলে কিডনি কাজ করা বন্ধ করে দিতে পারে বা হার্টফেল হতে পারে। প্রচুর মদ্যপানের কারণে দীর্ঘমেয়াদী প্যানক্রিয়াটিটিস দেখা দেয়। এটা দীর্ঘসময় ধরে থাকে এবং এর ঠিক হওয়ার সম্ভাবনাও খুবই কম থাকে। কিছু অনুসন্ধানের সাথে শারীরিক পরীক্ষাও করা হয় ব্যাধি নির্ণয় নিশ্চিত করার জন্য।

নিম্নলিখিত উপায়ে প্যানক্রিয়াটাইটিসের নির্ণয় করা হয়:

এমআরআই স্ক্যান- এই পরীক্ষায় অগ্নাশয় নালীর ছবির সাহায্যে চিকিৎসক এই ব্যাধির প্রকৃত কারণ জানতে পারেন।

পেটের আল্ট্রাসাউন্ড- এটা গল ব্লাডারে পাথর নির্ণয় করতে সাহায্য করে।

সিটি স্ক্যান- এটা গ্রন্থির 3-ডি ছবি নিতে সাহায্য করে।

কিছু আরো পরীক্ষা আছে যেমন এক্স- রে, এবং অ্যামিলেজ মাত্রার রক্তপরীক্ষা করা হয় প্যানক্রিয়াটাইটিসের নির্ণয় নিশ্চিত করতে।

নির্ণয়ের পর বিভিন্ন পদ্ধতিতে চিকিৎসা করা হয় যেমন:

অস্ত্রোপচার- সাধারণত পাথর পাবার পর গল ব্লাডার বাদ দেওয়া হয়। আরো যদি সম্ভব হয়, অগ্নাশয়ের খারাপ অংশও বাদ দেওয়া হয়।

এন্ডোস্কোপি- গল ব্লাডারে পাথর দূর করতে করা হয়।

ইনট্রাভেনাস ফ্লুইডস্- প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে।

অ্যনালজেসিক্স (ব্যথা কমার ওষুধ) যন্ত্রনার থেকে মুক্তি পাবার জন্য।

 হাসপাতাল থেকে একবার তীব্র প্যানক্রিয়াটাইটিস নিয়ন্ত্রণে এসে গেলে আপনার দৈনন্দিন             জীবনযাত্রায় যে পরিবর্তনগুলো করা দরকার, সেগুলো হলো:

মদ্যপান ছেড়ে দেওয়া।

তৈলাক্ত খাবার এড়িয়ে চলা।

Leave a Reply