তথ্যমন্ত্রী বললেন উন্নত দেশেও সংবাদপত্রের এমন স্বাধীনতা নেই

Share on Facebook

বাংলদেশের সংবাদমাধ্যম যে ‘স্বাধীনতা’ ভোগ করে, অনেক উন্নত দেশেও ‘ততটা নেই’ বলে মন্তব্য করেছেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। শুক্রবার চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে ‘মোহাম্মদ আবদুল খালেক ইঞ্জিনিয়ার, দৈনিক আজাদী এবং গণতন্ত্র’ শীর্ষক এক সেমিনারে মন্ত্রীর এমন মন্তব্য আসে। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সমালোচনাকে ‘সমাদৃত করার সংস্কৃতি’ লালন করেন। আওয়ামী লীগ ‘মনে করে’, সমালোচনা পথ চলাকে শাণিত করে। “সমালোচনা কাজকে পরিশুদ্ধ করার ক্ষেত্রে সহায়তা করে। সেজন্য সংবাদপত্রের স্বাধীনতা, সংবাদপত্রের বিকাশের নীতি নিয়ে আমাদের সরকার কাজ করছে।” দেশে সংবাদমাধ্যমের ‘এক্সপোনেনশিয়াল গ্রোথ’ হয়েছে এবং সেটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কারণেই সম্ভব হয়েছে বলে মন্তব্য করেন হাছান মাহমুদ। “বাংলাদেশের সংবাদপত্র যে ধরনের স্বাধীনতা ভোগ করে অনেক উন্নত দেশেও কিন্তু সংবাদপত্রের এমন স্বাধীনতা নাই।”

যুক্তরাজ্যের ১৬৭ বছরের পুরনো পত্রিকা ‘নিউজ অব দ্য ওয়ার্ল্ড’ এর দৃষ্টান্ত টেনে তিনি বলেন, “একটি ভুল সংবাদ পরিবেশনের কারণে মামলা হয়েছিল। মামলার পর তাদের ওপর বিরাট জরিমানা করেছে আদালত, সেই জরিমানা দিতে না পেরে কোম্পানি পত্রিকা বন্ধ করে দিয়েছে। “একজন এমপির বিরুদ্ধে ভুল বা অসত্য সংবাদ পরিবেশনের কারণে বিবিসির পুরো টিমকে পদত্যাগ করতে হয়েছে।” যুক্তরাজ্য এবং ইউরোপে ভুল ও অসত্য সংবাদ পরিবেশনের কারণে পত্রিকা ও গণমাধ্যমকে ‘হরহামেশা’ জরিমানা দিতে হয় মন্তব্য করে মন্ত্রী বলেন, “আমাদের দেশে সেটি কখনো হয়নি। সংবাদপত্র এ সমস্ত কারণে বন্ধ হয়নি।

“সেজন্য বলছি অনেক উন্নত দেশের তুলনায় বাংলাদেশের সংবাদ মাধ্যম অনেক বেশি স্বাধীনতা ভোগ করে।” সিঙ্গাপুরের উদাহরণ দিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, সিঙ্গাপুরে মাত্র কয়েকটি টেলিভিশন চ্যানেল, সবগুলো সরকার নিয়ন্ত্রিত। থাইল্যান্ডে সমস্ত টেলিভিশন চ্যানেলের ফিড সরকার নিয়ন্ত্রিত। “সেখানে যদি সরকারের অপছন্দের কোনো কন্টেন্ট থাকে, সেটা বাদ দেওয়া হয়। আমাদের দেশে তা হয় না। কারণ আমরা মনে করি স্বাধীন মতপ্রকাশ গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, সেটি বহুমাত্রিক সমাজ ব্যবস্থাকে সমৃদ্ধ করে।” দৈনিক আজাদীর প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ আবদুল খালেক ইঞ্জিনিয়ারের ৫৮তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ‘স্বাধীন সংবাদপত্র পাঠক সমিতি’ এই সেমিনারের আয়োজন করে।
সমিতির সভাপতি এসএম জামাল উদ্দিনের সভাপতিত্বে সেমিনারে উদ্বোধনী বক্তব্য দেন সাবেক সিটি মেয়র মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী। বিশেষ অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আনোয়ারুল আজিম আরিফ, দৈনিক আজাদী সম্পাদক এম এ মালেক, রাউজান উপজেলা চেয়ারম্যান এহসানুল হায়দার বাবুল, মুক্তিযোদ্ধা জাহাঙ্গীর আলম প্রমুখ। সম্প্রতি সৌদি আরবের জেদ্দায় ‘বিএনপি-জামায়াত নেতাদের সঙ্গে পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের’ কথিত এক গোপন বৈঠকের খবর এসেছে কিছু সংবাদমাধ্যমে, যা নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতারাও কথা বলছেন। সেমিনার শেষে এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তথ্যমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, “বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা করতে ব্যর্থ হয়ে ক্রমাগতভাবে ষড়যন্ত্রের পথ বেছে নিয়েছে বিএনপি। পাকিস্তানি গোয়েন্দা ও গোয়েন্দা সংস্থার সাথে তাদের যে দহরম-মহরম সেটা বহু পুরনো। এর প্রমাণ হচ্ছে পাকিস্তানি গোয়েন্দাদের সাথে মধ্যপ্রাচ্যের বৈঠক, যা প্রচণ্ড নিন্দনীয় আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান দাবি করেন, ১৯৯১ সালের নির্বাচনের আগে ‘পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থার পক্ষ থেকে’ বিএনপিকে ৫ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছিল।

“এটি পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থার সাবেক প্রধান আদালতে জবানবন্দিতে বলেছেন।” তথ্যমন্ত্রী বলেন, “এখন করোনাভাইরাসে পৃথিবী স্তব্ধ, মানুষ শঙ্কিত ভবিষ্যৎ নিয়ে, সেই সময়ে বিএনপি জনগণের পাশে না দাঁড়িয়ে দেশে-বিদেশে ষড়যন্ত্রের বৈঠক করে বেড়াচ্ছে। সেটির প্রকাশ হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের বৈঠক, যা প্রচণ্ড নিন্দনীয়।” তিনি বলেন, অতীতে ‘ষড়যন্ত্রের পথ অবলম্বন করে’ বিএনপি এগোতে পারেনি, তা না হলে আওয়ামী লীগকে মানুষ পর পর তিনবার রাষ্ট্র ক্ষমতায় বসাত না। “বিএনপিকে অনুরোধ জানাব, ষড়যন্ত্রের পথ পরিহার করে মানুষের পাশে দাঁড়ান, এই ষড়যন্ত্র করে কোনো লাভ হবে না।”

Leave a Reply