করোনায় মৃতের সংখ্যা আড়াই হাজার ছাড়িয়েছে, সুস্থ ১,০৮,৭২৫

Share on Facebook

১৩২তম দিনে  দেশে করোনা শনাক্তের এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা আড়াই হাজার ছাড়িয়েছে। এখন পর্যন্ত এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন ২ হাজার ৫৪৭ জন। গত ২৪ ঘন্টায় এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ৫১ জন মৃত্যুবরণ করেছেন। গতকালের চেয়ে আজ ১২ জন বেশি মৃত্যুবরণ করেছেন। গতকাল ৩৯ জন মৃত্যুবরণ করেছিলেন। করোনা শনাক্তের বিবেচনায় আজ মৃত্যুর হার ১ দশমিক ২৮ শতাংশ। আগের দিন এই হার ছিল ১ দশমিক ২৭ শতাংশ। গতকালের চেয়ে আজ মৃত্যুর হার দশমিক ০১ শতাংশ বেশি।
অধ্যাপক নাসিমা সুলতানা জানান, করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের মধ্যে গত ২৪ ঘন্টায় হাসপাতাল এবং বাসায় মিলিয়ে সুস্থ হয়েছেন ১ হাজার ৭৬২ জন। গতকালের চেয়ে আজ জন ১৭৮ জন কম সুস্থ হয়েছেন। গতকাল সুস্থ হয়েছিলেন ১ হাজার ৯৪০ জন। এ পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ১ লাখ ৮ হাজার ৭২৫ জন। তিনি জানান, আজ শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৫৪ দশমিক ৫৪ শতাংশ। আগের দিন এই হার ছিল ৫৪ দশমিক ৪৮ শতাংশ। আগের দিনের চেয়ে আজ সুস্থতার হার দশমিক ০৬ শতাংশ বেশি।

অতিরিক্ত মহাপরিচালক জানান, গত ২৪ ঘন্টায় ১৩ হাজার ৪৬০ জনের নমুনা পরীক্ষায় ৩ হাজার ৩৪ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। গতকালের চেয়ে আজ ৩০১ জন কম শনাক্ত হয়েছেন। গতকাল ১২ হাজার ৮৮৯ জনের নমুনা পরীক্ষায় শনাক্ত হয়েছিলেন ২ হাজার ৭৩৩ জন। তিনি জানান, দেশে এ পর্যন্ত মোট ১০ লাখ ৬ হাজার ৭৫১ জনের নমুনা পরীক্ষায় ১ লাখ ৯৯ হাজার ৩৫৭ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। মোট পরীক্ষার বিবেচনায় শনাক্তের হার ১৯ দশমিক ৮০ শতাংশ। গত ২৪ ঘন্টায় নমুনা পরীক্ষার বিবেচনায় শনাক্তের হার ২২ দশমিক ৫৪ শতাংশ। আগের দিন এ হার ছিল ২১ দশমিক ২০ শতাংশ। আগের দিনের চেয়ে আজ শনাক্তের হার ১ দশমিক ৩ শতাংশ বেশি।
ডা. নাসিমা সুলতানা জানান, ‘করোনাভাইরাস শনাক্তে গত ২৪ ঘন্টায় নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে ১৩ হাজার ৬৮১ জনের। আগের দিন সংগ্রহ করা হয়েছিল ১৩ হাজার ৫৪৮ জনের। গতকালের চেয়ে আজ ১৩৩টি নমুনা বেশি সংগ্রহ করা হয়েছে। গত ২৪ ঘন্টায় নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ১৩ হাজার ৪৮০ জনের। আগের দিন নমুনা পরীক্ষা হয়েছিল ১২ হাজার ৮৮৯ জনের। গত ২৪ ঘন্টায় আগের দিনের চেয়ে ৬৭১টি বেশি নমুনা পরীক্ষা হয়েছে।
তিনি জানান, ২৪ ঘন্টায় মৃত্যুবরণকারী ৫১ জনের মধ্যে পুরুষ ৪০ জন, আর নারী ১১ জন। এখন পর্যন্ত মোট পুরুষ মারা গেছেন ২ হাজার ১১ জন; যা ৭৮ দশমিক ৯৬ শতাংশ এবং নারী ৫৩৬ জন; যা ২১ দশমিক ০৪ শতাংশ। ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালে মারা গেছেন ৪২ জন, বাড়িতে মারা গেছেন ৯ জন।
নাসিমা সুলতানা জানান, ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যুবরণকারীদের বয়স বিভাজনে ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে ১ জন, ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে ৩ জন, ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে ৭ জন, ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে ১৫ জন, ৬১ থেকে ৭০ বছরের মধ্যে ১২ জন, ৭১ থেকে ৮০ বছরের মধ্যে ১১ জন এবং ৮১ থেকে ৯০ বছরের মধ্যে ২ জন রয়েছেন। এ পর্যন্ত যারা মৃত্যুবরণ করেছেন তাদের মধ্যে শূন্য থেকে ১০ বছরের মধ্যে ১৭ জন, ১১ থেকে ২০ বছরের মধ্যে ২৯ জন, ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে ৭৭ জন, ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে ১৭৯ জন, ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে ৩৬৬ জন, ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে ৭৫৭ এবং ষাটোর্ধ্ব ১ হাজার ১২২ জন রয়েছেন।
২৪ ঘণ্টায় মৃত্যুবরণকারীদের মধ্যে ঢাকা বিভাগে ১৩ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ১৬ জন, খুলনা ও বরিশাল বিভাগে ৬ জন করে, রাজশাহী ও সিলেটে ৩ জন করে এবং রংপুর বিভাগে ৪ জন রয়েছেন। এ পর্যন্ত বিভাগওয়ারী মৃতের সংখ্যা ঢাকা বিভাগে ১ হাজার ২৫৫ জন; যা ৪৯ দশমিক ২৮ শতাংশ; চট্টগ্রাম বিভাগে ৬৫৫ জন, যা ২৫ দশমিক ৭২ শতাংশ; রাজশাহী বিভাগে ১৩১ জন, যা ৫ দশমিক ১৪ শতাংশ; খুলনা বিভাগে ১৫০ জন, যা ৫ দশমিক ৮৯ শতাংশ; বরিশাল বিভাগে ৯৭ জন, যা ৩ দশমিক ৮১ শতাংশ; সিলেট বিভাগে ১১৬ জন, যা ৪ দশমিক ৫৫ শতাংশ; রংপুর বিভাগে ৮৭ জন, যা ৩ দশমিক ৪২ শতাংশ এবং ময়মনসিংহ বিভাগে ৫৬ জন, যা ২ দশমিক ২০ শতাংশ।
তিনি জানান, ‘ঢাকা মহানগরীতে কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালে সাধারণ শয্যা সংখ্যা ৬ হাজার ৩০৫টি, সাধারণ শয্যায় ভর্তি রোগীর সংখ্যা ১ হাজার ৯৬৯ জন এবং শয্যা খালি আছে ৪ হাজার ৩৫৬টি। ঢাকা মহানগরীতে আইসিইউ শয্যা সংখ্যা ১৪২টি, আইসিইউ শয্যায় ভর্তি আছে ১০৭ জন এবং খালি আছে ৩৫টি শয্যা। ঢাকা মহানগরীতে ভেন্টিলেটর সংখ্যা ১৫০টি। চট্টগ্রাম মহানগরীতে সাধারণ শয্যা সংখ্যা ৬৫৭টি, সাধারণ শয্যায় ভর্তিকৃত রোগীর সংখ্যা ৩১০ জন এবং শয্যা খালি আছে ৩৪৭টি। চট্টগ্রাম মহানগরীতে আইসিইউ শয্যা সংখ্যা ৩৯টি, আইসিইউ শয্যায় ভর্তি আছে ২৯ জন এবং খালি আছে ২০টি শয্যা। চট্টগ্রাম মহানগরীতে ভেন্টিলেটর সংখ্যা ৩৮টি। সারাদেশে অন্যান্য হাসপাতালে সাধারণ শয্যা সংখ্যা ৭ হাজার ৭০২টি, ভর্তিকৃত রোগীর সংখ্যা ১ হাজার ৮শ’ জন, খালি আছে ৫ হাজার ৯৩৩টি শয্যা। সারাদেশে অন্যান্য হাসপাতালে আইসিইউ শয্যা রয়েছে ১৯৩ জন, আইসিইউ শয্যায় ভর্তিকৃত রোগীর সংখ্যা ৮৪ জন। খালি আছে ১১১টি আইসিইউ শয্যা। সারাদেশে হাসপাতালে সাধারণ শয্যা সংখ্যা ১৪ হাজার ৭১৫টি, রোগী ভর্তি আছে ৪ হাজার ৭৯ জন এবং খালি আছে ১০ হাজার ৬৩৬টি শয্যা। সারাদেশে আইসিইউ শয্যা সংখ্যা ৩৭৪টি, রোগী ভর্তি আছে ২১০ জন এবং খালি আছে ১৬৬টি। সারাদেশে অক্সিজেন সিলিন্ডারের সংখ্যা ১১ হাজার ২৭৯টি। সারাদেশে হাই ফ্লো নেজাল ক্যানেলা সংখ্যা ১৭৩টি এবং অক্সিজেন কনসেনট্রেটর ১০১টি। এছাড়াও কেন্দ্রীয় অক্সিজেন সিস্টেম অনেক হাসপাতালে চালু হয়েছে, অনেক হাসপাতালে চালুর কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
০১৩১৩-৭৯১১৩০, ০১৩১৩-৭৯১১৩৮, ০১৩১৩৭৯১১৩৯ এবং ০১৩১৩৭৯১১৪০ এই নম্বরগুলো থেকে হাসপাতালের সকল তথ্য পাওয়া যাবে। কোন হাসপাতালে কতটি শয্যা খালি আছে। কত রোগী ভর্তি ও কতজন ছাড় পেয়েছেন এবং আইসিইউ শয্যা খালি আছে কি না এই ফোন নম্বরগুলোতে ফোন করে জানা যাবে বলে তিনি জানান।
অতিরিক্ত মহাপরিচালক বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশনে এসেছেন ৮১২ জন ও আইসোলেশন থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন ৫৯৩ জন। এ পর্যন্ত আইসোলেশনে এসেছেন ৪০ হাজার ৭৫৯ জন। এ পর্যন্ত ছাড়পত্র পেয়েছেন ২২ হাজার ৫০৯ জন। বর্তমানে আইসোলেশনে আছেন ১৮ হাজার ২৫০ জন।
তিনি জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় কোয়ারেন্টিনে যুক্ত হয়েছেন ২ হাজার ২৬১ জন, আর এ পর্যন্ত কোয়ারেন্টিনে গেছেন ৪ লাখ ৫ হাজার ৫৩০ জন। ২৪ ঘণ্টায় কোয়ারেন্টিন থেকে মুক্ত হয়েছেন ২ হাজার ৮৪৭ জন, আর এ পর্যন্ত ছাড়পত্র পেয়েছেন ৩ লাখ ৪৫ হাজার ৩০৪ জন। বর্তমানে কোয়ান্টিনে আছেন ৬০ হাজার ২২৬ জন।
অতিরিক্ত মহাপরিচালক জানান, গত ২৪ ঘন্টায় হটলাইন নম্বরে ১ লাখ ১ হাজার ৭৩১টি এবং এ পর্যন্ত প্রায় ১ কোটি ৬৭ লাখ ৩১ হাজার ১৯৫টি ফোন কল রিসিভ করে টেলিমেডিসিন, স্বাস্থ্য সেবা ও পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
তিনি জানান, করোনাভাইরাস চিকিৎসা বিষয়ে এ পর্যন্ত ১৬ হাজার ৪৮৯ জন চিকিৎসক অনলাইনে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন। গত ২৪ ঘন্টায় যুক্ত হয়েছেন ১ জন। এদের মধ্যে ৪ হাজার ২১৭ জন স্বাস্থ্য বাতায়ন ও আইইডিসিয়ার’র হটলাইনগুলোতে স্বেচ্ছাভিত্তিতে সপ্তাহে ৭ দিন ২৪ ঘন্টা জনগণকে চিকিৎসাসেবা ও পরামর্শ দিচ্ছেন।
ডা. নাসিমা সুলতানা জানান, দেশের বিমানবন্দর, নৌ, সমুদ্রবন্দর ও স্থলবন্দর দিয়ে গত ২৪ ঘন্টায় ২ হাজার ২৪২ জনসহ সর্বমোট বাংলাদেশে আগত ৭ লাখ ৬০ হাজার ৭৮৫ জনকে স্কিনিং করা হয়েছে।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার পরিস্থিতি তুলে ধরে অতিরিক্ত মহাপরিচালক জানান, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ১৬ জুলাই পর্যন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী ২৪ ঘন্টায় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ৩৭ হাজার ৯০৯ জন। এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ১২ লাখ ৬৮ হাজার ৯২৩ জন। ২৪ ঘন্টায় মৃত্যুবরণ করেছেন ৭২৭ জন এবং এ পর্যন্ত ৩১ হাজার ২৯৭ জন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ১৬ জুলাই পর্যন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী সারাবিশ্বে ২৪ ঘন্টায় করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ২ লাখ ২৬ হাজার ১৮১ জন। এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ১ কোটি ৩৩ লাখ ৭৮ হাজার ৮৫৩ জন। ২৪ ঘন্টায় মৃত্যুবরণ করেছেন ৫ হাজার ৫৭৯ জন এবং এ পর্যন্ত ৫ লাখ ৮০ হাজার ৪৫ জন বলে তিনি জানান।
করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে সবাইকে ঘরে থাকা, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, জনসমাগম এড়িয়ে চলা, সর্বদা মুখে মাস্ক পরে থাকা, সাবান পানি দিয়ে বারবার ২০ সেকেন্ড ধরে হাত ধোয়া, বাইরে গেলে হ্যান্ড গ্লাভস ব্যবহার, বেশি বেশি পানি ও তরল জাতীয় খাবার, ভিটামিন সি ও ডি সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া, ডিম, মাছ, মাংস, টাটকা ফলমূল ও সবজি খাওয়াসহ শরীরকে ফিট রাখতে নিয়মিত হালকা ব্যায়াম এবং স্বাস্থ্য অধিদফতর ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ-নির্দেশনা মেনে চলার অনুরোধ জানানো হয়।
তিনি বলেন, ধূমপান থেকে বিরত থাকতে হবে, কারণ তা অতিরিক্ত ঝুঁকি তৈরি করে।

Leave a Reply