ঢাকার উন্নয়নে ‘তামাশা’ করতে দেওয়া হবে না, সমন্বয়ের ইঙ্গিত মেয়র তাপসের

Share on Facebook

ঢাকার উন্নয়ন কার্যক্রম এগিয়ে নিতে দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ‘মহা পরিকল্পনা’ হাতে নিয়েছে জানিয়ে মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস বলেছেন, এই উন্নয়ন হবে সব সংস্থার মধ্যে সমন্বয় করে, ঢাকা নিয়ে আর কাউকে ‘ছেলেখেলা’ করতে তিনি দেবেন না।

“মহা পরিকল্পনার অংশ হিসেবে আমরা ঢাকাকে সচল সুন্দর ঢাকা হিসেবে, সর্বোপরি উন্নত ঢাকা হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। যে সকল সংস্থা ঢাকায় কাজ করে, তাদেরকে অনুরোধ করব, ঢাকাকেন্দ্রিক যে কোনো কার্যক্রম ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সঙ্গে সমন্বয় করে করতে হবে। আমরা সেটা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করব।” বৃহস্পতিবার নগর ভবনে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন মেয়র।

ঢাকায় সেবাদানকারী অন্যান্য সংস্থার উদ্দেশে তিনি বলেন, “যে কোনো প্রকল্প হাতে নিলে আগে ডিএসসিসির সঙ্গে সমন্বয় করে নেবেন। যত্রতত্র অন্য কোনো সংস্থাকে… ঢাকাকে নিয়ে ছেলেখেলা করার সুযোগ দেওয়া হবে না।” নতুন অর্থবছরের জন্য ৬ হাজার ১১৯ কোটি ৫৯ লাখ টাকার বাজেট ঘোষণা করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন, যা গত অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের ১৩৬ শতাংশ বেশি।

গত অর্থবছরে দক্ষিণ সিটির সংশোধিত বাজেটের আকার ছিল ২৫৮৫ কোটি ৩১ লাখ টাকা।

মেয়র তাপস তার বাজেট বক্তৃতায় বলেন, এবারের বাজেটে ‘বটম-আপ পলিসিকে’ গুরুত্ব দিয়ে জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত কাউন্সিলর ও সংসদ সদস্যদের উন্নয়ন ব্যয় বাড়ানো হয়েছে। নগরবাসীর জীবনমান উন্নয়ন ও নাগরিক সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে ১৯টি নতুন প্রকল্প অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

বাজেটে মহা পরিকল্পনার অংশ হিসেবে কামরাঙ্গীরচরে একটি ‘সেন্ট্রাল বিজনেস ডিস্ট্রিক্ট’ করার কথাও তিনি বলেন।

“একটি শহরের চারদিকে নদী বেষ্টিত, এমন শহর পৃথিবীতে বিরল। কিন্তু বুড়িগঙ্গার সন্তান, আমাদের সকলের প্রাণের এই ঢাকা শহরের জনগণকে নাগরিক সুবিধা দেওয়ার প্রচেষ্টা থাকলেও তা সবসময় প্রদান করা সম্ভব হয়নি। তাই সহজতর ও কার্যকর উপায়ে নাগরিক সেবা প্রদানের লক্ষ্যে আমরা মহাপরিকল্পনার আওতায় কামরাঙ্গীর চরে একটি সেন্ট্রাল বিজনেস ডিস্ট্রিক্ট করতে চাই।”

উন্নয়নের নামে অপরিকল্পিত কর্মযজ্ঞ বন্ধের ওপর জোর দিয়ে শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, “বিভিন্ন দপ্তর ও সংস্থার সমন্বয়হীনতায় শিল্পায়নের নামে অপরিকল্পিত কর্মযজ্ঞ বাস্তবায়নের মাধ্যমে এই নগরকে আমরা দিনে দিনে এক রুগ্ন স্বত্ত্বায় পরিণত করে চলেছি। এটা সত্যি যে, দেশের অর্থনৈতিক এবং সামগ্রিক উন্নয়নে শিল্পায়ন অতীব গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ।
“কিন্তু বেঁচে থাকতে হলে মানুষের যেমন শিরা-উপশিরায় রক্ত প্রবাহ ও অক্সিজেন সঞ্চালন অত্যাবশ্যকীয়, তেমনি একটি শহরের বেঁচে থাকা নির্ভর করে তার নর্দমা ব্যবস্থাপনা, শহরের বুক চিরে বয়ে চলা খাল, নদ-নদীর প্রবাহ নিরবচ্ছিন্ন রাখা এবং দূষণ-দখল প্রতিরোধের ওপর।”

তাপস বলেন, “শিল্পায়ন ও নাগরিক সুবিধার নামে আমরা এই শহরের নদ-নদীগুলো দখল, দূষণ ও ভরাট করে চলেছি। জলাধারগুলো নিশ্চল-নিথর করতে সম্পন্ন করেছি সকল আয়োজন। যত্রতত্র ফেলছি ময়লা-আবর্জনা, গতি রোধ করছি নর্দমাগুলোর। এভাবে চলতে দেয়া সমীচীন নয়।”

সমন্বয়হীনতার এই দেয়াল ভেঙ্গে দখল-দূষণের বিরুদ্ধে ‘প্রতিরোধ গড়ে’, জলাশয়গুলোকে ‘সচল করে’, অপরিকল্পিত শিল্পায়নের বিরুদ্ধে ‘সরব হয়ে’ পরিবেশ-প্রতিবেশের পক্ষে অবস্থান নেওয়ার আহ্বান জানান দক্ষিণের মেয়র। তিনি বলেন, নগরকে সবুজে ঢেকে দিতে জন-দুর্ভোগ বিবেচনায় নিয়ে উন্নয়নমূলক কর্মসূচি ও প্রকল্প বাস্তবায়নে গুরত্বারোপ করার এখন সময়।

“তবেই আমরা ঢাকা শহরকে ঐতিহ্যের ধারক হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে পারব। আর জনগণ পাবে একটি বাসযোগ্য সুন্দর, সচল, সুশাসিত ও উন্নত ঢাকা।”

Leave a Reply