প্রণোদনা থেকে পাওয়া এক হাজার কোটি টাকা শেষের পথে বিমান

Share on Facebook

করোনাভাইরাসের সংকট কাটিয়ে উঠতে বৃহৎ শিল্প ও সেবা খাতের জন্য সরকার ঘোষিত ৩০  হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা তহবিল থেকে  ১ হাজার কোটি টাকা ঋণ পেয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত উড়োজাহাজ সংস্থা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস। চলতি মূলধন হিসেবে সোনালী  ব্যাংক থেকে গত মে মাসে এই ঋণ পায় বিমান,  যা বোয়িং থেকে কেনা উড়োজাহাজের কিস্তি,  উড়োজাহাজ রক্ষণাবেক্ষণ, লিজে আনা উড়োজাহাজের ব্যয় ও ফ্লাইট পরিচালনার কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে।

এসব ব্যয় মেটাতে মাসে প্রায় ৪৫০ কোটি টাকা খরচ হচ্ছে বিমানের। সে হিসাবে আগামী মাসের  মধ্যেই প্রণোদনার এ অর্থ শেষ হওয়ার কথা।

ঋণ নেয়ার সময় বিমান কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিল, বহরে থাকা ১৮টি উড়োজাহাজের রক্ষণাবেক্ষণেই প্রতি মাসে খরচ হচ্ছে ২৬৬ কোটি টাকা। তাছাড়া লিজে আনা ছয়টি  উড়োজাহাজের জন্য প্রতি মাসে  ৯৮ কোটি টাকা,  বোয়িং থেকে কেনা উড়োজাহাজের কিস্তি ৭০ কোটি টাকা। অর্থাৎ উড়োজাহাজ লিজ রেন্ট,  মেইনটেন্যান্স ও ব্যাংকঋণের কিস্তি আসে মাসে ৪৩৪ কোটি টাকা এর বাইরে রয়েছে ফ্লাইট পরিচালনার ব্যয়।

এদিকে মাসে ৪০০ কোটি টাকার বেশি ব্যয়
হলেও বর্তমানে ফ্লাইট পরিচালনা থেকে
বিমানের আয় নেই বললেই চলে। দীর্ঘ সময় বন্ধ  থাকার পর ১ জুন থেকে চালু হয় অভ্যযন্তরীণ
রুটের ফ্লাইট। তবে  যাত্রী সংকটের প্রথম দিনেই  বাতিল হয় ১০টি ফ্লাইট। পরবর্তী সময়ে যাত্রী না  পাওয়ায় ধাপে ধাপে ১২ জুুন পর্যন্ত
বাতিল করা হয়েছে সব অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট।

নিয়মিত ফ্লাইট বন্ধ থাকায় বিকল্প হিসেবে
চার্টার্ড ও কার্গো ফ্লাইট পরিচালনায় জোর দিচ্ছে কর্তৃপক্ষ।

গত মে মাসে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গন্তব্যে ৫৭টি চার্টার্ড ফ্লাইট পরিচালনা করেছে এয়ারলাইনসটি।  এর আগে এপ্রিলে পরিচালনা করা হয় ১৭টি। এছাড়া কার্গো ফ্লাইট পরিচালনার উপরও
জোর দেয়া হচ্ছে।  কিন্তু এসব থেকে যা আয়  হচ্ছে তা সুপরিসর
১৮ উড়োজাহাজের বহরসমৃদ্ধ বিমানের জন্য
খুবই নগণ্য। এ পরিস্থিতিতে সামনের দিনে  এয়ারলাইনসটি বড় ধরনের অর্থ সংকটে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

তারা বলছেন, করোনাভাইরাসের প্রভাব কাটিয়ে উঠতে ১ হাজার কোটি টাকা ঋণ হিসেবে
পেলেও সেটা ব্যবহার হবে উড়োজাহাজের কিস্তি, রক্ষণাবেক্ষণ ও ফ্লাইট পরিচালনার কাজে। আর বিশাল কর্মীবহরের বেতন ও বিদেশের
অফিসগুলোর ব্যয় মেটাতে হবে নিজস্ব আয়
থেকেই।

যদিও নভেল করোনাভাইরাসের কারণে বন্ধ
রয়েছে আন্তর্জাতিক রুটের নিয়মিত সব ফ্লাইট। প্রত্যাশিত আয় নেই বিমানবন্দরের গ্রাউন্ড
হ্যান্ডলিং থেকেও। ফলে বেতনসহ যাবতীয় খরচ মেটাতে মারাত্মক সংকটের মধ্যে পড়তে যাচ্ছে বিমান।

এ প্রসঙ্গে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের
ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মো. মোকাব্বির হোসেন বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট
পরিস্থিতিতে বিশ্বব্যাপী সব এয়ারলাইনসই
সংকটে পড়েছে। বিমানও এর ব্যতিক্রম নয়। তবে এ পরিস্থিতিতেও বিমানকে টিকিয়ে
রাখতে সম্ভব্য সব রকম ব্যয় কমিয়ে আনা
হয়েছে। আমরা নিয়মিত চার্টার্ড ও কার্গো ফ্লাইট
পরিচালনা করে যাচ্ছি। বিমানবন্দরে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং করছে বিমান। আর এসব মাধ্যমে যা আয় হচ্ছে তা দিয়ে
এয়ারলাইনসের প্রায় ৬০০ কর্মকর্তা-কর্মচারীর বেতন দেয়া হচ্ছে।

এ পর্যন্ত কোনো কর্মী ছাঁটাই করা হয়নি। তবে আয় কমায় বিমানের পরিচালনা পর্ষদের সিদ্ধান্ত অনুসারে কর্মীদের বেতন ১০-৫০ শতাংশ কমানো হয়েছে। আমরা আশা করছি বিমান সব  সংকট মোকাবেলা করে টিকে থাকবে।

বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে ফ্লাইট চলাচল স্থগিত থাকায় গত মার্চ-এপ্রিল পর্যন্ত বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের লোকসান হয়েছে ৯৩৯ কোটি টাকা। একই  পরিস্থিতি চলমান থাকলে মে ও জুন মাস মিলে সম্ভাব্য লোকসান ধরা হয়েছে আরো ৭৮০ কোটি টাকা।

বর্তমানে সংস্থার বহরে উড়োজাহাজ রয়েছে
মোট ১৮টি। এর মধ্যে নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বোয়িং থেকে সরাসরি কেনা হয়েছে ১২টি। এর মধ্যে ৪১৯ আসনের লম্বা দূরত্ব পাড়ি দিতে সক্ষম বোয়িং ৭৭৭-৩০০ ইআর উড়োজাহাজ রয়েছে চারটি।২০১১-১৪ তিন বছরের মধ্যে উড়োজাহাজগুলো বিমানবহরে যুক্ত হয়। পরবর্তী সময়ে ধাপে ধাপে যুক্ত হয় ১৬২ আসনের দুটি বোয়িং ৭৩৭-৮০০ ও ২৭১ আসনের ছয়টি বোয়িং ৭৮৭ ‘ড্রিমলাইনার’ উড়োজাহাজ। বাকি ছয়টি উড়োজাহাজের মধ্যে চারটি ৭৩৭-৮০০ ও ৭৪ আসনের দুটি ড্যাশ-৮ লিজে  আনা হয়েছে। বর্তমানে এসব উড়োজাহাজের জন্য কেবল রক্ষণাবেক্ষণেই বিমানকে প্রতি  মাসে গুনতে হচ্ছে ২৬৬ কোটি টাকা। শুধু  উড়োজাহাজ রক্ষণাবেক্ষণ নয়, এর বাইরেও প্রতি মাসে লিজে আনা ছয়টি উড়োজাহাজের জন্য ৯৮ কোটি টাকা, বোয়িং থেকে কেনা উড়োজাহাজের কিস্তি বাবদ ৭০ কোটি এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন ও দেশ-বিদেশের অফিস রক্ষণাবেক্ষণে আরো অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে সংস্থাটিকে।

করোনাভাইরাসের কারণে আমদানি-রফতানি কমে যাওয়া ও ফ্লাইট বন্ধ হয়ে
যাওয়ায় চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে মাত্র
৯০ কোটি টাকা আয় করেতে সমর্থ হয়েছিল
বিমান।

গত এপ্রিলে ১৭টি চার্টার্ড ফ্লাইট থেকে সামান্য কিছু আয় করতে সক্ষম হয়েছিল বিমান। তাই ব্যয় কমাতে গত মার্চ মাস থেকে বিমানের সব কর্মকর্তার ওভারটাইম ভাতা প্রদান বাতিল করা হয়েছে।

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের চেয়ারম্যান সাজ্জাদুল হাসান এ প্রসঙ্গে জানান, বিমানের আয় কমলেও একেবারে শূন্যে নেমে আসেনি। বিমান চার্টার্ড ফ্লাইট পরিচালনা করছে। গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং থেকেও আয় করছে। সামনে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চালু হবে। তিনি বলেন, বিমানের অনেক ব্যয় কমিয়ে আনা হয়েছে। আশা করছি, শিগগিরই এ অবস্থা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে।

প্রসঙ্গত, গত সপ্তাহ থেকে পারিবারিক ভ্রমণের জন্য অভ্যন্তরীণ রুটেও চার্টার্ড ফ্লাইট চালু করছে বিমান।দূরত্বভেদে ট্রিপে উড়োজাহাজ  ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে সর্বনিম্ন ৩ থেকে ৫  লাখ টাকা।আগ্রহীরা চার্টার্ড ফ্লাইটে ঢাকা থেকে  অভ্যন্তরীণ সাতটি গন্তব্যে যেতে পারবে। তবে এ উদ্যোগেও এখন পর্যন্ত তেমন সাড়া পায়নি বিমান।

 

Leave a Reply