করোনামুক্তির ভুয়া সনদে ব্যাহত হচ্ছে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট

Share on Facebook

করোনা পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ থেকে বিশেষ ফ্লাইটে নিজ নিজ দেশে ফিরছেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নাগরিকগণ। স্বাস্থ্যবিধি মেনে যাবার আগে বাংলাদেশ থেকে নিতে হচ্ছে করোনা নেগেটিভ সনদ। কিন্তু বেশ কয়েকজন বিদেশি ঢাকা থেকে তাদের দেশে নামার পর বিমানবন্দরের টেস্টে করোনা পজিটিভ রিপোর্ট এসেছে। এতে বাংলাদেশ থেকে নেওয়া করোনামুক্ত সনদের মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

এমন বাস্তবতায় এরই মধ্যে জাপান সরকার বাংলাদেশ থেকে যে কোনো ফ্লাইট দেশটিতে যাওয়ার ব্যাপারে বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। একই ধরনের ঘটনায় দক্ষিণ কোরিয়া ও মালয়েশিয়া উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। পররাষ্ট্র ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্রে গতকাল এ তথ্য জানা গেছে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, বিদেশীদের যারা এই ধরনের করোনামুক্ত হেলথ সার্টিফিকেট দিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। জাপান সরকার এরই মধ্যে আমাদের ‘ডাউন গ্রেড’ করেছে। এখন আমাদের কোনো ফ্লাইট সেখানে যেতে পারছে না। এখান থেকে নেগেটিভ রিপোর্ট নিয়ে যাওয়ার পর তাদের ওখানকার পরীক্ষায় করোনা ধরা পড়ছে। দক্ষিণ কোরিয়ার ক্ষেত্রে একই ধরনের ঘটনা ঘটেছে। এতে দেশের বাইরে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হচ্ছে। মন্ত্রী আরও বলেন, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সে কোনো যাত্রী পাঠানো হলেই সেখানে এই ধরনের গাফিলতি দেখা যায়। যারা এই সনদ পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও প্রদানের সঙ্গে জড়িত তাদের দ্রুত খুঁজে বের করতে হবে। তাদের লাইসেন্স বাতিল করা জরুরি।

বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব মহিবুল হক বলেন, কোন হাসপাতাল থেকে তারা করোনামুক্তির সার্টিফিকেট নিয়ে তারা দেশে ফিরেছেন- এটা আমরা এখনও জানি না।

সংশ্নিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা জানান, জাপানের নাগরিকদের নিয়ে বাংলাদেশ থেকে যাওয়ার পর একটি ফ্লাইটে ৪ জনের করোনা রিপোর্ট পজিটিভ আসে। তবে তাদের কাছে নেগেটিভ সনদ ছিল। যেটি বাংলাদেশ থেকে নেওয়া। একইভাবে বিশেষ ফ্লাইটে দক্ষিণ কোরিয়ায় ফিরে যাওয়া তাদের ১২ নাগরিকের করোনা ধরা পড়ে। তারা সবাই বাংলাদেশ থেকে করোনা নেগেটিভ রিপোর্ট নিয়ে গেছেন।

গত ৩ জুন বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইট শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে মালয়েশিয়া যায়। সেখানে যাওয়ার পরপরই ওই ফ্লাইটে যাওয়া ৫ জনের করোনা ধরা পড়ে। তারা করোনার নেগেটিভ রিপোর্ট নিয়ে গিয়েছিলেন। সূত্র জানায়, বাংলাদেশ থেকে যারা ওই ফ্লাইটে গিয়েছেন তাদের মধ্যে ‘সেকেন্ড হোমে’ মালয়েশিয়ার নাগরিকত্ব নেওয়া কয়েকজন রয়েছেন। ফিরতি ফ্লাইটে মালয়েশিয়ায় আটকেপড়া ১৪০ বাংলাদেশিকে দেশে ফিরিয়ে এনেছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। এ ফ্লাইটে শিক্ষার্থী, বাংলাদেশি শ্রমিক ও দেশটিতে ভ্রমণে যাওয়া কিছু বাংলাদেশি ছিলেন।

বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে বিমান যাত্রীদের করোনামুক্ত হেলথ সার্টিফিকেট নিতে হয়। বাংলাদেশ থেকে ফেরত যাওয়া করোনা পজিটিভ বিমানযাত্রীদের কোন হাসপাতাল করোনা মুক্তের সার্টিফিকেট দিয়েছে তা তদন্ত করা হচ্ছে। সংশ্নিষ্টরা ধারণা করছেন, করোনামুক্তির এই সনদগুলো জাল। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্রে জানা গেছে, করোনা ভাইরাসের পরীক্ষার ফলাফল নেগেটিভের ভুয়া সনদ বিক্রি করছে একটি চক্র। এরই মধ্যে সাভারে এই চক্রের একজনকে গ্রেপ্ততারও করা হয়েছে। তার নাম সাঈদ মিয়া। সাভারে অনেক তৈরি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা তাদের কর্মস্থলে করোনা পরীক্ষার প্রত্যয়নপত্র জমা দেন। পোশাক কর্মীদের কাছে করোনার ভুয়া প্রত্যয়নপত্র বিক্রি করে আসছিল সাঈদ ও তার সঙ্গীরা।

 

Leave a Reply