আমরাই পারি বিশ্বকে আমাদের পর্যটনের দিকে টেনে নিতে

Share on Facebook

আমরা এখন করোনা ভাইরাস মহামারীর ধাক্কায় আছি। একে একে চাপে আছে আমাদের অর্থনীতি। কোথা থেকে শুরু করবো আমরা অনেকেই তা নিয়ে ভাবতে শুরু করেছি। করোনা ভাইরাস মহামারী শেষ হলে উন্নত দেশগুলো ঠিকই ঘুরে দাঁড়াবে। কারণ, তাদের হাতে কোনও না কোনও চাবি আছে। হয় তারা পর্যটন দিয়ে আগাবে, না হয় শিক্ষা ডিগ্রি বিক্রি করে আগাবে। আমরা এই ক্রান্তিকালেও ওইসব দেশে ভ্রমণে যাবো। আবার পড়ালেখা করতে কোটি কোটি টিউশন ফি দিয়ে ভর্তি হবো। শুধু কী তাই! অস্ত্রের নিপুণ খেলা আছে সাথে। কেউ অস্ত্র বানিয়ে বেঁচবে, কেউ কিনবে।

প্রশ্ন জাগতে পারে, আমরা কীভাবে দাঁড়াবো? অর্থনীতির চাকাটা কীভাবে ঘুরবে আমাদের? গার্মেন্টস, ওষুধ শিল্প আমাদের ভালো ভরসা। আরো আছে চামড়া থেকে কাঁচামাল। এসব খাতগুলো আমাদের অর্থনীতিরি চাকাটা দীর্ঘদিন ঘুরিয়ে আসছে। এই চাকাটা আরও ঘোরানোর জন্য পর্যটন শিল্পকে দিয়ে আরেকটা জোর ধাক্কা দেওয়া যায় কি?

ভাবার সময় কিন্তু এখনই। আমাদের ভালো দিকগুলো কী নেই? আছে বিস্তর। আছে, বিশ্বের সবচেয়ে বড় সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার। নজর দিতে হবে সেদিকে। বিদেশিদের সকল সুযোগ-সুবিধা চিন্তা করে ঢেলে সাজাতে হবে।

কক্সবাজারকে সপ্তাহে তিন দিন বিদেশিদের জন্য করে দেওয়া যেতে পারে। যেহেতু বিশাল সৈকত, একটি অংশ নির্ধারণ করে সপ্তাহে সাতদিনই দেওয়া যেতে পারে। আমরা সাধারণরা সেদিকে যাব না। যদি যেতেই হয় ডলার ‘পে’ করে যাব। কেউ যেন এই কথা ভেবে আন্দোলন না করে বসে- নিজের সি-বিচে নিজে ডলার দিয়ে যেতে হবে, এটা কোনও নীতি হতে পারে না! আপনি বিভিন্ন দেশে গিয়ে ডলার খরচ করেন। তখন এখানেও করবেন।

আছে আমাদের সবুজ পার্বত্য অঞ্চল। আমার তো মনে হয়, পরিবেশ, জলবায়ু ও সৌন্দর্যের দিক থেকে সুইজারল্যান্ডের চেয়ে আমাদের পার্বত্য অঞ্চল অনেক বৈচিত্র্যময়। প্রকৃতির মনোরম পরিবেশে কার ভালো না লাগে যেতে! একটু অবসর পেলেই তো হাফ ছাড়তে আমরা প্রকৃতি খুঁজে বেড়াই।

আছে, ঐতিহ্য বা ইতিহাসের একটা বিশাল জগৎ। চীনের ফরবিডেন সিটিতে পর্যটকদের এমন ভিড় আপনি ভিড়ের মধ্যে হারিয়ে যেতে পারেন। আমাদের ভাষার ইতিহাসকে বিশ্বের কাছে জাগ্রত করতে পারি। যেহেতু বিশ্বে আমাদের ‘ভাষাযুদ্ধ’ ইতিমধ্যে পরিচিত- শহীদ মিনারকে ধরে আশপাশকে ভাস্কর্যসহ কিছু স্মৃতি স্পট তৈরি করা যেতে পারে।

আছে, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস। শুধু সাভারে স্মৃতিচারণের মধ্য দিয়ে এই ইতিহাস সীমাবদ্ধ না রেখে পুরো পর্যটন উপযোগী চিন্তা ও কৌশল হাতে নিয়ে আগানো যেতে পারে। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে আমাদের সন্তানদের নিয়ে বাধ্যতামূলকভাবে বেড়িয়ে আসার সংস্কৃতি তৈরি করতে হবে। এতে দেশপ্রেমও জাগ্রত হবে আবার পর্যটনের চাকাও ঘুরবে।

আছে, কর্কটক্রান্তি রেখা। ফরিদপুরে তার ছেদবিন্দু। সরকার ইতোমধ্যে পরিকল্পনা করছে, এই বিন্দুকে সাজানো হবে। আমাদের পরিকল্পনাবিদরা যেন আগামী ৫০০ বছর পর কী হবে, তার কথা মাথায় রেখে পরিকল্পনা করেন। হোটেল-মোটেলসহ বিশাল বিশাল রাস্তাঘাট ও পর্যাপ্ত অঞ্চল নিয়ে যেন হয়!

পর্যটন খাত নিয়ে করতে হবে গবেষণা। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে উৎসাহ দিতে হবে, তহবিল দিতে হবে যাতে পর্যটনকে আধুনিক ও উদ্ভাবনী উপায়ে কীভাবে ঢেলে সাজানো যায় সে গবেষণায় নিয়োজিত হতে পারে।

করোনাভাইরাস সংক্রমণের এই কালে সারাবিশ্ব অর্থনৈতিক চাকা পুনরায় সচল করবে। ওরা ঘুরে দাঁড়াবে। আমরাও ঘোরাবো। ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করব। সবসময় ঘুরে দাঁড়িয়েছি। কিন্তু এবার পর্যটন জগতকে নজর না দিয়ে নয়।
প্রকৃতির মায়ায় গড়া আমাদের এই সুন্দর দেশটাকে পর্যটকদের জন্য আকর্ষণীয় করার মতো সব কিছুই আছে আমাদের। এখন শুধু দরকার সদৃঢ় তত্বাবধান আর সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পণা। তাহলেই আমরা সামনের অর্থৈনিতক সংকট মোকােবলা করে ঘুরে দাড়ােত পারবো, এমনটাই মনে করেন পর্যটন শিল্পের গবেষকরা।

Leave a Reply