দীপ্যমান হাওর পর্যটন

Share on Facebook

সকল জলাভূমি পর্যটনই ইকোপর্যটন। পৃথিবীর সব দেশে সমান আয়তনের জলাভূমি নাই। তাই তারা জলাভূমি পর্যটনের অনুশীলন করতে পারে না। বাংলাদেশ ভৌগলিকভাবে অনেক জলাভূমির মালিক। তাই জলাভূমি পর্যটনে আমাদের বড় জায়গা প্রাকৃতিকভাবে তৈরি হয়ে আছে। রামসার কনভেনশন ১৯৭১ সালে জলাভূমির সংজ্ঞায় বলেছে যে, প্রাকৃতিক অথবা মানবসৃষ্ট, স্থায়ী কিংবা অস্থায়ী, স্থির অথবা প্রবহমান পানিবিশিষ্ট স্বাদু, লবনাক্ত অথবা মিশ্র পানির জলা, ডোবা, পিটভূমি (Pit Land) অথবা পানিসমৃদ্ধ এলাকা এবং সেই সঙ্গে নি¤œ জোয়ারের (Low Tide) সময় ৬ মিটার গভীরতা অতিক্রম করে না এমন সামুদ্রিক এলাকা।

১৯৭১ সালের ২ ফেব্রæয়ারি ইরানের রামসার নামক শহরে জলাভূমির টেকসই ব্যবহার ও সংরক্ষণ বিষয়ক এক আন্তর্জাতিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়, যা পরবর্তীতে ‘রামসার কনভেনশন’ নামে পরিচিতি লাভ করে। বর্তমানে একে জলাভূমি ব্যবহারে আন্তর্জাতিক আইনের অধীন একটি চুক্তি বলে গ্রহণ করা হয়েছে। অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক, বৈজ্ঞানিক ও বিনোদনকে মূল্যায়ন করে রামসার তালিকায় জলাভূমি লিপিবদ্ধ করা হয়। মার্চ ২০১৬ পর্যন্ত এই তালিকায় মোট ২২৩১টি আন্তর্জাতিক গুরুত্বপূর্ণ জলাভূমিকে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। বাংলাদেশের সুন্দরবন ও টাঙ্গুয়ার হাওর এতে স্থান পেয়েছে। আমাদের সিলেটের হাকালুকি হাওর রামসার তালিকায় ৩য় স্থান অধিকার করতে যাচ্ছে।

উল্লেখ্য যে, সংস্কৃত শব্দ সাগর (Sagara) পরিবর্তিত হয়ে সায়র হয়েছে। অতপর সিলেটের স্থানীয় ভাষায় এর আরেকদফা রূপান্তরের প্রেক্ষিতে হাওর শব্দের সৃষ্টি। এ থেকেই ধারণা করা যায় যে হাওর হলো সমতলের সাগর।

হাওর ও অন্যান্য জলাভূমি:
বাংলাপিডিয়ার তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে ৭০-৮০ হাজার বর্গ কি.মি. এলাকায় জলাভূমি বর্তমান। হাওর এর মধ্যে অন্যতম যা বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত গামলাকৃতির অগভীর এক ধরণের জলাভূমি ইকোসিস্টেম, যাকে Bacswarm হিসেবেও অভিহিত করা হয়। বর্ষাকলে হাওরগুলি নদী ও খাল দিয়ে প্রবাহিত জলধারা গ্রহণ করে এবং বিশালায়তন পরিণত হয়। হাওর ছাড়াও বাংলাদেশে আরো ৯ (নয়) ধরণের জলাভূমি আছে। এগুলো হলো নদী, নালা, বাওর, হ্রদ, খাল, বিল, পুকুর, দীঘি ও ডোবা। স্ট্যাটিসটিকাল ইয়ারবুক ১৯৯৮-এর মতে বাংলাদেশে রয়েছে প্রায় ৭০০ নদী-উপনদী, যাদের মোট দৈর্ঘ ২৪,১৪০ কি.মি.। তবে ৫১টি প্রধান নদ-নদীর দৈর্ঘ ৭,৭৫৩ কি.মি. এবং ৭২০ কি.মি. দীর্ঘ সমুদ্রতীর। বাংলাদেশ হাওর ও জলাভূমি উন্নয়ন অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী আমাদেও রয়েছে ৩৭৩টি হাওর এবং ৩,৫০০ স্থায়ী বিলসহ মোট বিলের সংখ্যা ৬,৩০০। এই তথ্য থেকে প্রতীয়মান হয় যে, বাংলাদেশে বিশাল জলাভূমি রয়েছে যা পর্যটনের জন্য ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা যায়। প্রত্যেকটি জলাভূমির আলাদা আলাদা বৈশিষ্ট্য রয়েছে। মোট ১০ ধরণের জলাভূমি নিয়ে এদেশে গড়ে উঠতে পারে শক্তিশালী জলাভূমি পর্যটন ব্যবস্থা, হাওর পর্যটন যার মধ্যে অন্যতম।

পর্যটন গন্তব্য হিসেবে টাঙ্গুয়ার হাওর ও হাকালুকি হাওরকে ইতোমধ্যে পছন্দের সর্বোচ্চ তালিকায় স্থান দিয়েছে। টাঙ্গুয়ার হাওর সম্বন্ধে কিছু তথ্য উপস্থাপন করছি। এই হাওর সুনামগঞ্জ জেলায় অবস্থিত, আয়তন ১০০ বর্গ কি.মি.। এর স্থানীয় নাম নয়কুড়ি কান্দার ছয়কুড়ি বিল। ২০০০ সালের ২০ জানুয়ারি রামসার কনভেনশন একে রামসার স্থান হিসেবে স্বীকৃতি দেয় এবং হাওর এলাকার মানুষের আর্থ-সামাজিক অবস্থার পরিবর্তন, সম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ ও সুইজারল্যান্ড সরকারের মধ্যে ২০০১ সালে ১২ ফেব্রুয়ারি এক সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। স্থানীয় মানুষকে সঙ্গে নিয়ে এখানে ইতোমধ্যে গড়ে উঠেছে জলাভূমি পর্যটন। দেশি-বিদেশি সকল পর্যটকদের কাছে ব্যাপক আকর্ষণ সৃষ্টি করেছে এই গন্তব্য। প্রকৃতির মমতা মাখানো সৌন্দর্যের পাশাপাশি হাওরের মাছ পর্যটকদের রসনাকে সিক্ত করছে। স্থানীয়ভাবে বসবাসকারী মানুষের কর্মসংস্থান ও দারিদ্র্য বিমোচনের জন্য জলাভূমির বিজ্ঞভাবে ব্যবহার (Wise use of water) বাড়ানো এবং প্রাকৃতিক সম্পদের প্রথাগত ব্যবহার বন্ধ করা অত্যন্ত জরুরি। বিশেষজ্ঞগণ মনে করেন যে, সঠিক পরিকল্পনা গ্রহণ করলে টাঙ্গুয়ার হাওরকে আগামী দিনে জলাভূমি নগরী (Wetland City) হিসেবে গড়ে তোলা যায়।

হাওর পর্যটন নিয়ে সরকারি পদক্ষেপ:
হাওরের সার্বিক উন্নয়নের জন্য বাংলাদেশ ও জলাভূমি উন্নয়ন অধিদপ্তর স্থাপন করা হয়েছে এবং ২০১২-২০৩২ সাল পর্যন্ত ২০ (কুড়ি) বছরমেয়াদি একটি মহাপরিকল্পনাও তৈরি করা হয়েছে। এই মহাপরিকল্পনায় ইকোপর্যটন উন্নয়নের মাধ্যমে স্থানীয় মানুষের কর্মসৃজন ও আর্থ-সামজিক উন্নয়নের কথা বর্ণিত আছে। হাওরাঞ্চলে পর্যটন উন্নয়নের জন্য ২টি মেগা ইকোপার্ক, ২টি এমিউজমেন্ট পার্ক এবং ৬টি পিকনিক স্পটসহ হোটেল, রেস্টুরেন্ট ইত্যাদি স্থাপনের কথা উল্লেখ রয়েছে। অধিকন্তু, ৩টি পাখিদর্শন টাওয়ার, ১টি ফিসপার্ক ও বন্যপ্রাণি সংরক্ষণ অভয়ারণ্য স্থাপনের মাধ্যমে হাওরের জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের কথাও বলা আছে। এ ছাড়া নষ্ট হয়ে যাওয়া ৬টি জমিদারবাড়ি সংস্কারের মাধ্যমে ঐতিহাসিক নিদর্শন ফেরত আনার কথাও এই মহাপরিকল্পনায় বিবৃত আছে। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিসমূহ ভবিষ্যত প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য ২টি মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর স্থাপনের পরিকল্পনাও আছে।

উপরের বিবরণ থেকে উন্নয়নের একটি চিত্র পাওয়া গেলেও তা বাস্তবায়নের পন্থা সম্বন্ধে কিছুই বলা নাই। ফলে গত ৮ (আট) বছরে তার কিছুই বাস্তবায়িত হয় নাই। উক্ত মহাপরিকল্পনায় হোটেল ও রেস্টুরেন্ট নির্মাণের জন্য বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনকে যুক্ত করার কথা থাকলেও হাওরাঞ্চলে এদের পদচারণা দৃশ্যমান হয় নাই।

হাওর পর্যটনের রকমফের:
হাওরে বহুধরণের পর্যটন পরিচালনা করা যেতে পারে। তবে সব হাওরে সব ধরণের পর্যটন হবে না। যাই হোক, হাওরাঞ্চলে করা যায় এমনসব পর্যটন নিয়ে নিচে সংক্ষেপে আলোকপাত করা হলো-

ক. নৌপর্যটন: বর্ষায় হাওরের কূলকিনারা দেখা যায় না। আবার হাওর খরস্রোতাও নয়। ফলে ভ্রমণের জন্য হাওর পর্যটকদের কাছে বিশেষ আকর্ষণ সৃষ্টি করে। নিরাপদে হাওর অভিযান (Haor Expedition), পূর্ণিমার হাওর কিংবা হাওরে মাছ ধরা দেখা বা তাতে অংশ নেওয়া হাওরের নৌপর্যটনের উল্লেখযোগ্য বিষয়। রাতে হাওরে রাত্রিযাপন যে কোন মানুষের জন্য হতে পারে জীবনের অন্যতম স্মরণীয় স্মৃতি।
খ. কৃষি পর্যটন: হাওরে বছরের প্রায় ৭ মাস পানি থাকে বিধায় হাওরের কৃষি একেবারেই আলাদা। জলি আমন (অর্থাৎ জলে জন্মে যে আমন ধান) একমাত্র হাওরেই হয়। বোনার পর পানি বাড়ার সাথে সাথে এই ধান গাছ বেড়ে উঠতে থাকে। গবেষকগল বলছেন, কোন কোন জলি আমনের জাত দৈনিক ১ ফুট পর্যন্ত বাড়তে পারে। জলি আমন কী অদ্ভুদ প্রজাতির উদ্ভিদ। বর্ষার পানি সরে গেলে শীতের হাওর জৈবকৃষি অনুশীলনের বিস্ময়কর পললভূমিতে পরিণত হয়, যা বাংলাদেশের অন্য পাওয়া যাবে না। হাওরের মাছের খ্যাতি চিরদিনের। বর্ষা ও শীত উভয় মৌসুমেই হাওরে প্রাকৃতিক মাছ পাওয়া যায়। গবেষকগণ বলছেন যে, হাওরে প্রায় ১২০০  প্রজাতির মাছ পাওয়া যায়। কৃষির এইসব বহুমাত্রিক অভিজ্ঞতা নিতে যে কোন পর্যটক অনায়াসে হাওরকে বেছে নিতে পারেন।
গ. পাখিদর্শন পর্যটন: হাওরে বিচিত্র প্রজাতির পাখি পরিলক্ষিত হয়। কেবল টাঙ্গুয়ার হাওরেই রয়েছে ২৫০ প্রজাতির পাখি। তাই পাখিদর্শনের জন্য ভ্রমণকারীরা হাওরে যেতে পারেন।
ঘ. খাদ্য পর্যটন: হাওরের খাদ্য ও তাদের রেসিপি বাংলাদেশের অন্য স্থানের তুলনায় আলাদা। হাওরাঞ্চলে রয়েছে অন্তত ১০০ প্রজাতির বুনো শাক। অন্যদিকে এখানে সব্জির চাষ কম হওয়ায় শুধু মাছ দিয়ে স্থানীয় মানুষেরা বংশপরম্পরতায় বহুবিধ রেসিপি তৈরি করেছে। কাঁজি ও গেরাপিঠা এখানকার বিশেষায়িত ও ঐতিহ্যবাহী খাবার। পর্যটকরা সহজেই এই ধরণের খাবারের স্বাদ নিতে যেতে পারে হাওর জনপদের সাধারণ মানুষের কাছে।
ঙ. জীবনধারা পর্যটন: জল-মাটির সমন্বয়ে বসবাস করেন বলে হাওরের মানুষের জীবনযাত্রা ভিন্ন এবং আমাদের কাছে তা বিচিত্র বলে মনে হতে পারে। যেমন হাওরে স্থলভাগ অস্বাভাবিকভাবে কম থাকায়  হাওরাঞ্চলের জনসংখ্যা অত্যন্ত কম। হাটবাজার ও দোকানপাট অপ্রতুল। বিদ্যুৎ ও রাস্তাঘাটের রয়েছে বেশ ঘাটতি। স্কুল, কলেজ বা অন্য কোন অফিস, ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান খুব কম দেখা যায়। এই দৃশ্যপট বাংলাদেশের যে কোন জায়গার চেয়ে একদম আলাদা। ২-৪ দিন বিশ্রাম গ্রহণ এবং কমসম্পদে নির্বাহ করা মানুষের জীবনযাত্রা দেখার জন্য উত্তম গন্তব্য হাওর। হাওরের মানুষের শিক্ষা, সংস্কৃতি ও বিশ্বাস থেকেও জানা যাবে তাদের জীবনের অনেক অজানা তথ্য। শুধু তা-ই নয় হাওরে প্রচলিত অতিকথন সেখানকার মানুষ আজো মনে ধারণ করে।
চ. শিক্ষা পর্যটন: হাওরের প্রকৃতি, উদ্ভিদ, প্রাণি, জীবনধারা, জীববৈচিত্র্য ও প্রাকৃতিক সম্পদের ব্যবহার রীতি ইত্যাদি সবই গবেষণার বিষয় হতে পারে। ছাত্র, শিক্ষক, গবেষক এবং অনুসন্ধিৎসু মানুষের জন্য হাওর এক বিকল্প বিশ্ববিদ্যালয়। এখান থেকে জীবনভিত্তিক ও বাস্তবোচিত শিক্ষা গ্রহণের কত যে ক্ষেত্র আছে – তার ইয়ত্তা নাই।
চ. সাংস্কৃতিক পর্যটন: বাংলাদেশের ৬টি জেলাতে রয়েছে হাওর। তাই প্রাচীন, ঐতিহাসিক ও প্রত্নতাত্ত্বিক অনেক সম্পদ রয়েছে হাওরাঞ্চলে। হাওরকে ভাটি অঞ্চল বলা হয় বিধায় ভাটিয়ালি গানের উৎসস্থল এই হাওর। হাওরে জন্ম নিয়েছে অনেক কিংবদন্তির শিল্পী। উকিল মুন্সি, রশীদ উদ্দিন, হাসনরাজা, শাহ্ আবদুল করিম প্রমুখ ব্যক্তিবর্গ হাওরের মরমী কবি ও সঙ্গীতজ্ঞ। তাঁরা কালজয়ী ও হৃদয়স্পর্শী গান রচনা করে মানুষের জীবনকে প্রকাশ করেছেন এক অকৃত্রিম রীতিতে। হাওরের মানুষের পোষাক ও বিনোদনের প্রকৃতির মধ্যে রয়েছে স্বাতন্ত্র্য। ভ্রমণকালে এইসব উপাদান মানুষকে নতুন অভিজ্ঞতা দান করে।

হাওরে যুবপর্যটন:
যুবাদের অন্যতম প্রিয় হলো রোমাঞ্চকর পর্যটন। পাহাড়, সমুদ্র, বনাঞ্চল ইত্যাদির সাথে হাওরকেও অনেকে যুক্ত করেছে। হাওর পর্যটন যুবাদেরকে আকৃষ্ট করার অন্যতম কারণ হলো হোটেলর পরিবর্তে নৌকায় রাত্রিযাপন যাতে  জলবাসের নতুন অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করা যায়। বাংলাদেশের হাওরগুলিতে কত মানুষ ভ্রমণ করেন তার গ্রহণযোগ্য সংখ্যা জানা না গেলেও একথা বলা যায় যে, হাওর পর্যটকদের প্রায় ৮০% ছাত্র ও অন্যান্য যুবা। হাওরে যুবপর্যটন গড়ে উঠার পিছনে অন্তত ৫ (পাঁচ)টি কারণকে চিহ্নিত করা যায়। এগুলো হলো ক. পানির বিশালতার রোমাঞ্চময়তা, খ. স্বল্পখরচের খাদ্য ও আবাসন, গ. জীবনযাত্রার সরলতা অবলোকন, ঘ. হাওরের জীববৈচিত্র্য ও ঙ. স্মৃতিময় অভিজ্ঞতা। তরুণ মনের এইসব চাহিদা পূরণের জন্য তারা দলে দলে ছুটে যায় ঐ বিশাল জলরাশির কাছে। নিজেদেরকে নতুনভাবে আবিস্কার করতে চায় প্রকৃতির সন্তান হিসেবে। তাই হাওরে যুবপর্যটন গড়ে তোলার দিকে সকলের নজর দিতে হবে। এই উপলক্ষে নিচের পদক্ষেগুলি গ্রহণ করা দরকার-

ক) যুবাদের উপযোগী করে পর্যটন প্রডাক্ট তৈরি করা।
খ) হাওর পর্যটনের অপারেটরদেরকে যথাযথভাবে প্রশিক্ষণ প্রদান করা।
গ) স্থানীয় অধিবাসিদের মধ্য থেকে বাছাই করে ট্যুরিস্ট গাইড তৈরি করা।
ঘ) রাত্রিযাপনের নৌকাগুলির আবাসন ও খাদ্য ব্যবস্থার সুরক্ষা নিশ্চিত করা।
ঙ) আগত পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
চ) স্বাগত জনগোষ্ঠীকে পর্যটনবান্ধব করে গড়ে তোলা।
ছ) হাওরের বাস্তু ও পরিবেশ রক্ষার জন্য পর্যটক, স্থানীয় মানুষ ও সেবাদানকারী সকলকে করণীয় ও বর্জনীয় সম্বন্ধে প্রশিক্ষণ প্রদান করা।
জ) দায়িত্বশীল পর্যটনের সকল বিষয়াবলি অনুসরণ করা।

উপসংহার:
বাংলাদেশের প্রায় ৫৪% এলাকা জলাভূমি। এর মধ্যে প্রায় এক পঞ্চমাংশ হাওর। পৃথিবীর আর কোথাও হাওর আছে কি না – আমার জানা নাই। হাওর বাংলাদেশের বিরল জলাভূমি পর্যটনসম্পদ এবং এক অনুপম গন্তব্য। একে গড়ে তুলতে হলে দরকার সরকারের পক্ষ থেকে কিছু পদক্ষেপ গ্রহণের। বাংলাদেশ হাওর ও জলাভূমি অধিদপ্তর এবং বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে সম্প্রতিকালে স্থাপিত হাওর গবেষণা ইনস্টিটিউটকে হাওর অন্যান্য বিষয়ের সাথে পর্যটন গবেষণা ও সম্প্রসারণের দায়িত্ব গ্রহণে এগিয়ে আসতে হবে। স্থানীয় মানুষদেরকে সংগঠিত করে সমবায়ী পদ্ধতিতে হাওর পর্যটনকে ভিন্নরূপে গড়ে তোলা যায়। এতে স্থানীয় সরকার, গন্তব্য ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠানসমূহ (ডিএমও), এনজিও এবং পর্যটনের অন্যান্য প্রতিষ্ঠানকে কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে। দেশের এতো বড় একটি সম্পদের ব্যবহার, ব্যবস্থা ও সংরক্ষণে সকলের দায়িত্ব আছে। যথেচ্ছ ব্যবহার কিংবা উদাসীনভাবে অব্যবস্থাপনায় ফেলে আমাদের কাম্য নয়। হাওরে সঠিক পর্যটন ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে পারলে এর জ্ঞানোচিত ব্যবহারের মধ্য দিয়ে জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ করে টেকসই গন্তব্য হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব। সমুদ্রকে কেন্দ্র করে স্থাপিত হয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেরিটাইম ইউনিভার্সিটি। আমরা মোটেও বিস্মিত হবো না যদি হাওরকে কেন্দ্র করে স্থাপিত হয় বাংলাদেশ হাওর বিশ্ববিদ্যালয়। এখানে পৃথিবীর অনেক খ্যাতিমান স্কলারগণ এসে গবেষণা করে হাওরকে জানবেন। পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়বে আমাদের হাওর সংস্কৃতি আর হাওর পর্যটনের ইতিবৃত্ত।

মোখলেছুর রহমান
আহবায়ক, সম্মিলিত পর্যটন জোট এবং সভাপতি, বাংলাদেশ ট্যুরিজম ফাউন্ডেশন।

Leave a Reply