চিরায়ত চিকিৎসা: স্বাস্থ্যপর্যটনের নতুন দিগন্ত (পর্ব-০১)

Share on Facebook

নাটোরের ৩টি ইউনিয়নে প্রায় ৫,০০০ কৃষক ২২ প্রজাতির ঔষধি উদ্ভিদ চাষ করেন। এই তথ্যটিকে পুঁজি করে ট্যুর অপারেটররা ঐ স্থানে হোমস্টে ও স্থানীয় গাইডিংয়ের ব্যবস্থা করলে “ট্র্যাডিশনাল মেডিসিন ট্যুর” নামে স্বাস্থ্য পর্যটনের একটি প্যাকেজ সহজেই তৈরি করে ফেলতে পারবে। আবার এখন করোনাকালীন সংকটে যখন ঐ স্থানে ১৫০ হেক্টর জমির প্রায় ১৫ কোটি টাকার উদ্ভিদ ইতোমধ্যে নষ্ট হয়েছে বলে গণমাধ্যমে প্রচারিত সংবাদের প্রেক্ষিতে “রিয়েলিটি ট্যুরিজম” নামে আরেকটি প্যাকেজ তৈরি করে এসব ক্ষতি ও সর্বনাশ দেখিয়ে অর্থ ও সুনাম দুটোই অর্জন করতে পারবে। আর আবদুল গণি (১৯৮৮) লিখিত বাংলাদেশের ঔষধি উদ্ভিদ বইয়ের বরাত দিয়ে যদি প্রচার করা যায় যে, বাংলাদেশে ৪৪৯ প্রজাতির ঔষধি উদ্ভিদ আছে, তাহলে অন্য দেশ থেকে ঔষধি উদ্ভিদ নিয়ে অধ্যয়ন ও গবেষণা করেন এমন অনেক মানুষও ছুটে আসতে পারেন। তাতে কিছু বৈদেশিক মুদ্রা কামাই করে নেওয়া সম্ভব। কিন্তু এই অর্থ উপার্জনের চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ এইসব জীবন রক্ষাকারী ঔষধি উদ্ভিদ সুরক্ষার জন্য শিঘ্রই ব্যবস্থা গ্রহণ করা, না হলে করোনার মতো আরেকটি মানবিক পরাজয়ের জন্য আমাদেরকে প্রস্তুতি নিতে হবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা প্রায় দেড় যুগ আগে এক গবেষণায় ভবিষ্যৎ বাণী করেছে যে, বিপন্নপ্রায় উদ্ভিদগুলিকে সুরক্ষা করতে না পারলে আগামী দিনে ঔষধ তৈরির কাঁচামালের অভাবে মানুষ মুত্যুবরণ করবে। প্রতিবেশী দেশ ভারতের প্রতিটি রাজ্যে একটি করে মেডিসিনাল প্ল্যান্ট বোর্ড আছে এবং দিল্লীতে আছে ন্যাশনাল প্ল্যান্ট বোর্ড। আমাদের দেশে বাংলাদেশ মেডিসিনাল প্ল্যান্ট বোর্ড করার চিন্তা করা হলো ২০১১ সালে, অথচ তা আলোর মুখ দেখলো না। নিশ্চয়ই এর দায় কোন আমলা কিংবা মন্ত্রী কেউই নিবেন না।

চিরায়ত চিকিৎসা কী?
দেশজ যে চিকিৎসা পদ্ধতি (Indigenous Medicine) স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনায় অর্থাৎ শারিরীক ও মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষায়, রোগ নির্ণয়ে এবং চিকিৎসা পরিচালনায় ব্যবহৃত হয় তাকে চিরায়ত চিকিৎসা পদ্ধতি বলে। লোকজ জনজীবন থেকে উঠে আসার জন্য একে লোকজ চিকিৎসাও বলা হয়। এই চিকিৎসাশাস্ত্র তত্ত্ব, বিশ্বাস ও অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে সৃষ্টি ও অনুশীলন করা হয় বলে অনেকে একে বিকল্প চিকিৎসা বলেও অভিহিত করেন। অন্যদিকে আদিবাসি সম্প্রদায় তাদের নিজেদের উদ্ভাবিত ভিন্ন চিরায়ত চিকিৎসা পদ্ধতিতে স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা করেন, একে Ethno-medicine বলে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) প্রত্যেকটি চিরায়ত চিকিৎসা পদ্ধতিকে অত্যন্ত গুরুত্বসহকারে অধ্যয়নের, সংরক্ষণের তাগিদ দিয়ে জনজীবনের এদের প্রয়োজনীয়তার কথা ব্যক্ত করেছে। সম্প্রতিকালে Ethno-medicine-এর অনুসন্ধান এবং যথাযথভবে নথিভূক্ত করার জন্য WHO অত্যধিক গুরুত্ব আরোপ করেছে। বাংলাদেশ ব্যতীত আমাদের সকল প্রতিবেশি দেশে এসব বিষয়ের উপর রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে কর্মকান্ড পরিচালিত হচ্ছে। (চলবে)

 

মোখলেছুর রহমান
আহবায়ক, সম্মিলিত পর্যটন জোট এবং
সভাপতি, বাংলাদেশ ট্যুরিজম ফাউন্ডেশন

 

Leave a Reply