ঘূর্ণিঝড়ে ১১০০ কোটি টাকার ক্ষতি : ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী

Share on Facebook

ঘূর্ণিঝড় ‘আম্পান’ মারাত্মক আকারে আঘাত না হানলেও এর তাণ্ডব কিন্তু কম ছিল না। আম্পানের তাণ্ডবে দেশে এক হাজার ১০০ কোটি টাকা আর্থিক ক্ষয়-ক্ষতির প্রাথমিক ধারণা করেছে সরকার।

শক্তিশালী এই ঝড় কেটে যাওয়ার পর বৃহস্পতিবার সচিবালয় থেকে এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. এনামুর রহমান এই হিসাব দিয়ে বলেন, মোট ২৬টি জেলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

ঝড়ে সারা দেশে ১০ জন নিহত হওয়ার তথ্যও জানিয়েছেন তিনি, যদিও স্থানীয় সূত্রগুলো থেকে তার চেয়ে কয়েকজন বেশি মৃত্যুর তথ্য পাওয়া গেছে।

অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় আম্পান বুধবার দুপুরের পর ভারতের পশ্চিমবঙ্গ উপকূলে আঘাত হানে। পরে রাতে এ ঝড় বাংলাদেশের উপর দিয়ে বয়ে যায়।

ঝড়ের মধ্যে প্রবল বাতাসে বহু গাছপালা ভেঙে পড়ে, ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। জলোচ্ছ্বাসে ক্ষতিগ্রস্ত হয় উপকূলীয় এলাকার বাঁধ, ভেসে যায় মাছের ঘের।

প্রতিমন্ত্রী এনামুর বলেন, “মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ, পানিসম্পদ, কৃষি মন্ত্রণালয় এবং স্থানীয় সরকার বিভাগ ক্ষয়ক্ষতির প্রাথমিক হিসাব দিয়েছে। প্রায় এক হাজার ১০০ কোটি টাকা ক্ষতির প্রাথমিক হিসাব আমরা পেয়েছি।

‌অন্য যেসব মন্ত্রণালয় আছে, তারাও রিপোর্ট দিয়েছেন, তেমন কোনো ক্ষয়ক্ষতির বিবরণ তারা দেয়নি। সারা দেশে মোট ক্ষয়ক্ষতির তথ্য জানতে অন্তত সাত দিন সময় লাগবে বলে জানান এনামুর।

ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী বলেন, “স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদন অনুযায়ী জানতে পেরেছি ২৬টি জেলায় ১১০০ কিলোমিটার রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া ২০০টি ব্রিজ-কালভার্ট ও ২৩৩টি স্থানীয় সরকার কার্যালয় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

এগুলো বেশিরভাগ বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, খুলনা এলাকায়। এছাড়া অনেকগুলো টিউবয়েলের ক্ষতি হয়েছে।

এনামুর বলেন, কৃষি মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী বরিশাল ও খুলনা বিভাগে পাট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া আম, লিচু, মুগডালের ক্ষতি হয়েছে।

প্রায় ১৫০ কোটি টাকার আমের ক্ষতি হয়েছে। সাতক্ষীরা, রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে আমের ক্ষতি হয়েছে। ধানের তেমন ক্ষতি হয়নি।

তিনি বলেন, আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে, আমরা জেলা প্রশাসকদের নির্দেশনা দেব যে আমগুলোর ক্ষতি হয়েছে সেগুলো ত্রাণের টাকায় কিনে যাদের খাদ্য সহায়তা দিচ্ছি তাদের মধ্যে বিতরণ করতে। এতে আমচাষিরা লাভবান হবে, আমগুলোর সদ্ব্যবহার হবে।

পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় ১৫০ কিলোমিটার বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার তথ্য দিয়েছে। ঘূর্ণিঝড় আম্পানের প্রভাবে প্রবল জলোচ্ছ্বাসে সাতক্ষীরার শ্যামনগরে ভেঙে গেছে একটি বাঁধ। ছবি: তমজিদ মল্লিকঘূর্ণিঝড় আম্পানের প্রভাবে প্রবল জলোচ্ছ্বাসে সাতক্ষীরার শ্যামনগরে ভেঙে গেছে একটি বাঁধ।
ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী বলেন, ৮৪টি জায়গায় বাঁধের ফাটল ধরেছে বা ভেঙেছে। সেগুলোর জন্য তাদের ২৫০ থেকে ৩০০ কোটি টাকা বাজেট ধরা হয়েছে। শুক্রবার থেকে বাঁধগুলোর সংস্কার কাজ শুরু হবে।

এনামুর বলেন, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এবার যেহেতু আমরা পশুদের আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে যেতে পেরেছিলাম এজন্য গবাদিপশুর খুব বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।

কিন্তু মৎস্য চাষের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, বরগুনা, পটুয়াখালীতে প্রায় এক লাখ ৮০ হাজার ৫০০ চিংড়ি ঘের ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এক্ষেত্রে ৩২৫ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। প্রাণিসম্পদের ক্ষতি হয়েছে এক কোটি ৪০ লাখ টাকা।

ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ জানিয়েছে বিদ্যুৎ সরবরাহ না থাকায় অনেক জায়গায় তাদের নেটওয়ার্ক বিচ্ছিন্ন আছে।

তবে বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয় ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করবে বলেছে বলে জানান এনামুর।

তিনি বলেন, শিক্ষা খাতের খুব বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। পূর্ত মন্ত্রণালয়ের সামান্য ক্ষতি হয়েছে, খাদ্য মন্ত্রণালয়ের কোনো ক্ষতি হয়নি।

ক্ষতিগ্রস্ত ঘরবাড়ি ঠিক করার জন্য ঘূর্ণিঝড় উপদ্রুত প্রতিটি জেলায় ৫০০ বান্ডিল করে টিন ও ১৫ লাখ করে টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে বলে জানান ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী।

ত্রাণের জন্যও চাল ও নগদ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। ত্রাণের মজুদ পর্যাপ্ত আছে।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর জানান, তিনি শুক্রবার সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, পটুয়াখালীসহ ক্ষতিগ্রস্ত জেলাগুলো পরিদর্শনে যাবেন।

Leave a Reply