করোনা পরবর্তী আশার আলো অভ্যন্তরীণ পর্যটন

Share on Facebook

করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে গোটা বিশ্বেই বিধ্বস্ত পর্যটন খাত। পর্যটন সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, আগামী দুই এক মাসের মধ্যে এই ভাইরাস জনিত মহামারি সামাল দেওয়া গেলেও পর্যটন খাত ঘুরে দাঁড়াতে সময় লাগবে কমপক্ষে এক বছর। ইতিহাসের ভয়াবহতম এই দুঃসময়ে বাংলাদেশ পর্যটনে আশার আলো দেখাচ্ছে অভ্যন্তরীণ পর্যটন।

বৈশ্বিক এই সংকটে পৃথিবীর প্রত্যেক দেশেরই সকল ধরনের (ইনবাউন্ড- আউটবাউন্ড-ডোমেস্টিক) ভ্রমণ প্যাকেজ বুকিং বাতিল হয়েছে। ফলে ইতোমধ্যে ব্যাপক আর্থিক ক্ষতির মুখে থুবড়ে পরেছে পর্যটন শিল্প। এই সংকটকাল আরও দীর্ঘ হলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়বে।

করোনা পরবর্তী সময়ে ইনবাউন্ড-আউটবাউন্ড পর্যটন সহসাই পুরোদমে চালু করাটা খুব একটা সহজ হবে না বলে মনে করছেন পর্যটন বিশ্লেষকগণ। সুতরাং পর্যটন শিল্প ও শিল্প সংশ্লিষ্ট ব্যবসা-বাণিজ্য টিকিয়ে রাখতে জোর দিতে হবে অভ্যন্তরীণ পর্যটনে।

গত বছর ৩১ শে ডিসেম্বর চীনের উহান প্রদেশে প্রথম করোনা ভাইরাসের রোগী শনাক্ত হয়। তারপর ধীরে ধীরে এই সংক্রমণ ছড়িয়ে পরে বিশ্বব্যাপী। ফলে জানুয়ারি মাস থেকেই পর্যটন শিল্প ঝুঁকির মুখে পরে। এই ভাইরাসের সংক্রমণ ও সংক্রমণের আতংক দ্রুত ছড়িয়ে পড়ায় জানুয়ারি মাস থেকেই বাংলাদেশে বিদেশি পর্যটক আসা বন্ধ হয়ে যায়। চলমান পরিস্থিতিতে অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেরও পর্যটন খাতে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে ব্যাপকভাবে।

গত ৮ মার্চ বাংলাদেশে প্রথম করোনা ভাইরাস আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হলে ইনবাউন্ড-আউটবাউন্ডের পর অভ্যন্তরীণ পর্যটনেও ভাটা পরে। সময়ের ব্যবধানে সংক্রমণের হার বাড়তে থাকলে কক্সবাজার, কুয়াকাটা, রাঙ্গামাটি, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি,সাজেক, সেন্টমার্টিন, সুন্দরবনসহ সকল পর্যটন স্পটগুলোয় ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। নিবু নিবু করে জ্বলতে থাকা অভ্যন্তরীণ পর্যটনও স্তিমিত হয়ে পরে। ফলতঃ পর্যটনের ভরা মৌসুমেও পর্যটকশূন্য হয়ে পড়ে বাংলাদেশের সকল পর্যটন কেন্দ্রগুলো।

স্বাধীনতার পর দেশের পর্যটন উন্নয়নের জন্য পর্যটন করপোরেশন গঠন করেন বাংলাদেশের জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমান। এরপর থেকে ধীরে হলেও সরকারের উল্লেখযোগ্য কোনো ধরনের সুযোগ সুবিধা ছাড়াই বেসরকারি খাত নিজেদের তাগিদে পর্যটন শিল্পের বিকাশে কাজ করে যাচ্ছে। বর্তমানে করোনার প্রভাবে করুণ পরিস্থিতির মুখোমুখি বেসরকারি পর্যটন ব্যাবসায়ীগণ। বাংলাদেশের শুরু থেকে আজ পর্যন্ত এমন কঠিন সময়ের মুখোমুখি হয়নি পর্যটন খাত। অথচ গত অর্থবছরে দেশের মোট জিডিপির ৪.৩ শতাংশ আসে পর্যটন খাত থেকে এবং আশা করা হচ্ছিলো যে, ২০২৩ সাল নাগাদ যা গিয়ে দাঁড়াবে ৬.৮ শতাংশে।

বাংলাদেশের নদী,নালা,খাল,বিল, হাওর, টিলা, পাহাড়,সমুদ্র, ঝর্না, পাথর, চা বাগানসহ অসংখ্য পর্যটন গন্তব্যের সমন্বয়ে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমণ্ডিত এইসকল পর্যটন গন্তব্যগুলোতে বছরে প্রায় ১ কোটি পর্যটক ভ্রমণ করে। করোনা পরবর্তী সময়ে দেশের মৃতপ্রায় পর্যটন খাতকে চাঙা করতে অভ্যন্তরীণ পর্যটনেই ভালো সম্ভাবনা দেখছেন পর্যটন সংশ্লিষ্টরা। কারণ দেশের মোট ভ্রমণের মধ্যে শতকরা ৮৫ শতাংশ ভ্রমণ কার্যক্রমই সম্পন্ন হয় বিভিন্ন ট্যুর অপারেটরের প্যাকেজের মাধ্যমে। বাস বা বিমানের টিকিট থেকে শুরু করে হোটেল- মোটেল, গাইড,খাবার এবং দর্শনীয় স্থানসমুহ পরিদর্শনের ব্যবস্থা পর্যন্ত অন্তর্ভুক্ত করা থাকে প্যাকেজগুলোর মধ্যে।

বর্তমানে ব্যাপক আর্থিক ক্ষতির মুখে পরেছে পর্যটন খাত। শীঘ্রই উত্তরণ সম্ভব না হলে চিরতরে বন্ধ হয়ে যাওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে অনেক ট্যুর অপারেটর, ট্রাভেল এজেন্ট, হোটেল, মোটেল, রিসোর্ট, রেস্তোরাঁসহ পর্যটন শিল্প সংশ্লিষ্ট অনেক প্রতিষ্ঠানই। এই অবস্থায় পর্যটন শিল্পকে বাঁচানোর জন্য সামাজিক দুরত্ব রক্ষা করে ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত আকারে হলেও সকল রুটের ডোমেস্টিক ফ্লাইট এবং পর্যটন পর্যটনকেন্দ্রগুলো খুলে দেওয়া যায় কি-না ভেবে দেখা দরকার। যাতে করে করোনার প্রাদুর্ভাবে গভীর অনিশ্চয়তার মধ্যে পরে যাওয়া প্রায় ১৮ লাখ পর্যটন পেশাজীবি কিছুটা আশার আলো দেখতে পায়।

তামিম আহমেদ
জেনারেল সেক্রেটারি
বাংলাদেশ সোসাইটি ফর ট্যুরিজম ইনোভেশন- বিএসটিআই

Leave a Reply