উচ্চ শিক্ষায় জনপ্রিয়তা পাচ্ছে ট্যুরিজম এন্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট

Share on Facebook

পর্যটন শিল্পের সাথে ট্যুরিজম এন্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের সরাসরি যোগাযোগ। অনেকেই ট্যুরিজম এন্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বলতে শুধুমাত্র হোটেল ম্যানেজমেন্টকে বোঝেন হয়তো। প্রকৃতপক্ষে হোটেল ম্যানেজমেন্ট ছাড়াও এয়ারলাইনস ম্যানেজমেন্ট, ট্রাভেল এজেন্সি ও ট্যুর অপারেশন ম্যানেজমেন্ট, টিকিটং এন্ড রিজার্ভেশন্স, রিসোর্ট ম্যানেজমেন্ট, ডেস্টিনেশন ম্যানেজমেন্ট, কালিনারি, রেস্টুরেন্টে ম্যানেজমেন্ট, ফুড এন্ড বেভারেজ সার্ভিস, ফুড এন্ড বেভারেজ প্রডাকশন, হাউজকিপিং ম্যানেজমেন্ট, ফ্রন্ট অফিস অপারেশনসহ আরও নানা বিষয়গুলো কোর্স কারিকুলামের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত থাকে। ফলে ট্যুরিজম এন্ড হসপিটালিটি ম্যানেজম্যান্ট বিভাগ থেকে পড়ালেখা করার পর একজন শিক্ষার্থীর ক্যারিয়ার গঠন যতোটা সহজ অন্য বিভাগের ছাত্রদের জন্য ততোটাই কঠিন বলা চলে।

পর্যটন একটি বহুমাত্রিক শিল্প। বিশ্বের অনেক দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে পর্যটন খাত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে, তারমধ্যে ফ্রান্স, মিশর, গ্রীস, লেবানন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইতালি, স্পেন, চায়না ও থাইল্যান্ড অন্যতম।

সারা বিশ্বে একবছরে পর্যটন খাতে যে পরিমাণ অর্থ লেনদেন হয় তা বিশ্বের মোট জাতীয় উৎপাদনের প্রায় ৫%। বিগত অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপিতে পর্যটন খাতের অবদান ৪.৭ শতাংশ।

বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ পর্যটকের সংখ্যা প্রায় ১ কোটি এবং বিদেশি পর্যটকের সংখ্যা প্রায় ৫ লাখ। বাংলাদেশের পর্যটন খাতে ইতোমধ্যে প্রায় ১৮ লাখ কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে যা সময়ের সাথে সাথে আরও বাড়বে।

বাংলাদেশ সরকার পর্যটন শিল্প বিকাশে নানা পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। স্বাধীনতার অব্যহিত পরে ১৯৭২ সালে জাতির পিতা বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশন গঠন করেন। আর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পর্যটন শিল্পের গুরুত্ব অনুধাবন করে ২০১০ জাতীয় পর্যটন সংস্থা হিসেবে বাংলাদেশ পর্যটন বোর্ড গঠন করেন।

বর্তমান সরকার পর্যটনের সার্বিক উন্নয়নের লক্ষ্যে ১০ বছর মেয়াদি পর্যটন মহাপরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। পর্যটন শিল্প সম্প্রসারণের জন্য সরকার এলাকা ভিত্তিক বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্র চিহ্নিত করণ ও উন্নয়নের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে।

এছাড়াও বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে পর্যটক আকর্ষণ করার জন্য সরকার কক্সবাজারে তিনটি অত্যাধুনিক পর্যটন পার্ক তৈরির পরিকল্পনা করেছে। এই তিনটি ট্যুরিজম বা পর্যটন পার্ক হলো সাবরাং ট্যুরিজম পার্ক, নাফ ট্যুরিজম পার্ক এবং সোনাদিয়া ইকো ট্যুরিজম পার্ক। এই পার্কগুলোতে নতুন করে আরও প্রায় ৪০ হাজার কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ফলে পর্যটন শিল্প বিপ্লব এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র।

২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষমাত্রা অর্জনে পর্যটন শিল্পই বাংলাদেশের জন্য হয়ে উঠতে পারে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম।

বাংলাদেশের প্রায় ৭টি সরকারি, ১৪টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত ৭ টি কলেজ ও ইনস্টিটিউট থেকে পর্যটন বিষয়ে স্নাতক করার সুযোগ রয়েছে। এছাড়াও প্রায় ১৮ টি ট্যুরিজম ট্রেনিং ইনস্টিটিউট বিভিন্ন মেয়াদে ডিপ্লোমা কোর্স পরিচালনা করছে।

যেসকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ট্যুরিজম এন্ড হসপিটালিটি ম্যানেজম্যান্ট বিভাগ নিয়ে পড়াশোনা করা যায় সেগুলো হলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, গোপালগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে “ড্যাফোডিল ইন্সটিটিউট অব আইটি” বেশ সুনাম অর্জন করেছে। তরুন-তরুনীদের মধ্যে ভীষণ জনপ্রিয়তা পেয়েছে ড্যাফোডিল পরিবারের দুটি প্রতিষ্ঠান ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয় ও ড্যাফোডিল ইন্সটিটিউট অব আইটি” -এর ট্যুরিজম এন্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগ।

DIIT এর ট্যুরিজম এন্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের প্রভাষক, জনাব মোঃ সাইফুল্লার রাব্বী বলেন, ” আগামী দিনগুলোতে ট্যুরিজম হবে জনপ্রিয় একটি সাব্জেক্ট। অনেকেই পেশা নির্বাচন করতে পর্যটন শিল্পকে বেছে নেবে। বাংলাদেশে ১২ টি পাঁচ তারকা মানের হোটেল প্রোপার্টিজ আছে আগামিতে আরো ১০ টির বেশি আন্তর্জাতিক চেইন হোটেল আসছে। বাংলাদেশে ২৭ টি এয়ারলাইন্স কোম্পানি তাদের ব্যবসা পরিচালনা করছে। দেশে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক মিলিয়ে এখন বিমানবন্দরের সংখ্যা ৮ টি। পর্যটন শিল্পকে কেন্দ্র করে ব্যবসা পরিচালনা করছে আটাবের আওতাভুক্ত ৩৭০০ ট্রাভেল এজেন্সি, টোয়াবের আওতাভুক্ত ৫০০ ট্যুর অপারেটর ও IATA আওতাভুক্ত ৭০০ ট্রাভেল এজেন্সি। শুধুমাত্র দেশের মধ্যে নয় দেশের বাইরেও এই শিল্পে ক্যারিয়ার গঠন করার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে।

ট্যুরিজম এন্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিষয়টি বাংলাদেশে নতুন হলেও অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে অনবদ্য ভূমিকা পালন করে আসছে কয়েক বছর ধরে। ফলে শিক্ষার্থীদের মধ্যেও বিষয়টির প্রতি আকর্ষণ দিনে দিনে বেড়েই চলছে।

মুনিয়া রহমান
ট্যুরিজম এন্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগ
ড্যাফোডিল ইনিস্টিউট অব আইটি।

Leave a Reply