দেশে ২৪ ঘন্টায় করোনায় আক্রান্ত ৬৪১, মারা গেছেন ৮ জন

Share on Facebook

 

: দেশে গত ২৪ ঘন্টায় নতুন ৬৪১ জন করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। বর্তমানে এই ভাইরাসে আক্রান্ত ৭ হাজার ১০৩ জন। গত ২৪ ঘন্টায় ৮ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। এ পর্যন্ত মারা গেছেন ১৬৩ জন। আজ দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদফতরের করোনাভাইরাস সংক্রান্ত নিয়মিত অনলাইন হেলথ বুলেটিনে অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা এসব তথ্য জানান। গতকালের চেয়ে আজ আক্রান্ত ৯২ জন বেশি। গতকাল আক্রান্ত হয়েছিলেন ৫৪৯ জন। গতকালের চেয়ে আজ ১৪ দশমিক ৬৮ শতাংশ বেড়েছে। এ ছাড়া গত ২৪ ঘন্টায় দেশে আরও ১১ জন করোনামুক্ত হয়েছেন। এ নিয়ে ১৫০ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি গেছেন।

ডা. নাসিমা সুলতানা জানান, ‘করোনাভাইরাস শনাক্তে গত ২৪ ঘণ্টায় ৪ হাজার ৭০৬টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। আগের দিন নমুনা সংগ্রহ হয়েছিল ৪ হাজার ৩০৯টি।আমাদের নমুনা সংগ্রহ আগের দিনের তুলনায় ৯ দশমিক ২১ শতাংশ বেশি। গত ২৪ ঘন্টায় নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ৪ হাজার ৯৬৮টি। আগের দিন পরীক্ষা হয়েছিল ৪ হাজার ৩৩২টি। গতকালের চেয়ে নমুনা পরীক্ষা প্রায় ১৪ দশমিক ৬৮ শতাংশ বেশি। সব মিলিয়ে এ পর্যন্ত নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ৫৯ হাজার ৭০১টি।

তিনি জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় যে ৮ জন মারা গেছেন এর মধ্যে ৬ জন ঢাকার বাকি ২ জন ঢাকার বাইরের। মৃত ৮ জনের মধ্যে ৬ জন পুরুষ, ২ জন নারী। ৪ জনের বয়স ৬০ বছরের ঊর্ধ্বে। আর ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে ২ জন, ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে ২ জন।
এখন পর্যন্ত মারা যাওয়া ১৬৩ জনের মধ্যে বেশির ভাগ রোগী ঢাকা বিভাগের। এই বিভাগে এখন পর্যন্ত ১৩৭ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে তিনি জানান।
অতিরিক্ত মহাপরিচালক জানান, করোনা রোগীদের মধ্যে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়েছেন মাত্র ১ ভাগ আর বাড়িতে থাকে সুস্থ হয়েছেন শতকরা ৩ ভাগ রোগী। গতকাল পর্যন্ত বাড়িতে থেকে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়েছেন ৩৮ জন।
তিনি বলেন, করোনায় আক্রান্তদের মধ্যে যারা বাড়িতে রয়েছেন, তারা আমাদের হটলাইনের মাধ্যমে চিকিৎসা নেন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তাদের লক্ষণ ও উপসর্গগুলো মৃদু থাকে। তারা বাড়িতে চিকিৎসা নিয়েই সুস্থ হয়ে যাচ্ছেন। করোনার উপসর্গ যখন শেষ হয়ে যাবে, তার ১৪ দিন পর তার দ্বিতীয় নমুনা নেয়া হয়। তার সাতদিন পর আবার নমুনা নেয়া হয়। পরপর দুটি পরীক্ষায় করোনা নেগেটিভ আসলে আমরা তাদের সম্পূর্ণ সুস্থ বলি।

অতিরিক্ত মহাপরিচালক জানান, রাজধানীর ৩টি বেসরকারি হাসপাতালকে করোনাভাইরাসের নমুনা পরীক্ষার অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এগুলো হলো- এভারকেয়ার হাসপাতাল লিমিটেড (সাবেক অ্যাপোলো হাসপাতাল), স্কয়ার হাসপাতাল লিমিটেড ও ইউনাইটেড হাসপাতাল লিমিটেড। এখন থেকে এ হাসপাতালগুলোতে যেসব নমুনা পরীক্ষা করা হবে সেগুলো সরকারি ল্যাবরেটরির মোট নমুনার সঙ্গে যোগ করে প্রকাশ করা হবে। তবে তারা শুধু তাদের হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের সরকার নির্ধারিত ফি নিয়ে পরীক্ষা করাতে পারবেন।
অধ্যাপক নাসিমা সুলতানা বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশনে এসেছেন ১০৪ জন। মোট আইসোলেশনে আছেন ১ হাজার ৩০৪ জন। আর হোম ও প্রতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে আছেন ২ হাজার ৫৪৪ জন। এ পর্যন্ত কোয়ারেন্টাইন করা হয়েছে ১ লাখ ৮৪ হাজার ৩৩৭ জন। সারাদেশে আইসোলেশন শয্যা রয়েছে ৯ হাজার ৭৩৮টি। ঢাকার ভেতরে রয়েছে ৩ হাজার ৯৪৪টি। ঢাকা সিটির বাহিরে শয্যা রয়েছে ৫ হাজার ৬৯৪টি। আর দেশে আইসিইউ সংখ্যা রয়েছে ৩৪১টি, ডায়ালাসিস ইউনিট রয়েছে ১০২টি।

তিনি জানান, সারাদেশের ৬৪ জেলা এবং সেখানকার উপজেলায় প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে ৬০১টি প্রতিষ্ঠান। এর মাধ্যমে তাৎক্ষণিকভাবে ৩০ হাজার ৬৩৫ জনকে কোয়ারেন্টাইন সেবা দেয়া যাবে।
অধ্যাপক নাসিমা সুলতানা জানান, গত ২৪ ঘন্টায় ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রী (পিপিই) সংগ্রহ হয়েছে ৬০ হাজার ৪০২টি। বিতরণ হয়েছে ৪৩ হাজার ৫০৩টি। ৩ লাখ ৫৮ হাজার ৩২৪টি মজুদ রয়েছে।

তিনি জানান, গত ২৪ ঘন্টায় হটলাইন নম্বরে ৭৫ হাজার ১১৫ জনকে এবং এ পর্যন্ত প্রায় ৩৬ লাখ ১৬ হাজার ৬৯১ জনকে স্বাস্থ্য পরামর্শ দেয়া হয়েছে। এছাড়া মোবাইল ও ওয়েবসাইটে গত ২৪ ঘন্টায় ২৬ হাজার ৪৭ জন এবং এ পর্যন্ত ১৫ লাখ ৬২ হাজার ৮৬৫ জনকে স্বাস্থ্য পরামর্শ ও চিকিৎসা সেবা দেয়া হয়েছে।
তিনি জানান, করোনাভাইরাস চিকিৎসা বিষয়ে এ পর্যন্ত ১৫ হাজার ৪৯৮জন চিকিৎসক অনলাইনে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন। গত ২৪ ঘন্টায় প্রশিক্ষণ নিয়েছেন ১৮ জন। এদের মধ্যে ৪ হাজার ১৪ জন স্বাস্থ্য বাতায়ন ও আইইডিসিয়ার’র হটলাইনগুলোতে স্বেচ্ছাভিত্তিতে সপ্তাহে ৭ দিন ২৪ ঘন্টা জনগণকে চিকিৎসাসেবা ও পরামর্শ দিচ্ছেন।
ডা. নাসিমা সুলতানা জানান, দেশের বিমানবন্দর, স্থল, নৌ ও সমুদ্রবন্দর দিয়ে গত ২৪ ঘন্টায় ৬৫৭ জনসহ সর্বমোট বাংলাদেশে আগত ৬ লাখ ৭৬ হাজার ৪২৪ জনকে স্কিনিং করা হয়েছে।

করোনাভাইরাসের সংক্রমন ঠেকাতে সকলকে স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে মেনে চলতে তিনি সকলের প্রতি আহবান জানান।
করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে সবাইকে ঘরে থাকা, রমজানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, বেশি বেশি পানি ও তরল জাতীয় খাবার, ভিটামিন সি ও ডি সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া, টাটকা ফলমূল ও সবজি খাওয়াসহ শরীরকে ফিট রাখতে নিয়মিত হালকা ব্যায়াম এবং স্বাস্থ্য অধিদফতর ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ-নির্দেশনা মেনে চলার অনুরোধ জানানো হয়।

Leave a Reply