কোভিড-১৯: পুরো দেশকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা

Share on Facebook

দুই-তৃতীয়াংশ জেলায় নভেল করোনাভাইরাসের দেড় হাজারের বেশি রোগী পাওয়ার পর গোটা দেশকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করেছে সরকার। বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এক বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে, “যেহেতু বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় এই রোগের সংক্রমণ ঘটেছে। সেহেতু সংক্রামক রোগ (প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল) আইন, ২০১৮ এর ১১(১) ধারার ক্ষমতাবলে সমগ্র বাংলাদেশকে সংক্রমণের ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা ঘোষণা করা হল।” এর আগে ৪৩ জেলায় এই পর্যন্ত এক হাজার ৫৭২ জন কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত করার কথা জানিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় ১০ জনের মৃত্যু ঘটে করোনাভাইরাসে, এই সময়ে আক্রান্ত হন ৩৪১ জন। একদিনে এত বেশি নতুন রোগী আর মৃত্যু বাংলাদেশকে দেখতে হয়নি।
বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ঢাকায় ৫৪৬ জন, নারায়ণগঞ্জে ২১৪ জন, গাজীপুরে ৫৩ জন, চট্টগ্রামে ৩১ জন, নরসিংদীতে ২৮ জন, মুন্সিগঞ্জে ২১ জন, মাদারীপুরে ১৯ জন, কিশোরগঞ্জে ১৭ জন, কুমিল্লায় ১৪ জন; গাইবান্ধা ও জামালপুরে ১২ জন করে, বরিশালে ১০ জন; গোপালগঞ্জ ও টাঙ্গাইলে ৯ নয় করে করোনাভাইরাসের রোগী পাওয়া গেছে।
এছাড়া ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ৮ জন, দিনাজপুর ও ময়মনসিংহে ৭ জন করে; চাঁদপুর, নিলফামারী ও রাজবাড়ীতে ৬ জন করে; মানিকগঞ্জ ও শরিয়তপুরে ৫ জন করে; বরগুনা, নেত্রকোণা, পিরোজপুর ও রাজশাহীতে ৪ জন করে; ঝালকাঠি, শেরপুর ও ঠাকুরগাঁওয়ে ৩ জন করে; ফরিদপুর, কুরিগ্রাম, লালমনিরহাট, মৌলভীবাজার, পটুয়াখালী ও রংপুরে ২ জন করে এবং চুয়াডাঙ্গা, কক্সবাজার, হবিগঞ্জ, খুলনা, লক্ষ্মীপুর, নড়াইল, নোয়াখালী ও সুনামগঞ্জে একজন করে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছে।
ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে ইতোমধ্যে ৪৮টি জেলা লকডাউন করেছে প্রশাসন। এর বাইরেও কিছু উপজেলা এবং কিছু অঞ্চলে লকডাউন জারি করেছে স্থানীয় প্রশাসন। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব মোকাবেলায় সরকারের যে প্রতিষ্ঠানটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে, সেই আইইডিসিআরের চারজন কর্মী আক্রান্ত হয়েছেন; প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা কোয়ারেন্টিনে থাকলেও ভালো আছে বলে জানিয়েছেন।
বিজ্ঞপ্তিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ বলেন, “বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস মহামারী আকারে বিস্তার লাভ করেছে। এ কারণে লাখ লাখ মানুষ আক্রান্ত হয়েছে। মারা গেছে এক লাখের বেশি মানুষ। বাংলাদেশেরও বিভিন্ন জায়গায় এই রোগের সংক্রমণ ঘটেছে। ‘এখন পর্যন্ত এই রোগের কোনো প্রতিষেধক আবিষ্কার হয়নি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা অনুযায়ী এ রোগের একমাত্র প্রতিষেধক পরস্পর থেকে নির্দিষ্ট দূরত্বে অবস্থান করা।’ সংক্রমণ এড়াতে মানুষের ঘরে থাকার উপর জোর দিচ্ছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।‘অবশ্যই ঘরে অবস্থান করতে হবে। এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায় চলাচল কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হলো। সন্ধ্যা ৬টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত কেউ ঘরের বাইরে যেতে পারবে না।’ আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও হুঁশিয়ার করেছে স্বাস্থ্য বিভাগ।
করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব মোকাবেলায় সরকারের যে প্রতিষ্ঠানটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে, সেই আইইডিসিআরের চারজন কর্মী আক্রান্ত হয়েছেন; প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা কোয়ারেন্টিনে থাকলেও ভালো আছে বলে জানিয়েছেন।
চীনের উহান থেকে নভেল করোনাভাইরাস অন্য দেশে ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে নিয়মিত হালনাগাদ পরিস্থিতি জানিয়ে আসছিল রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান-আইইডিসিআর। বাংলাদেশে শুরুতে নভেল করোনাভাইরাস শনাক্তের পরীক্ষা শুধু মহাখালীর আইইডিসিআরেই হত; তার সর্বশেষ খবর নিয়ে সংবাদ সম্মেলনেও নিয়মিত আসতেন অধ্যাপক সেব্রিনা ফ্লোরা।
কোভিড-১৯ পরিস্থিতি নিয়ে এখন স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ব্রিফিং করছে, আর তাতে অধ্যাপক ফ্লোরার অনুপস্থিতি নিয়ে আলোচনার মধ্যে তার কোয়ারেন্টিনে থাকার খবর আসে গণমাধ্যমে। সেই সঙ্গে আইইডিসিআরের ছয়জন কর্মীর করোনাভাইরাসে আক্রান্তের খবরও আসে।
বিষয়টি নিশ্চিত হতে যোগাযোগ করা হলে আইইডিসিআরের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এ এস এম আলমগীর বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কথাটি সত্য নয়। আমাদের এখানে ছয়জন আক্রান্ত হয় নাই।”
পরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের জিজ্ঞাসায় বলেন, “(আইইডিসিআরের) চারজন আক্রান্ত হয়েছেন। তারা হাসপাতালে আছেন। তাদের কন্টাক্টে যারা ছিলেন, তারা কোয়ারেন্টিনে আছন।” আইইডিসিআরের পরিচালকের বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক ডা. নাসিমা সুলতানা বলেন, ‘মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা আক্রান্ত হননি। তবে তিনি কোয়ারেন্টিনে আছেন।’ বিষয়টি জানতে অধ্যাপক ডা. সেব্রিনা ফ্লোরাকে ফোন দিলেও তিনি ধরেননি। এসএমএস পাঠালে ফিরতি বার্তায় তিনি বলেন, “আমরা ভালো আছি।” বাংলাদেশে নভেল করোনাভাইরাসে বেশ কয়েকজন চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী আক্রান্ত হয়েছেন। সিলেটে এক চিকিৎসক একদিন আগেই মারা গেছেন। দেশে এপর্যন্ত ৬০ জনের মৃত্যু হয়েছে। আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৫৭২ জনে। রোগটি দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়ায় বৃহস্পতিবার পুরো বাংলাদেশকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

Leave a Reply