করোনায় রাহুগ্রস্ত বাংলাদেশের পর্যটন শিল্প

Share on Facebook

মাসুদুল হাসান জায়েদী: দ্বিতীয়
বিশ্বযুদ্ধের পর গোটা বিশ্ব আজ এমন এক সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে যার
বিরুদ্ধে এই প্রথম সমস্ত পৃথিবী একজোট হয়ে লড়াই করছে। এই সমস্যার নাম
করোনাভাইরাস। একটি মাত্র অদৃশ্য ভাইরাস স্তম্ভিত করে দিয়েছে সমগ্র মানব
জাতিকে। স্থবির হয়ে গেছে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। শ্লথ হয়ে গেছে
বিশ্ব অর্থনীতি।

প্রতিটি দেশের রাষ্ট্রপ্রধানরা জনগণকে নিয়ে বর্তমান ও
ভবিষ্যৎ মোকাবেলায় উদ্বিগ্ন। মহাপরাক্রমশালী দেশগুলোও হিমশিম খাচ্ছে এই
সমস্যা মোকাবেলায়। দিন দিন দীর্ঘ হচ্ছে মৃত্যুর মিছিল।

আর করোনা যুদ্ধ প্রথম যে ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে আঘাত হেনেছে
তা হলো পর্যটন। সারা বিশ্বে প্রথমত বন্ধ করা হয়েছে – এয়ারলাইন্স, তার
প্রভাবে বন্ধ হয়ে পড়েছে হোটেল, রিসোর্ট, ক্রুজ লাইন, রেস্টুরেন্ট ও ক্ষুদ্র
ব্যবসায়ী, ট্যুর অপারেটর ও ট্রাভেল অ্যাজেন্সি।

বিশ্বব্যাপী সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পর্যটন শিল্প।
বাংলাদেশের পর্যটনকেও রাহুগ্রস্থ করেছে এই মহামারি। করোনা পরিস্থিতি
মোকাবেলায় প্রথমেই বন্ধ করে দেয়া হয়েছে বেসামরিক বিমান চলাচল ও দেশের সকল
পর্যটন কেন্দ্র। এতে স্থবির হয়ে পরেছে পর্যটন ও এর সাথে সংশ্লিষ্ট সকল
কর্যক্রম। পর্যটনের সাথে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও কর্মচারীগণ উৎকণ্ঠা ও
হতাশায় দিন পার করছেন।

এমন অবস্থায় গত ৩০ মার্চ ২০২০ – এ প্রকাশিত প্রথম সারির
একটি দৈনিক পত্রিকার প্রতিবেদন “চাকরি হারানোর ঝুঁকিতে পর্যটন খাতের সাড়ে ৭
কোটি কর্মী” নজরে এলো। 

যেখানে প্রতিবেদক এক জায়গায় লিখেছেন “১৬ মার্চ এক সংবাদ
সম্মেলনে ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (টোয়াব) সভাপতি মো.
রাফেউজ্জামান জানিয়েছেন, পর্যটন মৌসুমে বাংলাদেশে সাড়ে চার কোটি থেকে পাঁচ
কোটি টাকা লেনদেন হয়।” 
ভরা মৌসুমে মাত্র সাড়ে চার পাঁচ কোটি?! কিভাবে সম্ভব।

নিঃসন্দেহে প্রতিবেদক তথ্য উপস্থাপনে ভুল করেছেন। কারন,
একটি টিভিতে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি ৫ হাজার কোটি টাকা ক্ষতির কথা বলেন।
আসলেই কি তাই? ৭ কোটি লোক যদি চাকরি হারায় আর এদের মাসিক গড় আয় যদি দশ
হাজার টাকাও হয় তবে মাসে ৭০ হাজার কোটি টাকা শুধু বেতন আর মজুরিতেই ব্যয়
হয়। কল্পনা করুন তো বছরে এই অংকের পরিমাণ কত দাঁড়াবে।

এর মানে ক্ষতির পরিমাণ আর সম্ভাব্য চাকরি হারানো লোকের
পরিমাণ পুরাটাই অনুমান নির্ভর। অবশ্য ৭ কোটি লোকের চাকরি হারানোর ব্যাপারটা
যদি সারা পৃথিবীর হিসেব হয় তবে তা মেনে নেওয়া যায়।

সে তুলনায় ২ এপ্রিল আরেকটি পত্রিকায় প্রকাশিত “করোনায়
হুমকিতে পর্যটন, সহায়তা চান উদ্যোক্তারা” প্রতিবেদনে আরেকটু বিস্তারিতভাবে
ক্ষতির পরিমাণ উল্লেখ করেছে। এই প্রতিবেদন থেকে পাই – 

* বাংলাদেশ বিমান ২৭০ কোটি টাকা ক্ষতির কথা বলেছে,
ফেব্রুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত শুধু বেসরকারি এয়ারলাইনসগুলো ব্যবসা হারাবে
৬০০ কোটি টাকার, চাকরি হারানোর আশঙ্কা রয়েছে দুই হাজার জনের।

* হোটেল, রিসোর্টে লোকসান হবে এক হাজার ৫০০ কোটি টাকার, যেখানে চাকরি হারানোর শঙ্কা রয়েছে এক লাখ মানুষের।

* তিন হাজার কোটি টাকার ব্যবসা হারাবে ট্রাভেল অ্যাজেন্টরা, চাকরি হারাতে পারেন ১৫ হাজার।

* ট্যুর অপারেটররা (ইনবাউন্ড, আউটবাউন্ড, ডমেস্টিক,
ওমরাহ) ব্যবসা হারাবেন চার হাজার পাঁচ কোটি টাকার, এ ছাড়া ৪১ হাজার মানুষ
হারাতে পারেন তাঁদের চাকরি।

* এছাড়া রেস্টুরেন্ট, কফি শপ, ফাস্টফুড, বার ও অন্যান্য
প্রতিষ্ঠান ব্যবসা হারাবে ৫০০ কোটি টাকার এবং চাকরি হারাতে পারে দেড় লাখ
মানুষ।

* পর্যটকবাহী যানবাহন (ট্যুরিস্ট ভেহিকল ও ভ্যাসেল) খাতে ব্যবসা হারাবে ৫৫ কোটি টাকার, চাকরি হারাতে পারেন এক হাজার ৫০০ জন।

এই হিসাবে তিন মাসে ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৯ হাজার ৯২৫ কোটি টাকা এবং চাকরি হারাবে প্রায় ২ লাখ ৯ হাজার ৫০০ জন লোক। 

প্রধানমন্ত্রীর কাছে ট্রিয়াবের পাঠানো ক্ষতিপূরণের আবেদন
পত্রে উল্লেখ করা হয়েছে,  শুধুমাত্র রিসোর্ট ইন্ডাস্ট্রিতেই বিনিয়োগের
পরিমাণ ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা এবং প্রায় সাড়ে তিন লাখ লোক প্রত্যক্ষভাবে এই
ইন্ডাস্ট্রিতে কর্মরত।

এখানে একটা কথা মনে রাখতে হবে এখানে সমগ্র পর্যটন বাজারের
একটি অংশই বিবেচিত হয়েছে কিন্তু ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক পর্যটন ব্যবসায়ীরা
এখানে উপেক্ষিত যাদের পরিমাণ নেহাত কম নয়।

একটা ভাবনা মাথায় উকি দিতেই পারে, আসলে বাংলাদেশের পর্যটন
শিল্পের বাজার কত বড়? জিডিপিতে পর্যটন খাতের অংশ কতটুকু? শতকরা কত? আসুন
আমরা একটু হাইপোথিসিস করি।

জিডিপিতে পর্যটনের অবদান নির্ণয়ের ক্ষেত্রে প্রকাশিত
জাতীয় আয় সংক্রান্ত তথ্য অথবা শ্রম বাজার পরিসংখ্যানে পর্যটন খাত অথবা এ
সংক্রান্ত চাকরির কারনে ব্যয়ের পরিমান বিবেচনা করা হয়। 

আগত পর্যটকের সংখ্যা তুলনা করা হয় সব ধরনের রপ্তানীকৃত
পন্য ও সেবার সাথে। আভ্যন্তরীণ পর্যটন খাতের ব্যয় তুলনা করা হয় জিডিপির
সাথে। পর্যটন খাতে ব্যাক্তি পর্যায়ের ব্যয়কে তুলনা করা হয় সরকারের মোট
ব্যায়ের সাথে। আভ্যন্তরীণ পর্যটন খাতের ব্যাবহারকে তুলনা করা হয় সর্বমোট
আভ্যন্তরীণ ব্যায়ের সাথে (অর্থাৎ সর্বমোট আভ্যন্তরীণ ব্যয় এবং সর্বমোট
রপ্তানির পরিমান)। জিডিপিতে বিনোদনমূলক পর্যটন খাতের অংশগ্রহনকে তুলনা করা
হয় মোট জিডিপির সাথে। জিডিপিতে ব্যাবসায়ীক পর্যটন খাতের অংশগ্রহণকে তুলনা
করা হয় সর্বমোট জিডিপির সাথে। পর্যটন খাতে বিনিয়োগকৃত পুঁজিকে তুলনা করা হয়
সকল স্থায়ী বিনিয়োগের সাথে।

World Travel and Tourism Council, London এর তথ্য মতে বাংলাদেশের জিডিপিতে পর্যটনের অবদান ৭৭,৩০০ কোটি টাকা। 

সত্যি বলতে বাংলাদেশের পর্যটনখাত পর্যালোচনা করার জন্য যে
তথ্য উপাত্ত প্রয়োজন তা সঠিক ভাবে পাওয়া যায় না।এ যাবত যে ক্ষয় ক্ষতির কথা
আলোচানা হয়েছে তা সবই অনুমান নির্ভর, প্রকৃত ক্ষতির পরিমাণ এর চেয়ে অনেক
বেশী। 

বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রনালয়ের সিনিয়র সচিব মহিবুল
হক বলেছেন “এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই করোনা ভাইরাসের কারণে বাংলাদেশে
নেতিবাচক প্রভাব পরবে।“ কিন্তু ক্ষয় ক্ষতির সঠিক পরিমাণ কেও বলতে পারছে না।
অন্যান্য পরিবহণের মত বিমানও পর্যটনের একটি অংশ অথচ হাস্যকরভাবে আমাদের
দেশে পর্যটন মন্ত্রণালয় বেসামরিক বিমানের অধীনে। 

পর্যটন ১০৯টি শিল্পকে সরাসরি প্রভাবিত করে, চালিত করে ও
প্রসারিত করে। একজন পর্যটকের আগমনে সেবাখাতে ১১জন মানুষের প্রত্যক্ষ
কর্মসংস্থান হয়। পরোক্ষভাবে কাজ পায় আরো ৩৩ জন। অর্থাৎ এক লাখ পর্যটকের
আগমনের সাথে ৪৪ লাখ লোকের কর্মসংস্থান জড়িত। 

কোন স্থানে যদি বছরে ১০ লাখ অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক
পর্যটক বিচরণ করে তবে ১ কোটি ১০ লাখ লোক প্রত্যক্ষ বা পরক্ষভাবে এর সুফল
ভোগ করে। বর্তমানে বাংলাদেশ সারা বিশ্বের দ্রুত বর্ধনশীল কয়েকটি পর্যটন
মার্কেটের মধ্যে অন্যতম। 

ওয়ার্ল্ড ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরিজম কাউন্সিলের (WTTC) এক
গবেষণা অনুযায়ি, ২০১৪ সালে পর্যটন খাতে ১ দশমিক ৩ মিলিয়ন কর্মসংস্থানের
সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে, যা দেশের মোট কর্মসংস্থানের ১ দশমিক ৮ শতাংশ। 

২০১৫ সালে এ খাতে কর্মসংস্থানের সুযোগ আরও ৪ শতাংশ
বৃদ্ধির প্রত্যাশা এবং ২০১৪ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত প্রতিবছর গড়ে ২
দশমিক ৭ শতাংশ বৃদ্ধির সম্ভাবনা আছে। সে হিসাবে ২০২৪ সালে মোট
কর্মসংস্থানের মধ্যে পর্যটন খাতের অবদান দাঁড়াবে ১ দশমিক ৯ শতাংশ। 

পর্যটনশিল্পের সঙ্গে জড়িত বিভিন্ন সেক্টরে যেমন-পরিবহন,
হোটেল, মোটেল, রেস্তোরাঁ, রিসোর্ট, এয়ারলাইনস ও অন্যান্য যোগাযোগের মাধ্যম
থেকে দেশ প্রতিবছর প্রচুর রাজস্ব আয় করে, যা অন্য যেকোনো বড় শিল্প থেকে
পাওয়া আয়ের চেয়ে কোন অংশে কম নয়।

বর্তমানে প্রতিবছর প্রায় ৯০ লাখ থেকে ১ কোটি পর্যটক দেশের
অভ্যন্তরে বিভিন্ন পর্যটনকেন্দ্রে ভ্রমণ করে থাকেন। ২০১২-১৩ সালের এ
সংখ্যা ছিল প্রায় ২৫-৩০ লাখ, যা ২০০০ সালের দিকে ছিল মাত্র ৩-৫ লাখ।
জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের ফলে সাধারণ মানুষের কাছে ভ্রমণপিপাসা অনেকাংশে
বৃদ্ধি পেয়েছে বিধায় আর্থসামাজিক উন্নয়ন ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টিতে
পর্যটন অনন্য অবদান রাখছে। 

বাংলাদেশে পর্যটন খাতে সরাসরি কর্মরত আছেন প্রায় ১৫ লাখ
মানুষ। এ ছাড়া পরোক্ষভাবে ২৩ লাখ এর সাথে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী আরও ২ লাখ ধরে
যোগ করলে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রায় ৪০ লাখ মানুষের কর্মসংস্থানের
ব্যবস্থা হয়েছে, যার আর্থিক মূল্য বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা।

২০১৭-১৮ অর্থ বছরে বাংলাদেশে ৩৪৮বিলিয়ন ডলারের জিডিপিতে
পর্যটনের অবদান ছিল ৪.৩ শতাংশ।অর্থাৎ সরকারি হিসাবেই প্রায় ১২৭৫ বিলিয়ন
টাকার বাজার এটা, প্রকৃত বাজারতো আরও বড়।

বিশ্ব পর্যটন সংস্থার প্রাক্কলন অনুযায়ি ২০৫০ সাল নাগাদ
বিশ্বের ৫১টি দেশের পর্যটকেরা বাংলাদেশে ভ্রমণ করবেন, যা মোট জিডিপির ১০
শতাংশ অবদান রাখবে। 

ধারণা করা হচ্ছে, ২০২৪ সালে মোট কর্মসংস্থানের ১ দশমিক ৯ শতাংশ হবে পর্যটনশিল্পের অবদান (WTTC)। 

পর্যটনশিল্পের অপার সম্ভাবনা কাজে লাগাতে পারলে বাংলাদেশ
হবে দক্ষিণ এশিয়ার রোল মডেল। করোনার আক্রমণের আগ পর্যন্ত এমন্ বিশ্লেষণ ছিল
বিশেষজ্ঞদের।

কিন্তু করোনার প্রাদুর্ভাবে চিত্র সম্পূর্ণ পালটে গেছে।
এয়ারলাইন্স, হোটেল, রিসোর্ট, ক্রুজলাইন, রেস্টুরেন্ট সব বন্ধ করাহয়েছে ফলে
ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, ট্যুর অপারেটর ও ট্রাভেল অ্যাজেন্সি বেকার হয়ে পড়েছে।

The World Travel and Tourism Council ধারণা করছে
বিশ্বব্যাপি করোনাভাইরাসছড়িয়ে পড়ায় ভ্রমণ ও পর্যটন শিল্পে বিশ্বব্যাপী ৫
কোটি লোক তাদের চাকরি হারাবে। এশিয়া সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হবে বলে
আশংকা করা হচ্ছে।

ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শেষ হয়ে গেলেও, শিল্পটি
পুনরুদ্ধারে ১০ থেকে ১২ মাস পর্যন্ত সময় নিতে পারে। The World Tourism
Forum Institute এর প্রধান বুলেট বাগসিবলেন করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে
বিশ্বব্যাপি পর্যটন শিল্প ১ ট্রিলিয়ন ডলারের ক্ষতির সম্মুখীন হতে যাচ্ছে।

তিনি আরও বিশ্বব্যাপি পর্যটন বাজার বছরে গড়ে ১.৭
ট্রিলিয়ন ডলার আয় করে এবংভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের ফলে ইতোমধ্যে অর্থনৈতিক
ক্ষতি ৬০০ মিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে যা বছর শেষ হতে হতে ১ ট্রিলিয়ন ডলারে
পৌছাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

বাংলাদেশও এই ক্ষতির বাইরে নয়। অন্যান্য শিল্প দুর্যোগ
কেটে যাওয়ার পরপরই উৎপাদন শুরু করতে অথবা গতিশীলতায় আসতে পারলেও তেমনটির
সম্ভাবনা নেই পর্যটন শিল্পে।পুনরায় পর্যটন শিল্পের গতি ফিরতে সময় লাগবে
বছরখানেকেরও বেশী।

বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পে হোটেল ও বিমান মিলে ১০ ভাগ
ব্যবসায়ী করপোরেট শ্রেণির, মাঝারি ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ৮০ ভাগ এবং ১০ ভাগ
প্রান্তিক শ্রেণির অন্তর্ভূক্ত। ফলে পর্যটনের সাথে মূলতঃ ৯০ ভাগ পেশাজীবী ও
কর্মী অত্যন্ত নাজুক অবস্থায় পতিত হয়েছে, যা অন্য যে কোন উৎপাদনধর্মী এবং
সেবাধর্মী শিল্পের চাইতে আলাদা।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী করোনা আক্রান্ত বাংলাদেশের
অর্থনীতির জন্য ৭২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকার যে প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন
তা বিশেষভাবে আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। এই ঘোষণা থেকে এ কথা পরিস্কার
হয়েছে যে, তিনি বাংলাদেশের শিল্প-বাণিজ্য-অর্থনীতি নিয়ে বিশেষ উদ্বিগ্ন এবং
তা থেকে উদ্ধার করার জন্য সদা সচেষ্ট।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়ে
বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পকে বাঁচিয়ে তোলার উদ্দেশ্যে আগামী জুন ২০২১ পর্যন্ত
প্রণোদনা ঘোষণা করতে বাংলাদেশ ট্যুরিজম ফাউন্ডেশন ও বাংলাদেশ ট্যুরিজম
এক্সপ্লোরার্স অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষে থেকে ৫টি উপায় তুলে ধরে তা বাস্তবায়নের
দাবি তোলা হয়েছে।

উপায়গুলো হলো:

ক) বাংলাদেশের জিডিপিতে পর্যটনের অবদানের অন্যুন ২৫ ভাগ
অর্থাৎ ১৯ হাজার ৩০০ কোটি টাকার বিশেষ প্রণোদনা ঘোষণা করতে হবে। এই
প্রণোদনার টাকা বাস্তব সম্মত নীতিমালার আওতায় এককালীন অনুদান,
রিফাইন্যান্সিং ঋণ ও রেয়াতি সুদ হারে ঋণ প্রদান করতে হবে।

খ) অনুদান ও ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে প্রান্তিক শ্রেণির
ব্যবসায়ী, মাঝারি ওক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও করপোরেট ব্যবসায়ী এই ধারাক্রম মেনে
চলতে হবে।

গ) ক্ষতিগ্রস্থ প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদেরকে রক্ষার জন্য
এপ্রিল ২০২০ মাসের মধ্যে অনুদানের অর্থ পর্যটন ব্যবসায়ীদের হাতে জরুরি
ভিত্তিতে পৌঁছাতে হবে।
ঘ) বিতরণকৃত সকল ঋণ সরল সুদে প্রদান ও দীর্ঘ মেয়াদি পরিশোধ কিস্তি নির্ধারণ করতে হবে।

ঙ) ২০১৯-২০২০ এবং ২০২০-২০২১ করবর্ষে পর্যটনের সকল উপখাতে ১০ শতাংশ হারে ট্যাক্স হ্রাস করতে হবে।

পর্যটন শিল্পকে এখন আর হাল্কাভাবে নেওয়ার অবকাশ
নেই।পর্যটন এমন একটি ক্ষেত্র যেখানে কোন পণ্য রপ্তানি করা ছাড়াই বৈদেশিক
মুদ্রা দেশে অর্জিত হয় সেই সাথে দেশের বেকারত্ব ঘোচাতে এই শিল্পের উপর
নির্ভর করা ছাড়া অন্য কোন উপায় নেই। 

এর জন্য প্রয়োজন শুধু সুষ্ঠ ব্যবস্থাপনা এবং সুদূরপ্রসারী
পরিকল্পনা। এই খাতটিকে টিকিয়ে রাখতে হলে সরকারের এখনই সুদৃষ্টি প্রয়োজন
এবং বর্তমান সংকট মোকাবেলায় এ খাতে প্রণোদনা দেওয়ার ব্যবস্থা করা জরুরী বলে
মনে করছে বাংলাদেশ ট্যুরিজম এক্সপ্লোরারস এসোসিয়েশন (বিটিইএ)।

লেখকঃ ভাইস চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ ট্যুরিজম এক্সপ্লোরার্স অ্যাসোসিয়েশন

Leave a Reply