করোনাভাইরাসে আক্রান্ত চীনা পর্যটন

Share on Facebook

মহামারি ঠেকাতে
বিভিন্ন দেশের স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের তুমুল লড়াইয়ের মধ্যে চীনসহ ১২ দেশে নতুন এ
করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত
আক্রান্তদের এই সংখ্যা ছাড়িয়ে গেছে ১,৩০০।

মাত্র একদিনের
ব্যবধানেই মৃতের সংখ্যাও ২৬ থেকে বেড়ে ৪১ হয়েছে বলে চীনের কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে
বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে। নিহতদের মধ্যে ভাইরাসটির বিরুদ্ধে লড়াইরত এক
চিকিৎসকও আছেন বলে স্থানীয় গণমাধ্যমগুলো বলছে।

আক্রান্ত ব্যক্তিকে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে দ্রুত

হুবেইর উহানে
জিনহুয়া হাসপাতালের ৬২ বছর বয়সী চিকিৎসক লিয়াং ‍উডং- এর মৃত্যুর খবর জানিয়ে টুইট
করেছে চীনের গ্লোবাল টেলিভিশন নেটওয়ার্ক। উহানেই প্রাণঘাতী এ ভাইরাসটির প্রথম দেখা
মেলে। সংক্রমণের বিস্তৃতি ঠেকাতে গত কয়েকদিন ধরে শহরটিকে কার্যত বিচ্ছিন্ন করে
রাখা হয়েছে।

চীনে ভাইরাসটিতে
আক্রান্তের সংখ্যা শনিবার পর্যন্ত এক হাজার ২৮৭তে পৌঁছেছে বলে দেশটির ন্যাশনাল
হেলথ কমিশন নিশ্চিত করেছে। এর বাইরে থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, সিঙ্গাপুর,
জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, তাইওয়ান,
নেপাল, ফ্রান্স, মালয়েশিয়া,
যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়ায়ও আক্রান্ত ব্যক্তির সন্ধান পাওয়া গেছে।

উহানের একটি হাসপাতাল

উহান থেকে ১৯
জানুয়ারি আসা এক চীনা নাগরিকের শরীরে করোনাভাইরাসটির উপস্থিতি পাওয়ার কথা নিশ্চিত
করেছে অস্ট্রেলিয়া। মেলবোর্নের হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বয়স ৫০ এর ঘরে থাকা ওই
ব্যক্তির পরিস্থিতি স্থিতিশীল বলেও জানিয়েছে তারা।

“চীনের
বাইরেও যে পরিমাণ আক্রান্তের খোঁজ মিলছে, আর উহান থেকে
অস্ট্রেলিয়ায় আসা মানুষের সংখ্যা বিবেচনায় এটা অসম্ভব নয় যে আমরা এ ধরনের আরও কিছু
আক্রান্ত ব্যক্তির খোঁজ পাবো,” সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন
অস্ট্রেলিয়ার প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রেন্ডন মারফি।

উহানের এয়ারপোর্ট

শুক্রবার
সন্ধ্যায় ফরাসী কর্তৃপক্ষ ইউরোপে নতুন করোনাভাইরাসটিতে আক্রান্ত প্রথম ব্যক্তির
উপস্থিতির খবর নিশ্চিত করে।

অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন জানিয়েছে, তারা প্রাণঘাতী এ ভাইরাসে আক্রান্ত সন্দেহে ৬৩ জনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাচ্ছেন; এর মধ্যে দুই ব্যক্তির শরীরে ভাইরাসটির উপস্থিতি নিশ্চিত হওয়া গেছে। আক্রান্ত দুই ব্যক্তিই উহান থেকে যুক্তরাষ্ট্রে এসেছিলেন, বলেছে তারা।

একটি পর্যটন কেন্দ্র

এছাড়াও, চীনে
পড়তে যাওয়া এক শিক্ষার্থীর দেহে ভাইরাসটির উপস্থিতি পাওয়ার কথা জানিয়েছে নেপাল। শুক্রবার
এক ঘোষণায় দেশটির স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ একথা জানায়।

শনিবার এক সংবাদ
সম্মেলনে মালয়েশীয় কর্তৃপক্ষও তিন নাগরিকের শরীরে ভাইরাসটির উপস্থিতি সনাক্তের
তথ্য দেয় বলে জানিয়েছে স্ট্রেইট টাইমস।

গত সপ্তাহে বিশ্ব
স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) নতুন এ করোনাভাইরাসটির কারণে চীনে জরুরি পরিস্থিতি
সৃষ্টি হয়েছে বলে ঘোষণা করলেও, এখনি আন্তর্জাতিকভাবে উদ্বেগজনক পরিস্থিতি সৃষ্টি করেনি বলে
জানিয়েছিল।

কিভাবে সংক্রমন
হচ্ছে এই ভাইরাস, তা সম্পর্কে নিশ্চিত কোন জবাব এখন পর্যন্ত খুঁজে পাননি গবেষকরা। তাই
দ্রুত ছড়িয়ে পড়া এই ভাইরাসকে ঠেকাতে ভাইরাস সংক্রামিত অঞ্চলকে এড়িয়ে যাওয়ার
পরামর্শ দিচ্ছেন তারা। ফলে হুমকির মুখে পড়তে যাচ্ছে দেশগুলোর পর্যটন শিল্পও।

শপিংমল

নতুন
চান্দ্রবর্ষ উদযাপন সামনে রেখে ঘরমুখী মানুষের চলাচল নিয়ন্ত্রণে শুক্রবার থেকে চীন
১০টি শহরে গণপরিবহন ও সংশ্লিষ্ট এলাকাগুলোর মন্দির বন্ধ করে দিয়েছে। পর্যটকদের
অন্যতম গন্তব্য ‘নিষিদ্ধ
শহর’ ও গ্রেট ওয়ালের একটি অংশও বন্ধ রাখা হয়েছে বলে রয়টার্স
জানিয়েছে।

চীনা নববর্ষের
সপ্তাহব্যাপী ছুটির মধ্যে দেশটির কোটি কোটি মানুষ একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে
যাতায়াত করলে ভাইরাসটি ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। গণপরিবহন
বন্ধ করায় উহান ও পার্শ্ববর্তী হুয়াংগ্যাং শহরের অন্তত ২ কোটি কার্যত আটকা পড়েছে।
উহানের সঙ্গে বিমান ও রেল যোগাযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

উহানের সর্বত্র ‘ফেইসমাস্ক’ পরিধান বাধ্যতামূলক করা হয়েছে; কয়েক সপ্তাহের ব্যবধানে
শহরটি একটি ভূতুড়ে নগরীতে পরিণত হয়েছে বলে বাসিন্দারা বিবিসিকে জানিয়েছেন। বেইজিংয়ে
সব বড় উৎসব ও মন্দিরের মধ্যে মেলা নিষিদ্ধ এবং চলচ্চিত্র মুক্তি স্থগিত করা হয়েছে।
শনিবার থেকে বন্ধ হচ্ছে সাংহাইয়ের ডিজনিল্যান্ডও।

Leave a Reply