একটি এডভেনচারাস আমিয়াক্ষুম ও নাফাক্ষুম যাবার গল্প

Share on Facebook

বঙ্গোপসাগর থেকে বুলবুলের আগমনী বার্তা নিয়ে যখন থানচি গুড়িগুড়ি বৃষ্টিতে আক্রান্ত, আমরা কজন তখন আনিয়াক্ষুম ও নাফাক্ষুম যাবার জন্য থানচি দিয়ে এক ধরনের বিশেষ বোটে যাত্রা শুরু করেছি। সময় তখন বিকেল সাড়ে ৩টা। আমাদেরকে পদ্ম ঝিরির মুখে বোট থেকে নামতে বলা হলো। ৬ জন নারিও দুজন গাইডসহ আমরা ১৬ জন বিকল পাঁচটা সেখান থেকে ঝিরি পথে যাত্রা শুরু করি। বলা হলো কম পক্ষে ৬ ঘন্টার পথ হাটতে হবে। বৃষ্টির মধ্যে দুই পাহাড়ের মাঝ দিয়ে গান-গল্প বলতে বলতে এবং প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখতে দেখতে কখন যে অন্ধকার মেনে এলো টেরই পেলাম না। এরপর সেই অবস্থায় টর্চ জ্বেলে রাতের অন্ধকারে চারপাশে সুনসান নীরবতার মাঝে পাথর আর সবুজে ঘেরা পাহাড়ের মধ্য দিয়ে প্রবল বেগে নেমে আসা জলধারার শব্দ ছাড়া আমাদের আর কোন দিকে মন যাচ্ছিল না।

একে একে পিচ্ছিল ও বিপদজনক অথচ এডভেনচেরাস পথ পার হতে লাগলাম। এর মধ্যে কেউ কেউ ক্লান্ত ও ভীত হয়ে পরলেন। যা হোক তিনটা টিমে ভাগ হয়ে আমাদের মধ্যে একটি টিম ১টায় থুইছা পাড়া পৌছলো। আর দ্বিতীয় টিমটা পৌছলো ৪টায়। তবে তৃতীয় টিম পিচ্ছিল ও সরু পথে রাতে আসতে সাহস পেলো না। তারা এলেন সকালে। এরর মধ্যে অনেকের অবস্থা খারাপ হয়ে গেলো। যারা অসুস্থ ছিলেন তাদেরকে বাদ দিয়ে আমরা যাযাত্রা শুরু করলাম । এ দিন সকালে ১০ জনের একটা টিম দেবতা পাহাড় দিয়ে বেলাখুম ও আমিয়াখুম দেখতে রওয়ানা দিলাম।

এখানে দেবতা পাহাড় বেয়ে আমিয়াখুম ঝর্ণা এতোটাই খারা এবং পিচ্ছিল যে ১০-১২টা দল চুড়া থেকে ফিরে গেলো। নিচে আর নামতে সাহস পেলো না বৃষ্টি শুরু হবার কারণে। তবে আমরা কষ্ট করে ভয় কে জয় করে অনেক খারা পথ বেয়ে নীচে নেমে দেখি সৃষ্টিকর্তা আমাদের দেশে কি সুন্দর সুন্দর দৃশ্য দিয়ে সাজিয়ে রেখেছেন। দুধসাদা রঙের ফেনা ছড়িয়ে তা বয়ে চলেছে পাথরের গা বেয়ে। নিমেষেই ভিজিয়ে দিচ্ছে পাশের পাথুরে চাতাল। সঙ্গে অবিরাম চলছে জলধারার পতন আর প্রবাহের শব্দতরঙ্গ। লোকালয় ছেড়ে গহিন পাহাড়ের মাঝে এমন দৃশ্য—একবার দেখলে মনের গভীরে গেঁথে থাকবে আজীবন। প্রকৃতি এমন অপার সৌন্দর্যের ডালা সাজিয়ে বসে আছে আমাদের এই সবুজ শ্যামল বাংলায় – বান্দরবানে।

পাহাড়ের বুক চিরে শত সহস্র পাথর পেরিয়ে পানির স্রোত যেন ছুটে চলেছে অজানা গন্তব্যের দিয়ে। এরপর সেখান থেকে ফিরে পরের দিন আবার জিন্না পাড়া দিয়ে ঝিড়ি বেয়ে যাত্র শুরু হলো নাফাখুমের দিকে। দীর্ঘ পথ পারি দিয়ে সেখানে পৌছা হলো।

যেই নাফাখুম ঝর্ণা দেখলাম, সব কষ্ট দূর হয়ে গেলো। ঝর্ণায় ঝাপ দিয়ে আরো মজা পেলাম। অবশেষে রেমাক্রী উদ্দেশ্যে আমাদের যাত্রা শুরু হলো। তবে রেমাক্রী যেতে ঝিড়ি হাটার রাস্তা তুলনামুলক সহজ ও সুন্দর মনে হলো আমার কাছে। প্রাকৃতির সৌন্দর্য্য, সবুজের সমারোহ এবং মেঘে ছূঁয়ে দেখার ইচ্ছে পুরণে যত টুকু কষ্ট হয়েছে , তার চেয়ে অনেক বেশি মজা হয়েছে। জিডিএম টিমের এবারের দলনেতা পলাশ।

Leave a Reply