ধর্মীয় পর্যটনের অন্যতম এক উপলক্ষ্য: বড়দিন

Share on Facebook

পৃথিবীজুড়ে খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীরা জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজনে পালন করে তাদের পুণ্যময় দিন বড়দিনকে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আয়োজন করা হয় বর্ণিল সাঁজসজ্জার। বড়দিন উপলক্ষে রঙিন সাঁজে অপরূপ হয়ে ওঠে গোটা শহর আর আকৃষ্ট করে পর্যটকদের। অপরূপ এসব সাঁজে মুগ্ধ হবার জন্য এই সময়েই ভ্রমণ করেন হাজারো পর্যটক। পর্যটনের অন্যতম এক উপলক্ষ্য হয়ে ওঠে তাই এই বড়দিন। এই বছর বিভিন্ন দেশে আয়োজন করা রূপসজ্জার কথা নিয়ে পর্যটনিয়ার আজকের আয়োজন-

যুক্তরাষ্ট্র
যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় সব শহরেই আড়ম্বরের সাথে পালিত হয় বড়দিন। বর্ণিল সাঁজসজ্জায় অসাধারণ রঙে রঙিন হয়ে ওঠে এসময়ে সব শহর। এর মাঝেই, নিউইয়র্ক, লাসভেগাস, অরল্যান্ডো, স্যানদিয়াগো, লেক তাহোই, শিকাগো ও আলাস্কার আড়ম্বরই বেশি আলোচিত হয়েছে এবছরে। প্রতি বছরই এসব আলোকসজ্জা দেখবার জন্য বিভিন্ন দেশ থেকে পর্যটকেরা ছুটে আসেন শহরগুলিতে। যুক্তরাষ্ট্রের সংস্কৃতিতে শিশুরা সান্তাক্লজের জন্য ক্রিসমাসের আগের রাতে চকোলেট কুকি ও দুধ রেখে দেয়। কথিত আছে, কুকি পেয়ে খুশিতে ক্রিসমাসের সকালে সান্তাক্লজ তাদের জন্য উপহার নিয়ে আসবে।

লন্ডন

লন্ডন, ইংল্যান্ড
প্রায় ৫৪ শতাংশ খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের বাস ইংল্যান্ডের মহা আড়ম্বর ও জাঁকজমকের সাথে পালন করা হয় বড়দিন। বিছানার কিনারে রঙবেরঙের মোজা ঝুলানোর ঐতিহ্য রয়েছে এখানে। প্রতি বছরই নতুন নতুন সাঁজে সাঁজানো হয় বিভিন্ন শহরকে। এ বছর লন্ডন শহরের পথে পথে আলোকসজ্জা করা হয়েছে অ্যাঞ্জেলের আদলে বানানো লাইটিং দিয়ে। প্রতি বছরই এসব আলোকসজ্জা দেখবার জন্য বিভিন্ন দেশ থেকে পর্যটকেরা ছুটে আসেন এখানে।

প্যারিস

প্যারিস, ফ্রান্স
বিশ্বের সবচাইতে জনপ্রিয় পর্যটককেন্দ্র প্যারিসের আলোকসজ্জার রূপে
মোহিত হয়ে পর্কটকরা ছুটে যান সেখানে। এ বছরে সেন্ট জার্মেইন লুক্সেরোয়া গির্জায়
বড়দিনের মধ্যরাতে অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন বিশপ ফিলিপ মার্সেট। ২০০ বছরেরও বেশি
সময়ের ইতিহাসে এবারই প্রথম শহরটির নটরডেম ক্যাথেড্রালে বড়দিন উদযাপন করা হয়নি। গত
এপ্রিলে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে এটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

এথেন্স

এথেন্স, গ্রীস
৯৮ শতাংশ খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের দেশ গ্রিসে বড়দিন পালিত হয় আড়ম্বর ও জাঁকজমকের সাথে। গ্রীক সংস্কৃতিতে ১২দিন পর্যন্ত ক্রিসমাসের আগুন জ্বালিয়ে রাখবার ঐতিহ্য রয়েছে। এছাড়াও বড়দিন উপলক্ষে উপোস থাকবার রীতিও আছে এখানে। গ্রীকরা পরিবারের সকলের সাথে মিলিত হয়ে একসাথে পালন করে বড়দিন। প্রতি বছরই এথেন্সের আলোকসজ্জা দেখবার জন্য বিভিন্ন দেশ থেকে পর্যটকেরা ছুটে আসেন এখানে।

পোল্যান্ড

অরসো, পোল্যান্ড
৮৫ শতাংশ খ্রিস্টানদের ধর্মীয় উপলক্ষ বড়দিনের জন্য পোল্যান্ডের বিভিন্ন শহর ও বন্দর
সেঁজে ওঠে রঙিন আলোতে। বড়দিনে পোলিশদের মাঝে উপহারের আদান-প্রদানের প্রচলন আছে। কার্প
মাছের খাবার তাদের এই দিনের তালিকায় অবশ্য থাকে। রান্না করার আগে জীবিত কার্প
মাছটিকে বড়দিনের কয়েকদিন আগে থেকে বাথটাবে রেখে দিতে হয়।

সিডনি, অস্ট্রেলিয়া
সাধারনত, অস্ট্রেলিয়াতে বড়দিন মানেই দল বেঁধে সমুদ্র সৈকতে যেয়ে বারবিকিউ।
এভাবেই প্রতিবার আয়োজিত হয় বড়দিন সেখানে। এছাড়াও, আলোকসজ্জা ও আতশবাজির পুড়াবার
আয়োজন করা হয় মহা আড়ম্বরের সাথে। তবে এই বছরে ব্যাতিক্রম ঘটেছে এর। চরম দাবানলের
মধ্যেও বড়দিন উপলক্ষে হাওয়াই যেতে ছুটি নেওয়ায় সমালোচিত হয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার
প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন। এরই ধারাবাহিকতায় সিডনিতে তার একটি ম্যুরাল দেখা যায়।

জাগরেব

জাগরেব, ক্রোয়েশিয়া
৮৬ শতাংশ খ্রিস্টানের দেশ ক্রোয়েশিয়ায় বড়দিনের উৎসবের সময়ে হরেক রঙের ফানুস উড়াবার ঐতিহ্য আছে। আশা, শান্তি, আনন্দ ও ভালোবাসা, এই ৪ রঙের প্রতীকে উড়ানো হয় এসব ফানুস। ক্রোয়েশিয়ানরা পরিবার ও আপনজনেরা সকলে একত্রে মিলে বড়দিনের রাতে উড়ায় এসব ফানুস। এ সময়ে পুরো আকাশজুড়ে থাকে ফানুস। অসাধারন এই দৃশ্য অবলোকন করবার জন্য প্রতি বছরই বিভিন্ন দেশ থেকে পর্যটকেরা ছুটে আসেন এখানে।

বুয়েন্স আয়ার্স

বুয়েন্স আয়ার্স,
আর্জেন্টিনা

আর্জেন্টিনায় খ্রিস্টান আছে ৭৬ শতাংশ। আতশবাজি পুড়াবার মাধ্যমে বড়দিনের পার্টি করে
আর্জেন্টিনার মানুষ। এছাড়াও হয় সবাই মিলে একসাথে সময় কাটানো ও খাওয়াদাওয়া।
আতশবাজির অংশটার জন্য আর্জেন্টিনার বুয়েন্স আয়ার্সের জনপ্রিয়তা বেশ আছে পর্যটক
মহলে।

রিও ডি জেনেরিও

রিও ডি জেনেরিও, ব্রাজিল
৯০ শতাংশ খ্রিস্টানের দেশ ব্রাজিল ধর্ম অন্তঃপ্রান হিসেবেই বেশি পরিচিত। হরেক রকমের খাবারের তালিকায় ভরা থাকে তাদের বড়দিনের ডিনার। এছাড়াও, ক্রিসমাস উপলক্ষে দুইবার বেতন পায় ব্রাজিলিয়ানরা। এতে করে উৎসবের দিন আনন্দের মাত্রা বেড়ে যায় বহুগুণে। এছাড়াও রিও ডি জেনেরিওতে আয়োজন করা হয় আতশবাজি পুড়াবার জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানের।

আবুধাবি, সংযুক্ত আরব আমিরাত
মোট জনসংখ্যার ১৩ শতাংশ খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের জন্য আড়ম্বরের সাথে আয়োজন করা হয় বড়দিনের উৎসবের। সংযুক্ত আরব আমিরাতে ক্যাথলিক সম্প্রদায়ের ৫ শতাংশের ওপরে ফিলিপিনো।

বেথলেহেম, ফিলিস্তিন
বাইবেল অনুযায়ী, যিশুখ্রিষ্টের জন্ম হয়েছিল বেথলেহেমে। বড়দিনের প্রথম প্রহরে ২৪ ডিসেম্বর দিবাগত রাতে পশ্চিম তীরে প্রার্থনার জন্য জড়ো হয় সাধারণ মানুষ। এছাড়াও, তারা উপবাস থাকে বড়দিন উপলক্ষে।

কলম্বো, শ্রীলঙ্কা
শ্রীলঙ্কার
জনসংখ্যার প্রায় ১০ শতাংশ খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী। আমেরিকা কিংবা ইউরোপের মতো
জাঁকজমকপূর্ণ না হলেও এখানেও পালিত হয় বড়দিন।
ছবিতে সেন্ট অ্যান্থনি’স চার্চে পরীর সাজে শ্রীলঙ্কান এক ক্যাথলিক শিশু। গত এপ্রিলে ইস্টার
সানডেতে এই গির্জায় আত্মঘাতী বোমা হামলায় ৫৪ জন প্রাণ হারান।

বাংলাদেশ

বাংলাদেশ
যিশু
খ্রিস্টের জন্মদিন উপলক্ষে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশের মানুষ বুধবার
শুভ বড়দিন উপযাপন করছে। রঙিন বাতি
দিয়ে ক্রিসমাস ট্রি সাজানো,
বিশেষ প্রার্থনা, শিশুদের মাঝে উপহার বিতরণ
এবং স্বজনদের সাথে সাক্ষাৎ এ উৎসবের মূল অনুষঙ্গ। গির্জায় প্রার্থনা শুরু ও শেষের
পর গাওয়া হয় বড়দিনের বিশেষ গান ও বন্দনা সঙ্গীত। তবে কেবলমাত্র ০.৫ শতাংশ খ্রিস্টান জনসংখ্যা থাকবার ফলে আড়ম্বর তেমন থাকে না
এখানে। দেশের বিভিন্ন পাঁচতারকা হোটেলে রাখা হয় বড়দিন উপলক্ষে বিভিন্ন আয়োজন।

Leave a Reply