ইউরোপের ভিসা পাওয়া অসম্ভব কিছু নয়

Share on Facebook

২০০৯ সাল। ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্যুরিজম এন্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগ থেকে পড়ালেখা করার
সময়ই বন্ধুদের সাথে নিয়ে পর্যটন ব্যবসা শুরু করেন আবু রায়হান সরকার (সুমন)। প্রথমে
খুব ছোট আকারে। বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনে ভ্রমণ প্যাকেজ পরিচালনার মাধ্যমে শুরু হলেও
ধীরে ধীরে তিনি দেশের বাইরেও প্যাকেজ পরিচালনায় সফলতা অর্জন করেন। সময়ের পরিক্রমায়
দেশের ভিতরের পর্যটন গন্তব্যগুলোর সীমানা পেরিয়ে এশিয়া, ইউরোপ, অ্যামেরিকাসহ প্রায় সব মহাদেশেই প্যাকেজ পরিচালনা করছেন।
সুন্দরবন থেকে যাত্রা শুরু করে এশিয়া, ইউরোপ অতিক্রম করে অ্যামেরিকা বা কানাডার মতো দেশে প্যাকেজ
বিস্তৃত করার পথটা নিশ্চয়ই খুব সহজ ছিলো না। দীর্ঘ প্রায় একদশকের ব্যবসায় বিভিন্ন
সময়ে নানা উত্থান-পতনের ভিতর দিয়ে যেতে হয়েছে বলে ধারণা করি। দেশের একমাত্র ভ্রমণ
বিষয়ক বাংলা নিউজ পোর্টাল পর্যটনিয়ার আজকের আলাপে এসব অভিজ্ঞতা নিয়ে কথা বলার
চেষ্টা করবো। পর্যটনিয়ার পক্ষ থেকে আপনাদের সাথে আছি আমি এশা ইসলাম।

পর্যটনিয়াঃ বন্ধুদের সাথে নিয়ে ব্যবসা শুরুর গল্পটা কেমন ছিল?

সুমনঃ বন্ধুরা মিলে আমরা যখন আলোচনা করতাম যে, চাকরি না করে আমরা ব্যবসা করবো তখন আমাদের সবার মধ্যেই একটা
ফ্যান্টাসি কাজ করতো। বাস্তবতা যে কতোটা কঠিন সেটা আমরা তখনো বুঝি নাই। সবমিলিয়ে
বলা যায় শুরুর গল্পটা মধুর হলেও বাস্তবতার কারণে আমরা সবাই মিলে ব্যবসা শুরুও করতে
পারি নাই। যাদের সাথে নিয়ে শুরু করেছিলাম তারাও সবাই ব্যবসায় থাকতে পারি নাই। আবার
যারা ছিলাম তারাও এখন আর একসাথে নাই। মোটকথা সময়ের সাথে সাথে আমরা বদলে গেছি
বাস্তবতার প্রেক্ষিতে। বন্ধুরা এখন অবশ্য যে যেখানেই আছে ভালো আছে। এটাই বড় কথা।
কেউ হয়তো বিসিএস ক্যাডার হয়েছে আবার কেউ হয়তো ব্যাংকে চাকরি নিয়েছে। আবার আমার মতোই
আরেক বন্ধু পর্যটন ব্যবসা নিয়েই আছে, সেও ভালো করছে। আমরা সবাই একসাথে থাকতে না পারলেও সবাই ভালো
আছি,
আলহামদুলিল্লাহ্‌।

পর্যটনিয়াঃ দেশের বাইরে বা আউট বাউন্ড ট্যুরিজম কোন দেশের প্যাকেজ
দিয়ে শুরু-

সুমনঃ দেশের বাইরে প্রথম প্যাকেজ আমার ছিল ইন্ডিয়ার দার্জিলিং।
যদিও আমার শুরুটা ছিলো সুন্দরবন প্যাকেজ দিয়ে। তবুও বান্দরবান ও রাঙ্গামাটির কিছু
প্যাকেজ বিক্রি হয়েছিলো সেসময়। সম্ভবত সেন্ট মার্টিন দ্বীপের প্যাকেজও বিক্রি করতে
পেরেছিলাম প্রথম বছরেই। যারা আমার প্যাকেজ সম্পর্কে জানে অর্থাৎ ইতোমধ্যে সুন্দরবন
নয়তো সেন্ট মার্টিন অথবা রাঙ্গামাটি হোক বা বান্দরবান হোক, কোনো না কোনো প্যাকেজ নিয়েছে এরকম কিছু গেস্ট আমার কাছে
দার্জিলিং প্যাকেজ চায়। আমি আমাদের একজন সিনিয়র অপারেটরের সহযোগিতা নিয়ে তাঁদেরকে
প্যাকেজ দেই। এটাই ছিল আমার দেশের বাইরের প্রথম কোনো প্যাকেজ বিক্রি। এমনকি আমার
জীবনের প্রথম বিদেশ ভ্রমণও ঐ দার্জিলিং। ঐ প্যাকেজের সাথে আমিও গিয়েছিলাম। এভাবেই আমার
আউট বাউন্ড শুরু। তারপর ধীরে ধীরে নেপাল, ভুটান, থাইল্যান্ড, মালেয়শিয়া, সিঙ্গাপুর, মালদ্বীপ
ও শ্রীলঙ্কার পাশাপাশি মিডল ইস্ট এখন তো ইউরোপ, আমেরিকার প্যাকেজও পরিচালনা করছি।

পর্যটনিয়াঃ অন্য কোনো ট্যুর অপারেটরের সহযোগিতা নিয়ে দার্জিলিং
প্যাকেজ শুরু তারপর ধীরে ধীরে ইউরোপ, অ্যামেরিকা পথটা নিশ্চয়ই সহজ ছিলো না।

সুমনঃ প্রায় চার/পাচ বছর একটানা পরিশ্রম করে পৃথিবীর বিভিন্ন
দেশে আমার কাউন্টার পার্ট তৈরী করতে সক্ষম হয়েছি। বিষয়টা আসলেই অনেক পরিশ্রমের
ছিলো। কাউন্টার পার্ট হয়তো সহজেই পাওয়া যায় কিন্তু সার্ভিস কোয়ালিটি বা সেবার মান বিচার
করলে সব এজেন্টের সাথে সম্পর্ক তৈরী করা যায় না। আমাদের গেস্টদের জন্য আমি কোনো
মানের সেবা চাচ্ছি আর আমার ওভারসিজ এজেন্ট কোন মানের সেবা দিচ্ছে সেটা খুবই
গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয়। পারস্পারিক বোঝাপড়া ভালো না হলে ব্যবসা করা সম্ভব হয় না।
তাই আমি অনেক দেখে শুনে বাছবিচার করার পর বিজনেস এগ্রিমেন্ট করি, যাতে আমার ব্যবসায়িক সুনাম অক্ষুণ্ণ থাকে। ব্যসায়িক সুনাম রক্ষার
পথ বরাবরেই অনেক কঠিন একটা কাজ।

পর্যটনিয়াঃ ইউরোপের ভ্রমণ ভিসা পাওয়া কি খুব কঠিন?

সুমনঃ দেখুন শুধু ইউরোপ, অ্যামেরিকা বা অস্ট্রেলিয়া নয় থাইল্যান্ড, মালয়শিয়া, ভিয়েতনামের ভ্রমণ ভিসা পেতেও প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট ও ডকুমেন্টের উপস্থাপন অনেক জরুরী। তবে বাংলাদেশের আশপাশের দেশগুলো যেমন, থাইল্যান্ড, মালেয়শিয়া, সিঙ্গাপুর, চায়না বা ভিয়েতনামে ভিসা যতটা সহজে পাওয়া যায় ইউরোপের ভিসা অতটা সহজে পাওয়া যায় না। আবার ভিসা পাওয়া যে অসম্ভব তাও নয়। কিছুটা হয়তো কঠিন তবে অসম্ভব কিছু নয়। ইউরোপ বা অ্যামেরিকার ভিসার জন্য কিছু বিষয়ে একটু বাড়তি সতর্কতা প্রয়োজন। প্রফেশনাল ডকুমেন্টের পাশাপাশি ব্যাংক স্টেটমেন্ট, ব্যাংক সলভেন্সি সার্টিফিকেট, ইনকাম ট্যাক্স রিটার্ণ এবং অ্যাসেট ভ্যালুয়েশন খুব জরুরী। এসবের বাইরেও ফ্যামিলি মেম্বারদের সোশাল ও ফাইনান্সিয়াল স্ট্যাটাসও ভিসা প্রাপ্তিতে ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করে। যেমন ভিসা প্রার্থীর ম্যারিটাল স্ট্যাটাস ও সন্তান আছে কিনা বা থাকলে কতজন আছে ইত্যাদি অনেক খুঁটিনাটি বিষয় বিবেচনায় নিয়েই আসলে তারা ভিসা ইস্যু করে। ভিসা প্রাপ্তির জন্য ডকুমেন্টের স্বচ্ছতা সবার আগে জরুরী। যেমন ইউরোপ বা অ্যামেরিকা ভ্রমণ ভিসা প্রার্থী কেউ হয়তো নিজের আর্থিক সামর্থ্য প্রমাণ করার জন্য এম্বেসি ফেস করার আগে আগে ব্যাংক একাউন্টে অনেক টাকা জমা রেখে স্টেটমেন্ট উঠালো। যদি স্টেটমেন্ট উঠানোর আগে ছয় মাস বা তিন মাস একাউন্টে তেমন লেনদেন না করা থাকে বা ব্যালান্স বেশি না থাকে তাহলে বর্তমানের ব্যালান্স এমাউন্টের সাথে প্রিভিয়াস ব্যালান্স এমাউন্টের গড়মিল দেখা দিবে। এরকম অসংগতিপূর্ণ ব্যাংক স্টেটমেন্ট বা সলভেন্সি সার্টিফিকেট দিয়ে কেউ হয়তো নিজেকে আর্থিকভাবে স্বচ্চছল প্রমাণ করতে চেষ্টা করতে পারে কিন্তু তাতে ভিসা পাওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়।

Leave a Reply