কুতুব মিনার বিশ্বের সর্বোচ্চ ইটনির্মিত মিনার।

Share on Facebook

কুতুব মিনার  ভারতের দিল্লীতে অবস্থিত একটি স্তম্ভ বা মিনার, যা বিশ্বের সর্বোচ্চ ইটনির্মিত মিনার। এটি কুতুব কমপ্লেক্সের মধ্যে অবস্থিত, প্রাচীন হিন্দু মন্দিরের ধ্বংসাবশেষের পাথর দিয়ে কুতুব কমপ্লেক্স এবং মিনারটি তৈরি করা হয়েছে। এই স্মৃতিস্তম্ভটি নির্মাণের কারণ জানা যায় নি। কিছু ইতিহাসবেত্তাগণ মতপ্রকাশ করেন যে, এটি একটি বিজয় স্তম্ভ হিসাবে নির্মিত হয়, এদিকে অনেকে আবার বলেন যে, এটি শুধুমাত্র মসজিদ সংলগ্ন একটি মিনার।১৯৯৩ সালে কুতুব মিনার একটি ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট (বিশ্ব ঐতিহ্যময় স্থান) হিসাবে মনোনীত হয়েছে। অসাধারণ এই কুতুব মিনারটি ভারতীয়-মুসলিম স্থাপত্যশৈলীর গুরুত্বপূর্ণ এবং অন্যতম প্রাচীন নিদর্শন হিসেবে পরিচিত। এর আশেপাশে আরও বেশ কিছু প্রাচীন এবং মধ্যযুগীয় স্থাপনা এবং ধ্বংসাবশেষ রয়েছে, যারা একত্রে কুতুব কমপ্লেক্স হিসেবে পরিচিত। এটি দিল্লির অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটন গন্তব্য।কুতুব মিনারটি বিভিন্ন নকশার আদলে গঠিত, যা বারান্দা দ্বারা পৃথকীকৃত। মিনার লাল বেলে পাথর দিয়ে তৈরী। যার আচ্ছাদনের ওপর পবিত্র কোরআনের আয়াত খোদাই করা। কুতুব মিনারের দক্ষিণ-পশ্চিম থেকে ২৫ ইঞ্চি ঢাল আছে। যা নিরাপদ সীমার মধ্যে বিবেচিত। আফগানিস্তানের জাম মিনার এর অনুকরণে এটি নির্মিত হয়।

পাঁচতলা বিশিষ্ট মিনারের প্রতিটি তলায় রয়েছে ব্যালকনি। কুতুব মিনারের নামকরণের পেছনে দুটি অভিমত রয়েছে, প্রথমটি হলো- এর নির্মাতা কুতুব উদ্দিন আইবেকের নামানুসারে এর নামকরণ হয়েছে আর দ্বিতীয়টি হলো ট্রান্স-অক্সিয়ানা হতে আগত বিখ্যাত সুফী সাধক হযরত কুতুব উদ্দিন বখতিয়ার কাকীর সম্মানার্থে এটি নির্মিত করে নামকরণ করা হয়েছে কুতুব মিনার। কুতুব মিনারকে ঘিরে গড়ে উঠেছে মনোরম একটি কমপ্লেক্স।১০০ একর জমির উপর স্থাপিত এ কমপ্লেক্সে রয়েছে কুওয়াতুল ইসলাম মসজিদ, আলাই মিনার, আলাই গেট, সুলতান ইলতুৎমিশ, সুলতান গিয়াস উদ্দীন বলবন, সুলতান আলাউদ্দিন খলজী ও ইমাম জামিনের সমাধি ও লৌহ পিলার।কুতুব মিনারটির উচ্চতা ৭২.৫ মিটার। মিনারের অভ্যন্তরে উপরে উঠার সিঁড়ি রয়েছে ৩৭৯ টি। নিচের দিকে মিনারের আয়তন ১৪.৩ মিটার এবং উপর দিকে ব্যাস ২.৭৫ মিটার।কুতুব মিনারটি দিল্লী শহর থেকে মাত্র ১৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।

কুতুব মিনার বিভিন্ন সময়ে ভূমিকম্প ও বজ্রাঘাতের কারনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে, এটি বিভিন্ন শাসকদের দ্বারা  মাঝে মাঝে  সংস্কারও করা হয়েছে। মিনারটি শীর্ষদেশ থেকে মাত্র ২৫ সেন্টিমিটার ঝুঁকে আছে, তা সত্ত্বেও যদিও এটি নিরাপদ, তবু এখনো বৃষ্টির জলের চোয়ানির দরুণ স্মৃতিস্তম্ভের ভিতের দুর্বলতা এড়াতে পর্যবেক্ষণ করা প্রয়োজন।১৯৮১ সালেরও আগে, জনসাধারণের জন্য স্মৃতিস্তম্ভটির ভিতরে প্রবেশ করার অনুমতি ছিল। তবে, এক গুরুতর আকস্মিক দুর্ঘটনা (১৯৮১ সালের৪-ঠা ডিসেম্বর স্তম্ভটির মধ্যে আকস্মিক বিদ্যূৎ ঘাটতির আতঙ্কে ছত্রভঙ্গের সময় ৪৫ জন ব্যক্তির মৃত্যু হয়) এর পর থেকে  কর্তৃপক্ষের নেতৃত্বে অভ্যন্তরীণ বিভাগে জনসাধারণের প্রবেশাধিকার নিষিদ্ধ করে দেওয়া হয়।

কুতুব মিনারের নিকটবর্তী বেশ কিছু দর্শনীয় স্থানের মধ্যে রয়েছে গার্ডেন অফ ফাইভ সেন্সেস, আলই দরওয়াজা, আলই মিনার,আনসাল প্লাজা, কেল্লা রাই পিথোরা, মঠ কি মসজিদ, লাল কেল্লা,আনসাল প্লাজা, কেল্লা রাই পিথোরা, মঠ কি মসজিদ, লাল কেল্লা, বাহাই লোটাস মন্দির, দৈনন্দিন শিল্পকলার সংস্কৃতি মিউজিয়াম এবং আই.এন.এ মার্কেট ইত্যাদি। আপনি যদি একজন গল্ফপ্রেমী হন, তবে আপনি দিল্লী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (দিল্লী ডেভলোপম্যান্ট অথরিটি)দ্বারা পরিচালিত কুতুব গল্ফ ক্ষেত্র পরিদর্শনেও যেতে পারেন।

কুতুব মিনার সারা বছর ধরে খোলা থাকে। তবে, অক্টোবর থেকে মার্চের মাসগুলিতে আবহাওয়া বেশ মনোরম থাকার দরুণ এইসময়ই হল কুতুব মিনার পরিদর্শনের সেরা সময়।কুতুব মিনার দর্শনের সময় হল সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত।ভারতীয়দের জন্য প্রবেশ মূল্য হল ভারতীয় মূল্যে ১০ টাকা, অন্যদিকে বিদেশীদের জন্য ভারতীয় মূল্যে ২৫০ টাকা। ১৫ বছরের নীচে শিশুদের বিনামূল্যে প্রবেশের অনুমতি রয়েছে।এই স্থানটি উপভোগ করতে প্রতি বছর অগনিত পর্যটক ছুটে আসে।

Leave a Reply