বরিশালে মনমুগ্ধকর শাপলা বিলে দর্শনার্থীদের ভীর

Share on Facebook

বরিশালে জেলার মনমুগ্ধকর শাপলা বিলের সৌন্দর্যে দর্শনার্থীদের ভীর বেড়েই চলেছে।  বরিশালে বর্ণিল শাপলার সৌন্দর্যে মুগ্ধ হচ্ছেন দর্শনার্থীরা। প্রতিদিন বিস্তীর্ণ বিলে ফুটে থাকে লাল, সাদা আর নীল শাপলা। ভরা মৌসুমে প্রাণ ফিরেছে বরিশালের শাপলা বিলে। শাপলার সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য দূরদূরান্ত থেকে পর্যটকরা ভিড় জমাচ্ছেন বিলের জলে শাপলার সঙ্গে। তবে সড়কের ভোগান্তিতে বিপর্যস্ত দর্শনার্থীরা। তবে এই স্থানের আশপাশে থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা না থাকার কারণে ও বাথরুম টয়লেটেরও কোন ব্যবস্থা না থাকা ক্ষুব্ধ এখানে ঘুরতে আসা মানুষেরা। তাই শাপলার বিলকে আরও আধুনিক সুযোগসুবিধা দিয়ে পর্যটন বান্ধব করার দাবি দর্শনার্থীদের ।

বরিশাল জেলার উজিরপুর উপজেলার সাতলা এলাকায় বিস্তীর্ণ বিলের নান্দনিক শাপলা দেখার জন্য প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ ভিড় জমাচ্ছেন। তবে জেলা শহর এবং মহাসড়ক দিয়ে সাতলার এই সৌন্দর্যমণ্ডিত বিলে যাওয়ার রাস্তাঘাট সংস্কার না হওয়ায় দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে।

দর্শনীয় এই স্থানের আশপাশে থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা নেই। এমনকি বাথরুম টয়লেটেরও ব্যবস্থা নেই। ফলে শাপলার সৌন্দর্য উপভোগ করতে আশা দর্শনার্থীরা চরম দুর্ভোগে পড়েন। দর্শনার্থীদের দাবি শাপলার বিলকে পর্যটন বান্ধব করার।

বরিশাল বিভাগীয় সদর থেকে সড়ক পথে ৬৭ কিলোমিটার উত্তর পশ্চিমে প্রত্যন্ত সাতলা বিল। বরিশাল জেলা সদর কিংবা উজিরপুর উপজেলা সদর থেকে সড়ক পথে সাতলা বাজারে যেতে সড়কের দুই পাশে চোখে পড়বে বিল আর বিল। হরতা বাজারের পর থেকে সাতলা যেতে দুই দিকে বিলের বুকে ৩ থেকে চার ফুট পানির ওপরে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে নান্দনিক ও বর্ণিল শাপলা ফুল।

 

আষাঢ়ের শুরুতে প্রকৃতিগতভাবে বিলে ফুটতে শুরু করে শাপলা। তবে শ্রাবণ থেকে বিলের পর বিল জুড়ে চোখে পড়বে লাল, সাদা আর নীল শাপলা। ফুলে ফুলে ছেয়ে আছে পুরো বিল।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, করোনার কারণে এবার মৌসুমের শুরুতে দর্শনার্থী কিছুটা কম। তারপরও প্রতিদিনই ভিড় করছেন হাজারো পর্যটক। তারা নৌকায় বিলের পানিতে ঘুরে ঘুরে শাপলা ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করেন। কেউ সেলফি তোলেন। কেউ আবার শাপলা তুলে নিয়ে যান।

সরকারি ছুটির দিনে জমজমাট হয়ে ওঠে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি শাপলার বিল। রাতে ফুটে থাকা শাপলা ফুল রোদ ওঠার পর ধীরে ধীরে শুকিয়ে যায়। এ কারণে শাপলা ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে হলে সূর্যের আলো তীব্র হওয়ার আগে পৌঁছাতে হবে শাপলা বিলে।

শাপলার সৌন্দর্য উপভোগ করতে আসা ব্যবসায়ী কাজী আসাদ আহমেদ নয়ন বলেন, লাল-নীল আর সাদা শাপলায় পুরো এলাকাকে নয়নাভিরাম করেছে। অনন্য দর্শনীয় স্থান হয়ে উঠেছে এই বিল। কিন্তু উজিরপুর উপজেলা সদর থেকে সাতলা পর্যন্ত প্রায় ৩০ কিলোমিটার সড়কের বেহাল দশার কারণে সেই আনন্দ অনেকটাই ম্লান হয়ে যায়। ভাঙা রাস্তায় সেখানে যেতেই দর্শনার্থীরা ক্লান্ত হয়ে পড়েন। অনেক সময় যানবাহন উল্টে দুর্ঘটনার শিকার হতে হয়। এ কারণে ইচ্ছে থাকলেও এখানে আসতে ভয় পান দর্শনার্থীরা।

দর্শনার্থী হাফিজ উদ্দিন বলেন, বরিশাল জেলায় এত সুন্দর শাপলার বিল আছে এখানে না আসলে তা বুঝতে পারতাম না। তবে আশা-যাওয়ার পথে সড়কের দুর্ভোগ কমালে মানুষ সানন্দে উপভোগ করতে পারত। শাপলার বিলের অপার সৌন্দর্য ঘিরে সাতলায় পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলা উচিত।

বেড়াতে যাওয়া তরুণী আফসানা ইসলাম জানান, করোনাকালে বাসার বাইরে যাওয়া হয় না। দীর্ঘদিন পর পরিবারের সঙ্গে বেড়াতে শাপলার বিল এসে মুগ্ধ হয়েছেন তিনি। শাপলার অসাধারণ নৈসর্গিক দৃশ্য দেখে অভিভূত। শাপলা বিলের শান্ত পরিবেশে এসে প্রশান্তিতে ভরে গেছে। এক কথায় মুগ্ধ তারা।

ব্যবসায়ী নূর হোসেন মিরণ জানান, শাপলার বিল দেখে তারা আনন্দ পেয়েছেন। কিন্তু মহিলাদের নিয়ে এখানে এসে তারা বিপদে পড়েছেন। এখানে ওয়াশ রুম, টয়লেট, বাথরুমসহ থাকা খাওয়ার জন্য কোন ব্যবস্থা নেই। বিলে বেড়ানোর জন্য নেই পর্যাপ্ত নৌকার ব্যবস্থাও।

দর্শনার্থী ব্যাংকার আবু জাফর খান বলেন, শাপলার বিল ঘিরে বৃহৎ পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলা সম্ভব। সরকার একটু সুদৃষ্টি দিলে এখানে অবকাঠামোগত কিছু সুবিধা এবং সড়কপথের সংস্কার হলে দর্শনার্থী অনেক বাড়বে। এতে প্রত্যন্ত এই বিলাঞ্চলের আর্থ-সামাজিক ব্যাপক পরিবর্তন ঘটবে।

বরিশালের জেলা প্রশাসক এসএম অজিয়র রহমান বলেন, বরিশালের সাতলা-হারতার শাপলার বিল পর্যটনের নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে। শাপলার বিলকে আরও আকর্ষণীয় ও পর্যটন বান্ধব করে গড়ে তোলার জন্য পর্যটন করপোরেশনে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে ইতিবাচক সাড়াও পাওয়া গেছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে সেখানে ওয়াশ রুম ও রেস্ট রুম নির্মাণকাজ শুরু করা যাবে। শাপলার বিলে যাওয়ার রাস্তা সংস্কারের জন্য স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের সঙ্গে কথা হয়েছে। শিগগিরই ওই সড়ক সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হবে।

Leave a Reply