সাফল্যের মুখ দেখছে ইসলাম চর্চায় শেখ হাসিনার উদ্যোগ

Share on Facebook

ইসলামবিরোধী’ তকমা দিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে সবসময় কোণঠাসা করে রাখার চেষ্টা করে বিশেষ একটি গোষ্ঠী। ভোটের সময় এটিকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহারের চেষ্টা করে বিরোধী পক্ষ। সম্প্রতি হেফাজতের সঙ্গে দলটির সম্পর্কের টানাপোড়েন ও সারাদেশে হেফাজতের শীর্ষ নেতাদের গ্রেফতারের প্রেক্ষিতেও এ গুঞ্জন তোলা হচ্ছে। যদিও আওয়ামী লীগ নেতারা মনে করছেন, এসব অপবাদের জবাব তারা প্রচারসর্বস্ব না হয়ে কাজের মাধ্যমেই দেবেন। তারা মনে করেন সারাদেশে নির্মাণাধীন ৫৬০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের কাজ শেষ হলে ইসলামের প্রকৃত চর্চায় আওয়ামী লীগের উদ্যোগ জাতির সামনে দৃশ্যমান হবে। ইসলাম চর্চায় শেখ হাসিনার উদ্যোগ সবার নজরে আসবে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেশের জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে ৫৬০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণ করছে সরকার। এর মধ্য দিয়ে ইসলামকে পুরোপুরি জানার ফলে ধর্মান্ধতা, উগ্রতা ও জঙ্গিবাদে জড়াবে না কেউ, এমন আশা ধর্মীয় নেতাদের। আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, ‘ইসলাম প্রচার ও প্রসারের এসব কাজ জনগণের কাছে ভালোভাবে তুলে ধরতে পারলে আওয়ামী লীগ সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা কেটে যাবে।’

 

প্রসঙ্গত, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ইসলামি একাডেমি থেকে আজকের ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেন। সেই প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব ন্যস্ত করেছিলেন প্রফেসর মুঈন উদ-দীন আহমদ খান এর মতো ব্যক্তির ওপর। এখন দেশের কোটি কোটি মুসলিমকে আলোর পথ দেখাচ্ছে এ ফাউন্ডেশন। বিশেষ করে মসজিদভিত্তিক কোরআন শিক্ষা কার্যক্রম গ্রামে বেশ জনপ্রিয়।

সেই ফাউন্ডেশনের অধীনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগে সারাদেশে ৫৬০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণের প্রকল্প চলমান। এটি ইসলাম চর্চায় আওয়ামী লীগের অবদানে নতুন মাত্রা যোগ করবে।

 

জানা গেছে, ২০১৪ সালে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় একটি করে উন্নত মসজিদ নির্মাণের প্রতিশ্রুতি ছিল। সেই আলোকে ২০১৫ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয় পরিদর্শনের সময় সে প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় একটি করে মোট ৫৬০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সংস্কৃতি কেন্দ্র স্থাপনের অনুমোদন দেন। ২০১৭ সালের এপ্রিল থেকে গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত (১ম সংশোধিত) এ প্রকল্প ৮ হাজার ৭২২ কেটি টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়ন হওয়ার কথা ছিল।

 

অনুমোদিত প্রকল্পের নকশা অনুযায়ী মডেল মসজিদের জন্য ৪০ শতাংশ জায়গা নির্ধারণ করা হয়েছে। জেলা পর্যায়ে ও উপকূলীয় এলাকায় চারতলা মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র এবং উপজেলার জন্য তিনতলা মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে।

 

মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্স প্রকল্পের পরিচালক (পিডি) নজিবুর রহমান বলেন, ‘এ প্রকল্পের আওতায় ইতোমধ্যে ৫০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্স নির্মাণের কাজ শেষের পথে। আগামী মে মাসের শেষ দিকে উদ্বোধন করা হবে। ২০২১-২২ অর্থবছর আরও ১০০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্স নির্মাণকাজ আমরা শেষ করবো ইনশাআল্লাহ। এভাবে এই প্রকল্পের আওতায় সারাদেশের জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে ৫৬০টি মসজিদ হবে।’

তিনি বলেন, ‘এটি গতানুগতিক কোনো মসজিদ নয়। এটি আরব বিশ্বের মসজিদ কাম ইসলামিক কালচারাল সেন্টারের আদলে করা। এই মসজিদ ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে থাকছে নারী ও পুরুষদের পৃথক ওজু ও নামাজ আদায়ের সুবিধা, লাইব্রেরি, গবেষণা ও দ্বীনি দাওয়া কার্যক্রম, পবিত্র কোরআন হেফজ এবং শিশু শিক্ষাসেবা, অতিথিশালা, বিদেশি পর্যটকদের আবাসন, মরদেহ গোসলের ব্যবস্থা, হজযাত্রীদের নিবন্ধন ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা, ইমামদের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র এবং ইমাম-মুয়াজ্জিনের আবাসনসহ সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য অফিসের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।’

সিরাজগঞ্জ ও রংপুরে সরকারের এই মহতী উদ্যোগ মডেল মসজিদ নির্মাণকাজ সরেজমিনে দেখা যায়, জেলা সদরে চারতলা বিশিষ্ট ভবন নির্মাণকাজ শেষের পথে। এখন চলছে অলঙ্করণের কাজ। দৃষ্টিনন্দন নকশার ধবধবে সাদা রঙের এ মসজিদ দেখে যে কারো মনে হবে যেন আরবের কোনো মসজিদ। আরবের মতো এমন মসজিদ পেয়ে খুশি স্থানীয়রা। তারা বলছেন, ‘এতে ইসলামের সঠিক জ্ঞান লাভের পথ সুগম হবে। ধর্মান্ধতা, উগ্রতা ও সন্ত্রাসবাদে জড়িয়ে পড়ার ঘটনা কমে আসবে।’

রংপুর শহরের বুড়িরহাট কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের ইমাম মো. আব্দুল কাহ্হার  বলেন, ‘ইসলামের সঠিক জ্ঞান থাকলে মানুষ বিপথগামী হয় না, ইসলামের দোহাই দিয়ে ধর্মান্ধতা, উগ্রতা ও সন্ত্রাসবাদে জড়ায় না। এই মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্স সেই সঠিক জ্ঞানচর্চায় ভূমিকা রাখবে। মানুষকে ইসলামের সঠিক জ্ঞান লাভের পথ সুগম করে দেবে।’

 

রংপুরের জলকর জামে মসজিদের খতিব মুফতি কাউছার আহমদ বলেন, ‘এ মসজিদ ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের মাধ্যমে ধর্মপ্রাণ মুসলিমরা ইসলামের প্রকৃত জ্ঞানের আলোয় আলোকিত হবেন। সালাতের পাশাপাশি ইসলামের সংস্কৃতি সম্পর্কে জানতে পারবেন। ধর্মীয় বিষয়ে সঠিক ধারণা ও জ্ঞানলাভ করতে পারবেন।’

তিনি বলেন, ‘ধর্মান্ধতা, ধর্মীয় উগ্রবাদ সঠিকভাবে ধর্ম না জানার কারণে হয়। মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের মাধ্যমে সঠিক জ্ঞান অর্জন হলে উগ্রবাদ মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারবে না।’

সম্মিলিত ইমাম পরিষদের নেতা মুস্তাফিজুর রহমান  বলেন, ‘মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র দেখলে মন ভরে যায়। এক একটি মসজিদ সংশ্লিষ্ট এলাকার অন্যান্য মসজিদ ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের জন্য মডেল। এই মসজিদগুলো যে নিয়মে চলবে, পুরো বাংলাদেশের সব মসজিদ একই নিয়মে চলবে। তাতে ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি, দ্বন্দ্ব হবে না। এক প্ল্যাটফর্মে ইসলামের প্রচার-প্রসার ও অনুশীলনের নজির হবে এটি।’

আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, ‘আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনাই যে প্রকৃতপক্ষে ইসলামের পক্ষের এগুলো হলো তার প্রমাণ। তবে দুঃখজনক হলো ইসলামবিরোধী গোষ্ঠী নানা সময়ে ইসলামের লেবাসে এই প্রোপাগান্ডা ছড়াতে সক্ষম হয়েছে যে, আওয়ামী লীগ ইসলামবিরোধী। এজন্য দায়ী আমাদের (আওয়ামী লীগ) প্রচারবিমুখ মানসিকতা। আমরা নীরবে ইসলামের কাজ করছি, প্রচারে ততটা মনোযোগী নই।’

আওয়ামী লীগের ধর্মবিষয়ক সম্পাদক সিরাজুল মোস্তফা বলেন, ‘৫৬০টি মডেল মসজিদের মতো আওয়ামী লীগ ইসলামের কল্যাণে কাজ করেছে। বঙ্গবন্ধু ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেছেন, তাবলিগ জামাতের জন্য কাকরাইলে মসজিদ ও টঙ্গীতে ইজতেমার জায়গা দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মাদরাসা শিক্ষার প্রসারে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। কওমি মাদরাসার সনদ দিয়েছেন, আলিয়া মাদরাসার জন্য স্বতন্ত্র আরবি বিশ্ববিদ্যালয় করে দিয়েছেন। ইসলামিক সংস্কৃতির প্রসারে সারাদেশে ৫৬০টি মডেল মসজিদ করছেন। এত কাজের পরও একটা শ্রেণি বলে বেড়ায় আওয়ামী লীগ ইসলামবিরোধী। এজন্য দায়ী আমাদের প্রচারবিমুখ মানসিকতা। আমরা নীরবে ইসলামের কাজ করছি, প্রচারে ততটা মনোযোগী নই। আমাদের উচিত এসব কাজ জাতির সামনে তুলে ধরা।’

Leave a Reply