করোনা পরিস্থিতি অবনতির দায় কার

Share on Facebook

এই বাস্তবতা অস্বীকার করার উপায় নাই যে, করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ও সংক্রমণ জনিত মানুষ মৃত্যুর হার বেড়ে গেছে ব্যাপকভাবে। সরকারি তরফ থেকে না হলেও সরকারের দ্বায়িত্বশীল লোকজন বলাবলি করছে যে মানুষ সরকারি নির্দেশনা মানছে না বা সামাজিক দুরত্ব রক্ষা করে চলছে না ফলে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের হার নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। ইতিহাসের ভয়াবহতম এই দুঃসময়ে আমাদের খুব নির্দিষ্ট করে উত্তর জানা দরকার পরিস্থিতি অবনতির এই দায় কার?

আমরা জানি চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে পুরো মার্চ মাস পর্যন্ত সরকারি উদ্যোগে জেলায় জেলায় বাণিজ্য মেলা চলেছে, রাজধানীতে চলছে বইমেলা, চলেছে রাষ্ট্রীয় বিবিধ উৎসব। এই যে সরকারি ব্যাবস্থাপনায় প্রথা, পার্বণ, বইমেলা, বাণিজ্য মেলা ইত্যাদি চলছে এসব কার্যক্রম কি ভাইরাস সংক্রমণ সবার মাঝে দ্রুত ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য দায়ী নয়? করোনা ভাইরাস যেহেতু সংক্রমণ বিস্তারে সরকারি নির্দেশনা বা উকিল নোটিশের অপেক্ষা করে না ফলে যা হওয়ার তা–ই হয়েছে।

বৈশ্বিক মহামারি করোনা সংকটের বিগত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে আমরা কী শিক্ষা গ্রহণ করলাম? সরকারি হাসপাতালগুলোতে না বেড়েছে অক্সিজেন সরবরাহ, না বেড়েছে আইসিইউ বেড। ফলে বাংলাদেশে বর্তমানে সংক্রমণ ও মৃত্যু রেকর্ড ছাড়াচ্ছে।

দেশের মানুষ নিয়ম মানে না, স্বাস্থ্যবিধি মানে না এসব বলে হয়তো দোষ চাপানো যায় কিন্তু দায় এড়ানো যায় না। জনগণের বিশৃঙ্খলতার অভিযোগ দূরে রেখে যদি পালটা প্রশ্ন তোলা যায় পরিস্থিতি মোকাবেলায় রাষ্ট্র কতখানি সুশৃঙ্খল ও প্রস্তুত? তাহলে আমরা দেখতে পাই রাষ্ট্র নিজেই বিশৃঙ্খল ও অপ্রস্তুত। প্রথমের দিকে করোনা পরীক্ষার অব্যবস্থাপনা ও বর্তমানে হাসপাতাল উধাও হওয়ার ঘটনা যদি বাদও দেই তবুও সরকারের দ্বায়িত্ব ছিল করোনার প্রকৃত পরিস্থিতি সবাইকে জানিয়ে দেওয়া। পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে ধাপে ধাপে কী করণীয় তার স্পষ্ট নির্দেশনা দেওয়া। সরকারের উচিত ছিল সারা দেশে যথেষ্ট সংখ্যায় হাসপাতাল তৈরি ও চিকিৎসার প্রস্তুতি নেওয়া। দ্রব্যমূল্য যথাযথভাবে নিয়ন্ত্রণ করে কৃষকের উৎপাদিত ফসলের ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে পারলে হয়তো মানুষ এভাবে নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে জীবিকার অন্বেষনে ঘর ছেড়ে বাইরে আসতো না। আমাদের মনে রাখা দরকার প্রাকৃতিক দুর্যোগের চেয়ে রাষ্ট্রীয় অব্যবস্থাপনা বেশি ক্ষতিকর।

করোনা লড়াই সবার জন্য এক নয়। সবার জন্য যুদ্ধ একই কিন্তু বেঁচে থাকার কৌশল আলাদা। সচ্ছলের কাছে করোনা ভয়ংকর, গরিবের ক্ষুধা তার চেয়েও ভয়ংকর। করোনা মহামারীর গত এক বছরের অধিক সময় ধরে লাখ লাখ মানুষ নিয়মিত পেশা হারিয়ে বেকার। এদের কেউ হয়তো রাইড শেয়ারিং উবার, পাঠাও চালাচ্ছেন আবার কেউ হয়তো এরকম কোনো পেশায় দিন এনে দিন খেয়ে বেঁচে বর্তে আছেন কোনো রকমে। তারা কিভাবে লকডাউনের হুকুম মেনে ঘরে বসে থাকবে না খেয়ে?

সরকারি সাহায্য যথেষ্ট নেই, রেশন নেই, অসুস্থ হলে হাসপাতালে সিট নেই, মাস শেষে বাড়ি ভাড়া দেওয়ার মতো টাকা নেই এহেন নিদারুণ বাস্তবতা মাথায় নিয়ে যারা ঘর ছেড়ে বাইরে আসে কাজের সন্ধানে তারা প্রকৃত অর্থে সরকারের নির্দেশ অমান্য করে না বরং মৃত্যুকে সামনে রেখেই তারা বাঁচার প্রস্তুতি গ্রহণ করে।

ক্রমবর্ধমান বেকার ও দিন এনে দিন খাওয়া লোকের দেশে হয়তো কঠোর বলপ্রয়োগের মাধ্যমে লকডাউন কার্যকর করা যাবে কিন্তু ফলপ্রসূ করা যাবে না। লকডাউন ফলপ্রসূ করতে হলে সবার জন্য চিকিৎসা এবং অভাবী মানুষের জন্য অন্নের বন্দোবস্ত করতে হবে। ক্ষুধার্ত মানুষের জীবিকার ব্যবস্থা না থাকলে জীবনের ভয় থাকে না। কবি রফিক আজাদ তার ভাত দে হারামজাদা কবিতায় লিখেছেন ক্ষুধার্তের কাছে নেই ইষ্টানিষ্ট,আইন-কানুন…

আবু রায়হান সরকার
সম্পাদক, পর্যটনিয়া।

Leave a Reply