আগের মতো নেই আর টাঙ্গুয়ার হাওর,মেলে না আর পাখির আওয়াজ

Share on Facebook

সুনামগঞ্জ জেলা সদর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার দূরে তাহিরপুর ও ধর্মপাশা উপজেলায় টাঙ্গুয়ার হাওরের অবস্থান। ছয়কুড়ি বিল, নয়কুড়ি কান্দার সমন্বয়ের এ হাওরের দৈর্ঘ্য ১১ এবং প্রস্থ ৭ কিলোমিটার। শীত, গ্রীষ্ম ও বর্ষা একেক ঋতুতে এই হাওড় একেক রূপ ধারণ করে।

দেশের উত্তর-পূর্ব প্রান্তের জীববৈচিত্র সমৃদ্ধ সবচেয়ে বড় জলাভূমি বিশ্বের অন্যতম রামসার সাইট টাঙ্গুয়ার হাওরে এবার অতিথি পাখি কম এসেছে। কয়েক বছর আগেও পরিযায়ী পাখির কলকাকলি আর ডানা ঝাপটানোর শব্দে মুখরিত থাকত টাঙ্গুয়ার হাওর। মেঘালয় পাহাড়ের পাদদেশের এই হাওরে এবার শীতের কনকনে হাওয়া বইলেও অতিথি পাখির ভিড় কম।

হাওরপাড়ের বাসিন্দারা মনে করেন, গত কয়েক বছর ধরেই পাখি কম আসছে, এবার কমেছে বেশি। পাখি ও মাছ শিকারিদের তাণ্ডবের কারণেই এমনটা হচ্ছে বলে দাবি তাদের।

অক্টোবর থেকে এই হাওরে শুরু হয় পরিযায়ী পাখির সমাবেশ। স্থানীয় জাতের পানকৌড়ি, কালেম, দেশি মেটে হাঁস, বালিহাঁস, বকসহ শীত মৌসুমে আসা লক্ষাধিক পরিযায়ী পাখি এখানে যাত্রা বিরতি করে। আবার কোনো কোনো পরিযায়ী পাখি পুরো শীতকাল এখানেই কাটায়।

বর্ষায় অন্যান্য হাওরের সঙ্গে মিশে এটি সাগরের রূপ ধারণ করে। শুকনো মৌসুমে ৫০-৬০টি আলাদা বা সংযুক্ত বিলে পরিণত হয় পুরো হাওর। ১১টি বাগসহ ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা অসংখ্য হিজল-করচ গাছ, নলখাগড়া, দুধিলতা, নীল শাপলা, পানিফল, শোলা, হেলেঞ্চা, বনতুলসিসহ শতাধিক প্রজাতির উদ্ভিদ হাওরকে দৃষ্টিনন্দন করে।

সাইবেরিয়া, মঙ্গোলিয়া, হিমালয়, উত্তোর এশিয়া, নেপালসহ পৃথিবীর নানা শীতপ্রধান দেশ থেকে নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে অতিথি পাখিরা বাংলাদেশের বৃহৎ জলমহাল টাঙ্গুয়ার হাওরে আসে। এসব পাখির মধ্যে লেঞ্জা, পাতিহাঁস, বুটিহাঁস, বৈকাল, নীলশির, পানকৌড়ি, পাতারি, দলপিপি, রাঙ্গামুড়ি, পান্তামুখী প্রভৃতি পাখি ফেব্রুয়ারি-মার্চ পর্যন্ত অবস্থান করে হাওরে।

হাওরপারের বাসিন্দারা বলেন, টাঙ্গুয়ার হাওরপারের ৮৮টি গ্রামেই ৮-১০ জন করে পাখি শিকারি রয়েছে। ৭ থেকে ৮শ মানুষের পেশাই এখন পাখি শিকার করে বিক্রি করা। সেই সঙ্গে রয়েছে মাছ শিকারিদের উৎপাত।

হাওরপারের রিপন মিয়া জাগো নিউজকে জানান, হাওরপারের প্রত্যেকটি গ্রাম ছাড়াও বাইরে থেকে পাখি শিকারিরা প্রতিদিন টাঙ্গুয়ার হাওরে গিয়ে পাখি শিকার করছে। তাহিরপুর সদর এবং রতনশ্রি গ্রামের পেশাদার শিকারি রয়েছে। এরা ফাঁদ ও জাল পেতে নানা পন্থায় পাখির ওপর আক্রমণ করে। এছাড়া গাছ-গাছালী কমে যাওয়ার কারণেও পাখি কম আসছে।

হাওরপারের বাসিন্দা মো. সাজিনুর মিয়া জাগো নিউজকে জানান, অনেকে পাখি শিকারকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করেছে। একটা পাখি বিক্রি করলে ৮০০ থেকে ২০০০ টাকা পাওয়া যায়, এজন্য অনেকে ঝুঁকি নিয়েই এই ব্যবসা করছে। শিকারীরা সুযোগ পেলে সীমান্তের ওপারেও পাখি পাঁচার করে।

তাহিরপুরের বাসিন্দা নাহিদ আহমেদ বলেন, হাওরপারের বাসিন্দাদের লাকড়ি ব্যবহারে নিয়ন্ত্রণ আরোপ না করলে এই হাওরের বন-বাদালি আগের অবস্থায় আনা যাবে না। এই অবস্থার বিনামূলে গ্যাস সিলিন্ডার এবং গ্যাসের চুলা বিতরণের প্রস্তাব করেন তিনি। তার মতে বন-বাদালি রক্ষা হলে জলজ প্রাণীসহ অনেক প্রাণ-বৈচিত্রই রক্ষা পাবে।

সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন জাগো নিউজকে জানান, টাঙ্গুয়ার হাওরে অতিথি পাখি যাতে কেউ শিকার না করতে পারে সেজন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দায়িত্বপ্রাপ্ত ম্যাজিস্ট্রেটসহ সংশ্লিষ্টদের নীবিড়ভাবে হাওর তদারকি করতে নির্দেশ দেয়া আছে। যেই পাখি শিকার করবে তাকেই আইনের আওতায় আনা হবে।

Leave a Reply