সর্বকালের দ্বিতীয় সেরা ফুটবল কোচ রাইনাস

Share on Facebook

মোহাম্মদ আলী শাহঃ গানের পাখি আশা ভোসলে এসেছিলেন এআর রহমান এর সুরে কোন একটি গানের ফাইনাল রেকর্ডিংয়ে। এআর রহমান বারবার বলছিলেন, ম্যাডাম আপনি গান শুরু করুন। কিন্তু আশা ভোসলে কিছুটা ইতস্তত বোধ করছিলেন গান গাইতে। কারন মিউজিক ছাড়া এ কেমন রেকর্ডিং! বহুবার রিহার্সেল দেয়া গানটি উনি শুরু করতে পারছিলেন না। তবুও যেহেতু এআর রহমান মিউজিক ডিরেক্টর, তাই রেহমানের অনুরোধে উনি খালি গলায় বেশ কয়েকবার গাইলেন। তারপর যখন হঠাৎ এআর রহমান বললেন, ম্যাডাম রেকর্ডিং শেষ! আশা ভোসলে তো অবাক! বল কি রহমান, শেষ? এআর রহমান হেসে বললেন, জ্বি ম্যাডাম, আমি পরে মিউজিক সেট করে নিবো। সেদিন আশা ভোসলে যারপরনাই অবাক হয়েছিলেন। এটাই হচ্ছে মাস্টারমাইন্ডদের কাজ। আপনি চাইলেও বুঝতে পারবেন না, মাস্টারমাইন্ডরা কিভাবে আপনাকে আমাকে দিয়ে তাদের বেস্টটা বের করে নিবেন?

ফুটবলটা এক সময় এমন ছিল যে, ডিফেন্সের কাজ ছিল প্রতিপক্ষের আক্রমণকে প্রতিহত করা আর ফরোয়ার্ডের কাজ ছিল দলের জয়ে অবদান রাখা। অথচ একজন মানুষ এটা মন থেকে মেনে নিতে পারেন নি। সম্ভবত এই মানুষটাই ফুটবলে প্রথম এই ট্যাকটিসকে তোয়াক্কা না করে, এসবের পরিবর্তনের জন্য নিরলস কাজ করে গেছেন। উনি সবসময় ভাবতেন, আমার দলের সবার ভূমিকা একই রকম হওয়া চাই। যেই চাওয়া সেই কাজ! ভাবতে পারেন, ৬০-৭০ দশকের একজন মানুষ কতটা আধুনিক ছিলেন?

উনি ফুটবল খেলা এবং এর ফর্মেশনকে শিল্পে পরিনত করে গিয়েছেন! শুরুতে উনার ছাত্র ছিল নিসকেন্স, ক্রুইফ, পাইট কাইজার এবং পরবর্তিতে কোম্যান, বাস্তেন, গুলিত, রাইকার্ড, ঔটার্সসহ অসংখ্য ডাচ ফুটবল গ্রেট!

উনাকে নিয়ে গ্রেটেস্ট ইয়োহান ক্রুইফ বলেছিলেন—
Both as a player and as a trainer there is nobody who taught me as much as him. I will miss Rinus Michels. … I always greatly admired his leadership.

ফরোয়ার্ড এবং ডিফেন্সের খেলোয়াড়দের মধ্যে ঐক্য তৈরি করা, নিজেদের মধ্যে বল নিয়ন্ত্রণে রেখে যতটা দ্রুত সম্ভব পাস দেয়া এবং নিজেদের মধ্যে স্পেস কমিয়ে আনা। ঠিক তার পরপরই প্রতিপক্ষকে সরাসরি আক্রমণ করা। মূল মন্ত্র ছিল সবচেয়ে কাছের খেলোয়াড়কে বল পাস দেয়া। এখানে এতটুকু ভাববার অবকাশ নেই, কে কাকে বল দিবেন। বল পাস দেয়ার সাথে সাথে পুনরায় নিজের পারফেক্ট স্পেস বের করে নেয়া। ব্যস, পীচে এই সবগুলো প্ল্যান সঠিকভাবে প্রয়োগ করাটাই ছিল উনার প্রধান উদ্দেশ্য। কিন্তু ব্যাপারটা অত সোজা ছিল না, কারন ফুটবল তখনো সনাতন পদ্ধতিতে ধাতস্থ।

সাবেক ডাচ খেলোয়াড় Sjaak Swart স্মৃতিচারণ করে বলেছিলেন—
আমরা ট্রেনিংয়ে বল নিয়ে সবকিছু করতাম। শুরুর কয়েক সপ্তাহ প্রচন্ড কঠিন এবং কঠোর থেকে কঠোরতর অনুশীলন করেছিলাম। পাঁচটি ট্রেনিং সেশন ছিল প্রতিদিন, এ যেন মিলিটারী ট্রেনিং!

একসময় যখন উনি সবার ট্রেনিংয়ে কিছুটা সন্তুষ্ট হলেন, তখন দেখা গেল খেলার মাঠে স্বয়ংক্রিয়ভাবে পুরো দলের ম্যাজিক শুরু হয়ে যেত। পরবর্তিতে এসব প্ল্যান নিয়ে উনাকে আর খুব বেশি কাজ করতে হয়নি। কারন ততদিনে পুরো ডাচ দলটি মিলিটারী ট্রেনিং সম্পন্ন করে ফেলেছিল। পুরো পৃথিবী অবাক বিস্ময়ে শুধু দেখতেই থাকলো কমলা ম্যাজিক। অনেকটা আজকের আশা ভোসলের খালি গলার গানের সাথে যেন এআর রহমান মিউজিক বসিয়ে দেয়ার চেয়েও বেশি কিছু ছিল!

আধুনিক ফুটবল পরিবর্তনের ইতিহাস নিয়ে আলোচনা করতে হলে যে মানুষটার অবদানের কথা সবচেয়ে বেশিবার উচ্চারিত হবে, তিনি হচ্ছেন আয়াক্স গ্রেট এবং ফুটবল গ্রেটেস্ট কোচ রাইনাস মিশেলস। ওয়ার্ল্ড সকার ম্যাগাজিন এর মতে উনি হচ্ছেন সর্বকালের ইতিহাসের দ্বিতীয় সেরা ফুটবল কোচ।

রাইনাস ফুটবলের বেশ কিছু সনাতন ধারনাকে পুরোপুরি পাল্টে দিয়েছিলেন। টোটাল ফুটবল ম্যাজিকে তখন পৃথিবীব্যাপি শুধু উনার জয় জয়কার। সংবাদ মাধ্যমগুলো এভাবে নিউজ দেয়া শুরু করলো — Space is important in football, but Dutch space is different. It’s different, coz it’s TOTAL FOOTBALL.

ডাচ দলের হয়ে এই মহান মানুষটি খেলেছেন মাত্র ৫ টি ম্যাচ। খেলোয়াড়ী জীবনে উনি ছিলেন একজন পরিপূর্ণ স্ট্রাইকার। আয়াক্সের হয়ে ২৬৪ ম্যাচে উনার করা ১২২ গোলই প্রমাণ করে উনি ছিলেন একজন জাত স্ট্রাইকার।

যদি উনার সকল অর্জন এই পোস্টে লিখি, সেক্ষেত্রে এটি হয়ে যাবে ছোটখাটো একটি উপন্যাস! শুধু উনার স্পেশাল সম্মাননাগুলো দেয়া হল:

⭐️ Named FIFA Coach of the Century: 1999
⭐️ Named World Soccer Magazine 2nd Greatest Manager of All Time: 2013
⭐️ Named Dutch Manager of the century: 1999
⭐️ The 10 Greatest Coaches of the UEFA era (1954—2016)

ফুটবলের মোস্ট ইনফ্লুয়েন্সিয়াল কোচের আজ জন্মদিন। ৯ ফেব্রুয়ারি ১৯২৮ সালে আমাস্টার্ডামে জন্মগ্রহন করেন এই গ্রেটেস্ট কোচ এবং ৩ মার্চ ২০০৫ সালে বেলজিযামের আলস্ট শহরে মৃত্যুবরণ করেন মাত্র ৭৭ বছর বয়সে।

ফুটবল সমর্থকদের কাছে পেলে, ম্যারাডোনা কিংবা ক্রুইফরা যেমন আদুরে এবং সম্মানীয়, স্বয়ং ফুটবল রাইনাস মিশেলস্ এর কাছে তেমন। সমর্থকরা রাইনাসকে ভূলে গেলেও, ফুটবল কখনো এই গ্রেটকে ভুলবে না। তাইতো পৃথিবী যতদিন থাকবে, ততদিন নিচের কথাটি হয়ে থাকবে অম্লান, অবিনশ্বর।

An act that changed the course of football history and that continues to evolve today.

Leave a Reply