চিতা ঝর্ণার ইতি কথা

Share on Facebook

জাহিদুল হাসান সায়েমঃ হামহাম ঝর্ণাটি মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে অবস্থিত। মৌলভীবাজারের রাজকান্দি রিজার্ভ ফরেস্টে অবস্থিত হামাহাম ঝর্ণাটি ২০১০ সালে আবিষ্কৃত হয়। এই ঝর্ণাটির উচ্চতা প্রায় ১৪৭ ফুট থেকে ১৬০ ফুট। মিডিয়াতে ঝর্ণাটির নামের বানান হামহাম বলে উচ্চারিত হলেও স্থানীয়দের কাছে এটি “চিতা ঝর্ণা” হিসেবে পরিচিত। ঝরণার নিকটবর্তি বাসিন্দারা আদিবাসী ত্রিপুরা।

মাধবপুর থেকে ঝর্ণা পর্যন্ত পৌছাতে আপনাকে প্রায় ৪ ঘণ্টা পাহাড়, নদী ইত্যাদির মধ্যে দিয়ে হাঁটতে হবে। হাঁটার সময় আপনাকে ছড়া ও নালার মাঝে দিয়ে যেতে হবে সেখানে হাঁটু সমান পানির মধ্যে দিয়েও হেঁটে যেতে হবে। ঝর্ণায় পৌছানোর এই পথটি কখনো কখনো বিপদজনক। তাই যথাযথ প্রস্তুতি রাখতে হবে ট্রাভেলারদের।

ঝরণার যৌবন বর্ষাকালে। বর্ষাকালে প্রচন্ড ব্যাপ্তিতে জলধারা গড়িয়ে পড়ে। শীতে তা মাত্র একটি ঝরণাধারায় এসে ঠেকে। ঝরণার ঝরে পড়া পানি জঙ্গলের ভিতর দিয়ে ছড়া তৈরি করে বয়ে চলেছে। এরকমই বিভিন্ন ছোট-বড় ছড়া পেরিয়ে জঙ্গলের দুর্গম পথ পেরিয়ে এই ঝরণার কাছে যেতে হয়। ঝরণায় যেতে হলে কুড়মা বন বিটের চম্পারা চা বাগান হয়ে যেতে হয়। চম্পারা চা-বাগান থেকে ঝরণার দূরত্ব প্রায় ৭ কিলোমিটার। পথে অত্যন্ত খাড়া মোকাম টিলা পাড়ি দিতে হয়. এবং অনেক ঝিরিপথ ও ছড়ার কাদামাটি দিয়ে পথ চলতে হয়।

কিছুদূর এগিয়ে যাওয়ার পর শুরুতে দু’চোখের সামনে ভেসে উঠবে পাহাড় থেকে ধোঁয়ার মতো ঘন কুয়াশা ভেসে উঠার অপূর্ব দৃশ্য। মনে হবে যেন ওই নয়নাভিরাম পাহাড় হাতছানি দিয়ে ডাকছে। কিছু দূর এগুলেই শুনতে পাওয়া যাবে হামহাম জলপ্রপাতের শব্দ।

চারিদিকে এক শিতল শান্ত পরিবেশ। ডানে বামে কোনোদিক থেকেই চোখ ফেরাতে ইচ্ছে করবে না। মনে হবে অনন্তকাল দুচোখ ভরে দেখে নেই প্রকৃতির এই অপূর্ব সৃষ্টি। অদ্ভুত এক রোমাঞ্চকর পরিবেশে মন ভুলিয়ে দেয়র জন্য যথেষ্ট।

এছাড়া গভীর জঙ্গলে বানর,সাপ,মশা,জোঁকের অত্যাচার সহ্য করে পথ চলতে হয়। । হাম হামের রয়েছে দুটো ধাপ, সর্বোচ্চ ধাপটি থেকে পানি গড়িয়ে পড়ছে মাঝখানের ধাপে, এবং সেখান থেকে আবার পানি পড়ছে নিচের অগভীর খাদে।

চারদিকে গহীন জঙ্গল, উপরে আকাশ, পায়ের নিচে বয়ে যাওয়া ঝির ঝির স্বচ্ছ পানির ধারা আর সামনে বহমান অপরূপ ঝর্না।

আয়নার মতো স্বচ্ছ পানি পাহাড়ের শরীর বেঁয়ে আছড়ে পড়ছে বড় বড় পাথরের গায়ে।জলকনা গুলো আকাশের দিকে উড়ে গিয়ে তৈরি করছে ঘন কুয়াশার আভা। পাহাড়ের ১৫০ ফুট উপর হতে গড়িয়ে পড়া স্রোতধারা শব্দ করে এগিয়ে যাচ্ছে পাথরের পর পাথর ডেঙ্গিয়ে সামনের দিকে তার গন্তব্যে।

Leave a Reply