সিলেটের শুকতারা প্রকৃতি নিবাস নিয়ে যত কথা
Tweet
সিলেটের খাদিমনগর জাতীয় উদ্যান এর টিলার চূড়ায় শুকতারা প্রকৃতি নিবাস এর অবস্থান। সিলেট শহর থেকে সাড়ে ৭ কিলোমিটার দূরে শুকতারা রিসোর্টের অবস্থান । শাহপরাণ (রহ.) – এর মাজার গেট থেকে একটু এগিয়ে বামে মোড় নিয়ে মিনিট ২ এগোলেই মিলবে কাঙ্ক্ষিত শুকতারা। ১৪ একর জায়গাজুড়ে এই রিসোর্ট। শুকতারা রিসোর্ট এর স্থাপত্য আর নির্মাণশৈলী এমন, যাতে প্রকৃতির গায়ে একটুও আঁচড় পড়েনি। চা বাগানের রাস্তা থেকে শুকতারা রিসোর্ট এর পথ ধরে এগোলে প্রথমে সুবজ একটি টিলা স্বাগত জানায়। টিলার নিচে এক পাশে রিসোর্টের ফটক। টিলার চূড়ায় ওঠার একটিই পথ। এক পাশে রয়েছে টয় ট্রেন লাইন। সমতল থেকে প্রায় ৫০ ফুট উঁচুতে উঠলে প্রকৃতিকে সঙ্গী করে নির্মিত ছোট ছোট নিবাস, কটেজ নজর কাড়ে।
ওপরে উঠে প্রথমেই চোখে পড়বে ৩ তলা বিশিষ্ট একাশিয়া রেস্টুরেন্ট। দ্বিতীয় তলায় খাবারের আয়োজন। পাশে একটি প্রায় ৪০ জনের মিটিং রুম। তৃতীয় তলায় বসার, আলাপচারিতার ঘর। পাশে একটি রুমজুড়ে পাঠাগার। সিলেটের স্থানীয় ইতিহাস, ঐতিহ্য ও ভ্রমণের বই আছে। নিচতলায় গায়ে হলুদ, করপোরেট মিটিং বা যে কোনো অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করা যাবে। প্রতিটি তলায় আছে নান্দনিকতা ও পর্যাপ্ত আলো-বাতাসের ব্যবস্থা। আছে ব্যালকনি। মুক্ত হাওয়া গ্রহণের উত্তম আয়োজন।
একাশিয়া থেকে বেরিয়ে যেতে হবে উজান পথে। পূর্বের রাস্তা ধরে। ওখানেই আপনার বিশ্রাম নিবাস। থাকার রুম। ওপরে উঠেই চোখে পড়বে খোলা মঞ্চের মতো জায়গা। বনাক কোর্ট। এবার আপনি দিশেহারা হবেন অপার মুগ্ধতায়। যে দিকেই তাকাবেন সবুজের হাতছানি। দূরে সুরমা নদী। তারপর সারি বাঁধা আকাশছোঁয়া পাহাড়। মেঘালয় রেঞ্জ। এখানে শরতে আকাশ রূপ খোলে নিজ আনন্দে। সে এক মাতাল করা দৃশ্য। খোলামেলা রুম। খোলা বারান্দা। চাইলে রুমে বসেই দেখতে পারেন পাহাড় আর সবুজের মিতালি। বারান্দার ওপরে টিনের চাল। বৃষ্টিমুখর রাতে প্রিয়জন সঙ্গী করে আপনার অবস্থান হবে স্মৃতিময়। রুমের ছাদে বসেও উপভোগ করতে পারেন প্রকৃতি সুধারূপ। রিসোর্টের নান্দনিক কিছু শিল্পকর্মের কাজ করেছেন নন্দিত ভাস্কর অলক রায়। আছে ইয়াং স্টারের কিছু পেইন্টিং আর আলোকচিত্র। রিসোর্টে অবস্থানকালীন রাতে থাকবে সিলেটের ঐতিহ্যবাহী বাউল সংগীত। মণিপুরী নৃত্য। খাবারের পাতে থাকবে স্থানীয় ঐতিহ্যবাহী সুস্বাদু খাবার।
রিসোর্টে মোট ১১টি কটেজ। নয়নতারা, বরুণ, শিরীষ, দোলনচাঁপা, মাধবী লতা, কামিনী, জুঁই, করবী, শিমুল, হিজল—এ রকম নামেই কটেজগুলো। ঘরের ভেতরে খাট থেকে শুরু করে টেবিল-চেয়ার সবই সিলেটের ঐতিহ্য বেতের তৈরি আসবাব। সংরক্ষিত আছে আলোকচিত্রও। শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ আর ২৪ ঘণ্টা গরম পানির ব্যবস্থাও আছে কটেজে। বাগানের তাজা ও সতেজ চা-কফি নিজ হাতেই তৈরি করতে পারবেন। কটেজের বাসিন্দারা জানালা ও বারান্দার কাছ থেকে পাহাড়-টিলা দেখার অপূর্ব সুযোগ পান। প্রকৃতির কাছে লীন হলেও বাইরের জগৎ থেকে বিচ্ছিন্ন হতে হবে না। গ্রন্থাগারে আছে দেশ-বিদেশের বই ও পত্রপত্রিকা এবং বড় পর্দার টেলিভিশন। সভা-সেমিনার-কর্মশালা ও পার্টি আয়োজনের ব্যবস্থা রয়েছে টিলার চূড়ায়।
বিদ্যুতায়ন আর শীতাতপ ব্যবস্থা ছাড়া বাকি সবই প্রকৃতিনির্ভর। সৌরবিদ্যুৎ সরবরাহের ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে।
টিলার চূড়ায় একটি কটেজের খোলা ছাদে বসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এটার নাম সাঁঝের মায়া। বসলেই চোখে পড়ে উত্তরে দেশের সীমানা ছাড়িয়ে যাওয়া মেঘালয়ের সারি সারি পাহাড়-টিলা।
শুকতারায় আগত পর্যটকদের জন্য রিসোর্টে গাইডের ব্যবস্থা রয়েছে, যাঁরা সিলেটের বিভিন্ন চা-বাগান, জৈন্তাপুর রাজবাড়ি, লালাখাল, সারি নদী, জাফলং, পিয়াইন নদী, তামাবিল-ডাউকি সীমান্ত, মাধবকুণ্ড-জলপ্রপাতসহ অন্যান্য জায়গা ঘুরিয়ে দেখাবেন।
যোগাযোগ
বিস্তারিত জানতে যোগাযোগ করুন – ০৮২১-২৮৭০৯৯৪-৫ ও ০১৭৬৪৫৪৩৫৩৫
ওয়েবসাইট : www.shuktararetreat.com
ই-মেইলঃ shuktararetreat@gmail.com,info@shuktararetreat.com
রিসোর্টের ভাড়া
আপনি ৩৫০০ টাকা থেকে ৬৫০০ টাকার মধ্যে এখানে থাকতে পারবেন। তবে বৃহস্পতি, শুক্র ও শনিবার ছাড়া সপ্তাহের অন্যান্য দিনে এ মূল্যের উপরে মিলবে ১০ ভাগ ছাড়। রিসোর্টের কতেজ ভাড়া সম্পর্কে জানতে পারবেন এখান থেকে।
শুকতারা রিসোর্ট কিভাবে যাবেন
সড়ক, রেল ও আকাশ পথে ঢাকা থেকে সরাসরি সিলেট যাওয়া যায়। বন্দরনগরী চট্টগ্রাম থেকেও আসা যায়। ঢাকা থেকে গ্রিন লাইন পরিবহন, সোহাগ পরিবহন, সৌদিয়া পরিবহনের এসি বাস যায় সিলেটে। ভাড়া ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা। এ ছাড়া ঢাকার ফকিরাপুল, কমলাপুর, সায়েদাবাদ প্রভৃতি জায়গা থেকে শ্যামলী পরিবহন, হানিফ এন্টারপ্রাইজ, সৌদিয়া, মামুন পরিবহন, সিলকম পরিবহন ইত্যাদি সংস্থার নন-এসি বাসও সিলেটে যায়। ভাড়া ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা।
ঢাকার কমলাপুর থেকে মঙ্গলবার ছাড়া সপ্তাহের প্রতিদিন সকাল ৬টা ৪০ মিনিটে ছেড়ে যায় আন্তঃনগর ট্রেন পারাবত এক্সপ্রেস, সপ্তাহের প্রতিদিন দুপুর ২টায় ছাড়ে জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস এবং বুধবার ছাড়া সপ্তাহের প্রতিদিন রাত ৯টা ৫০ মিনিটে ছাড়ে উপবন এক্সপ্রেস। ভাড়া এসি বার্থ ৬৯৮ টাকা, এসি সিট ৪৬০ টাকা, প্রথম শ্রেণী বার্থ ৪২৫ টাকা, প্রথম শ্রেণী সিট ২৭০ টাকা, সি্নগ্ধা শ্রেণী ৪৬০ টাকা, শোভন চেয়ার ১৮০ টাকা, শোভন ১৫০ টাকা, সুলভ ৯৫ টাকা। চট্টগ্রাম থেকে সোমবার ছাড়া প্রতিদিন সকাল ৮টায় যায় পাহাড়িকা এক্সপ্রেস এবং শনিবার ছাড়া প্রতিদিন রাত ৯টায় উদয়ন এক্সপ্রেস। প্রথম শ্রেণী বার্থ ৪৬৫ টাকা, প্রথম শ্রেণী সিট ৩২০ টাকা, সি্নগ্ধা শ্রেণী ৫৩৫ টাকা, শোভন চেয়ার ২১০ টাকা, শোভন ১৯০ টাকা। এ ছাড়া ঢাকা থেকে বাংলাদেশ বিমান, ইউনাইটেড এয়ারলাইন্স, রিজেন্ট এয়ারের বিমান নিয়মিত উড়াল দেয় সিলেটের আকাশে।
সিলেট শহর থেকে সিএনজিতে শুকতারা রিসোর্ট যেতে ভাড়া পড়বে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা।