ইলিশ বলে কিছু নাই যা আছে তা জাটকার বাবা-মা

Share on Facebook

ইলিশ বলে কিছু নেই, সবই জাটকা’র বাবা-মা, বড় দাদা-দিদি। বক্তব্যটা হাস্যকর মনে হলেও সত্য। কারণ, জাটকা নিধন প্রতিরোধ আর ইলিশ সংরক্ষণ আইনের কঠোর প্রয়োগের ফলেই জাটকাগুলো ইলিশে পরিণত হতে পারছে, গত দুই দশকে ইলিশের উৎপাদন আশাব্যঞ্জকভাবে বেড়েছে। বাংলাদেশের ‘জিআই’ পণ্য হিসেবে নথিভূক্ত হয়েছে ইলিশ।

পদ্মার ইলিশ

মাছ হিসেবে ইলিশের গুরুত্ব মাছ অপেক্ষা বেশী। ইলিশ শুধু মাছই নয়, এটি পর্যটন পণ্যে পরিণত ও প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। দুঃখজনকভাবে সত্য হলো, ইলিশকে পর্যটন পণ্যে হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার ক্ষেত্রে ইলিশ বা পর্যটন বিশেষজ্ঞদের অবদান শূন্য। খুলেই বলি, মাওয়া ঘাটসহ পদ্মার দুই পারের ফেরিঘাটগুলোতে ইলিশ কেন্দ্রিক পর্যটন অহরহ হচ্ছে। অর্থাৎ ইলিশ খাওয়ার জন্য মানুষজন এসব ফেরিঘাটে যাচ্ছেন। এই যে ইলিশকে কেন্দ্র করে পর্যটকদের আকৃষ্ট করা তা কিন্তু করেছে ক্ষুদ্র হোটেল ব্যবসায়ীরা। ইতোমধ্যে তারা ইলিশকে পর্যটন পণ্যে প্রতিষ্ঠিত করেছে, ইলিশকে কেন্দ্র করে যে লাভজনক পর্যটন সম্ভব তা প্রমাণ করেছে। কিন্তু পর্যটন পণ্য হিসেবে ইলিশের সম্ভাবনা এতটুকুতেই সীমাবদ্ধ নয় বরং আরও ব্যাপক।

পণ্যকে কেন্দ্র করে পর্যটন গড়ে তোলার ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞদের অবদান নিয়ে যত কম আলোচনা করা যায় ততই মঙ্গল। কারণ, পর্যটনকে সাধারণ মানুষ/টার্গেট গ্রুপের নিকট নিয়ে যাওয়া অপেক্ষা জ্ঞানগর্ভ সেমিনার সিম্পোজিয়াম আর তারকাযুক্ত হোটেলে প্রদর্শনীতে সীমাবদ্ধ করে ফেলার বাইরে তারা কিছু ভাবতে পারেন না। খুব স্পষ্ট করেই বলছি, এসব লোকদেখানো ও ফলাফলশূন্য চর্চার বিপরীতে দাঁড়িয়ে পর্যটন বিষয়ে অজ্ঞ এবং পর্যটন বিষয়ে জানা কিছু স্বপ্নবাজ মানুষের ব্যক্তিগত উদ্যোগের কারণেই দেশের পর্যটন একটা ভিত্তিতে দাঁড়িয়েছে। ইলিশকে পর্যটন পণ্য হিসেবে বিবেচনা করে আরও কিছু করা সম্ভব, যেমন-

পদ্মার ইলিশ

১. ইলিশের রাজধানী চাঁদপুর। ইলিশের রাজধানীতে একটা ইলিশ পার্ক আছে। চাঁদপুর কেন্দ্রিক বাণিজ্যের প্রধান পণ্য ইলিশ হলেও ইলিশ পার্কের অবস্থা খুবই নাজুক। অথচ পরিকল্পনামত পার্কটি গড়ে তুলতে পারলে ইলিশের পাশাপাশি শুধুমাত্র লোকেশনের সৌন্দর্য্যের কারণে পার্কটি স্বতন্ত্র পর্যটন স্পট হয়ে উঠতে পারে।

২. বাংলাদেশে ইলিশ উৎপাদনের পরিসংখ্যান থাকলেও ইলিশের চাহিদার গ্রহনযোগ্য পরিসংখ্যান নেই। তবে চাহিদার তুলনায় উৎপাদন কম এটি নিশ্চিত। এ কারণেই ইলিশ নিয়ে বিভিন্ন ধরণের কারসাজি চলে, অথচ ক্রেতারা মান অনুযায়ী ইলিশ যথাযথ দামে কিনতে চান। ক্রেতাদের সঠিক তথ্য ও সেবা দানের লক্ষ্যে চাঁদপুর, মাওয়া, মজু ব্যাপারীর হাট, গোয়ালন্দ, ভোলা অর্থাৎ ইলিশ আহরণ কেন্দ্রিক আড়ৎগুলোর বিক্রেতাদের এক্ষেত্রে প্রশিক্ষিত করে তোলা জরুরী। এই প্রতিটি আড়ৎ এবং আড়ৎ সংলগ্ন এলাকার পর্যটন কেন্দ্রগুলোকে সহজেই পর্যটন গন্তব্যে পরিণত করা যায়।

৩. পর্যটন পণ্য ইলিশকে কেন্দ্র করে সংশ্লিষ্ট জেলাগুলোর চেহারা বদলে দেওয়া সম্ভব। সঠিক পরিকল্পনা, অবকাঠামোর উন্নয়ন ও নির্মাণ আর পর্যটকদের সেবা নিশ্চিত করতে পারলে রীতিমত বিপ্লব ঘটিয়ে দেওয়া সম্ভব। তবে এসব ক্ষেত্রে সরকারের সদিচ্ছা সবার আগে দরকার।

৪. ঢাকাই এগ্রো এন্ড ফার্মস নিরাপদ খাদ্য নিয়ে কাজ করছে। আড়ৎ থেকে পাইকারি দামে ইলিশ এনে বেশী দামে বিক্রি করলেই তা লাভ হয়, এরপরও ক্রেতাদের ইলিশের আড়ৎ ঘুরে দেখানোর চেষ্টা করে, আহ্বান জানায়। ইলিশ পর্যটনে ভিশন ট্যুরস আর ঢাকাই-এর আগ্রহের মূল কারণ প্রধানত ৩টি- ক. ভিশন ট্যুরস ও ঢাকাই জানে ইলিশ শুধু মাছ নয়, ইলিশের গুরুত্ব মাছের চাইতে বেশী, খ. ক্রেতারা আড়ৎ ঘুরলে এবং ইলিশ কিনলে জানতে পারবেন ইলিশে ইলিশে পার্থক্য, দামের তারতম্যের কারণগুলো। গ. অভিজ্ঞ এবং স্মার্ট ক্রেতা যে কোনো সৎ ব্যবসায়ীর জন্য সম্পদ, এসব ক্রেতারা নিজেরাই নির্ধারণ করতে পারবেন ‘ঢাকাই’ কতটা ন্যায্য মূল্যে পণ্য বিক্রি করে।

ইলিশ বলে কিছু নেই, যা আছে তা হলো ব্যপক পর্যটন, বিনোদন ও বাণিজ্য সম্ভাবনা। এই সম্ভাবনাগুলোকে সম্ভব করতে খুব ক্ষুদ্র সামর্থ্য নিয়ে কাজ করছি আমরা, অন্যরাও এগিয়ে এলে এই সম্ভাবনাগুলোকে ‘সম্ভব না’ এর বৃত্ত হতে বের করে আনতে পারবো।

 

আবু সাঈদ আহমেদ
প্রধান নির্বাহী
ঢাকাই এগ্রো এণ্ড ফার্মস

Leave a Reply