শনির দশা কাটছেই না ইউএস বাংলার

Share on Facebook

দেশীয় এয়ারলাইন্সগুলোর মধ্যে ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্স অন্যতম সেরা একটি এয়ারলাইন্স। দিনে দিনে প্রতিষ্ঠানটি এগিয়ে চলছে সফলতার পথে। বাংলাদেশের আকাশ পথ আজ ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্সের একচেটিয়া দখলে প্রায়। ২০১৪ সালের ১৭ জুলাই দুটি ড্যাশ৮-কিউ৪০০ বিমান দিয়ে শুরু। মাত্র চার বছরেই বিমান কোম্পানিটি বহরে যুক্ত করেছে ৪টি বোয়িং ৭৩৭-৮০০ ও তিনটি ড্যাশ৮- কিউ৪০০ সহ রয়েছে মোট সাতটি এয়ারক্রাফট।

ধারাবাহিক সফলতায় আগামী নভেম্বর মাসে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের বহরে যুক্ত হচ্ছে দুটি বোয়িং ৭৩৭-৮০০ বিমান। এগুলোর প্রতিটিতে থাকছে ৮টি বিজনেস ক্লাস ও ১৫৯টি ইকোনমি ক্লাসের আসনসহ মোট ১৬৭টি আসন।

দূর্ভাগ্যজনকভাবে গত কিছুদিন থেকেই মাঝে মাঝেই সংবাদ শিরোনাম হচ্ছে ৪৫ হাজারের অধিক ফ্লাইট সফলভাবে পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানটি। এবারও গত ২৬ তারিখ ১৬৪ জন যাত্রী ও ৭ জন ক্রু নিয়ে ঢাকা থেকে কক্সবাজার যাচ্ছিল ইউ বাংলা এয়ারলাইন্সের বিএস ১৪১ ফ্লাইটটি। কক্সবাজার এয়ারপোর্টে অবতরণ করতে যান্ত্রিক সমস্যা (নোজ গিয়ার না খোলা) দেখা দেয়ায় ফ্লাইটটি চট্টগ্রামের শাহ আমানত বিমানবন্দরে এসে জরুরী অবতরণ করে বেলা সোয়া একটার দিকে।

ক্যাপ্টেন জাকারিয়ার অভিজ্ঞতা ও দক্ষতার উপর ভর করে বড় ধরনের দুর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা পায় বিমানটি। সেইসঙ্গে বেঁচে যান ক্রু ও যাত্রীরা। ১৯৯৬ সালে বিমানবাহিনীতে যোগ দেন জাকারিয়া। অবসর নিয়ে রিজেন্ট এয়ারওয়েজে যুক্ত হওয়ার মধ্য দিয়ে বেসামরিক বিমান চালানো শুরু করেন ক্যাপ্টেন জাকারিয়া। ৭ হাজার ঘণ্টা বিমান চালানোর অভিজ্ঞতা রয়েছে এই পাইলটের।

ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের বোয়িং ৭৩৭ বিমানটির জরুরি অবতরণের আগ মুহূর্ত প্রসঙ্গে ক্যাপ্টেন জাকারিয়া বলেন, ‘আমরা যখন কক্সবাজারে ল্যান্ড করার জন্য ফাইনাল অ্যাপ্রোচে, তখন আমাদের গিয়ার নামিয়ে প্রস্তুতি নিতে গিয়ে দেখা যায় নোজ ল্যান্ডিং গিয়ার নামছিল না। বারবার চেষ্টা করছিলাম, তারপরও নামছিল না। পরে নামতে না পেরে ঘুরে আবারও নামার জন্য চেষ্টা করি।

আমরা কক্সবাজার এয়ারপোর্ট অথরিটিকে বিষয়টি জানাই। এয়ারপোর্টকে জানিয়ে লো ফ্লাই করি, তারা যেন ফিজিক্যালি চেক করে দেখে যে আসলেই নোজ হুইল নামছে কিনা। ককপিট থেকে তো আমরা দেখতে পারছি না—নামলো কী নামলো না। অনেক সময় ককপিটের মনিটরে ভুল মেসেজও আসে।’ তিনি বলেন, ‘আমরা লো ফ্লাই করার পর এয়ারপোর্ট অথরিটিও জানালো, নোজ হুইল নামেনি। তখন আমরা ব্যাক সিটেমে রান করে আবারও চেষ্ট করলাম। তাতেও কাজ না হওয়ায় চট্টগ্রামে ডাইভার্ট হওয়ার সিদ্ধান্ত নেই।’

জরুরি অবতরণের সেই মুহূর্তের সেই বিবরণ তুলে ধরে জাকারিয়া বলেন, ‘ক্যারিয়ারে নানা ধরনের ঘটনা থাকে। ইমার্জেন্সি ল্যান্ডিংয়ের অভিজ্ঞতাও আছে। তবে এ ধরনের পরিস্থিতি এটাই প্রথম। প্রশিক্ষণের প্রতিটি বিষয় মাথায় রেখে ল্যান্ডিং করার চেষ্ট করেছি, যাতে বড় ধরনের কোনও ক্ষতি না হয়। ল্যান্ডিংয়ের আগে ক্রুদের ব্রিফ করে নিলাম, যাতে যাত্রীদের দ্রুত নিরাপদে বের করা যায়। যাত্রীদেরও তাদের করণীয় বিষয়গুলো সম্পর্কে জানানো হয়।’

জাকারিয়া বলেন, ‘কক্সবাজার ঘুরে আসার কারণে ফুয়েল আগেই কমানো সম্ভব হয়েছে। এতে ওজন যেমন কমছে, তেমনি আগুন ধরার ঝুঁকিও কমেছে। নামার সময় পেছনের গিয়ারে ভর করে সামনে এগিয়ে গেলাম। খেয়াল রাখলাম বিমানের গতি কমার আগ পর্যন্ত যেন সামনের অংশ ব্যালেন্সে রাখা যায়। আমার কো-পাইলটও যথেষ্ট বিচক্ষণ। তিনিও প্রয়োজনীয় মুহূর্তে সাপোর্ট দিয়ে গেছেন।’

সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে ক্যাপ্টেন জাকারিয়া বলেন, ‘সবার সহযোগিতা পেয়েছি। কক্সবাজার, চট্টগ্রাম বিমানবন্দর, বিমানবাহিনী সবাই সহযোগিতা দিয়েছে। সবার সহযোগিতায় একটি দুর্ঘটনা মোকাবিলা করা সম্ভব হয়েছে।’

Leave a Reply