পর্যটন শিল্পের বিকাশে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর ভূমিকা
Tweet
আধুনিক যুগ বিজ্ঞানের যুগ। বিজ্ঞানের কল্যাণে আবিষ্কার হচ্ছে নতুন নতুন প্রযুক্তির। আধুনিক প্রযুক্তির অনবদ্য সৃষ্টি বিভিন্ন ধরনের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো। স্বল্প সময়ে দ্রুত যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে এই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর কল্যাণে। ফেসবুক, ইন্সটাগ্রাম, হোয়াটসএপ, টুইটার লিংকডিন ইত্যাদি বর্তমান সময়ের জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। যদিও আমাদের দেশে ফেসবুক ব্যবহারকারীদের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। ইদানীং অবশ্য ইন্সটাগ্রামের প্রচলনও বেড়ে যাচ্ছে আগের তুলনায়। টুইটার খুব কমই ব্যবহৃত হচ্ছে এ দেশে। এই মাধ্যমগুলো আমাদের মধ্যে যোগাযোগের পাশাপাশি অভিজ্ঞতা শেয়ার করারও বিশাল সুযোগ করে দিয়েছে।
বাংলাদেশে পর্যটন শিল্প বিকাশের ক্ষেত্রে এই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো ভূমিকা রেখেছে চোখে পরার মতো। আমাদের দেশের পর্যটন স্থাপনা ও আকর্ষণগুলোকে প্রচার ও প্রসারের ক্ষেত্রে বিশেষ অবদান রেখেছে ফেসবুক ভিক্তিক ট্রাভেলিং গ্রুপগুলো। নতুন নতুন পর্যটন আকর্ষণগুলোকে তুলে ধরছেন ভ্রমণপিপাসুদের কাছে। পর্যটন কেন্দ্র থেকে ফেসবুক লাইভের মাধ্যমে উপস্থাপন করছেন বিভিন্ন বিষয়। নারায়ণগঞ্জ এর ফুলের গ্রাম সাবদি পরিচিত করার ক্ষেত্রে বেশ ভূমিকা রেখেছে ফেসবুক ভিক্তিক ট্রাভেলিং গ্রুপ বেড়াই বাংলাদেশ ও ট্রাভেল ম্যামোরিয়া।
আমাদের দেশটি কতটা বৈচিত্র্যময় তা নিয়ে আবার নতুন করে বলার কিছু নেই, প্রকতি যেন নিজ হাতে তাকে সকল দেশের রানী করেছে। সাগর, নদী,পাহাড়, বন, সমতল মিলে দেশটির সৌন্দর্য অপার মহীমায় মহিমান্বিত। আমাদের দেশের মাঝে এরকম অনেক স্থান আছে যা অনেকের ধারণার বাইরে। ফেসবুক গ্রুপগুলোর মাধ্যমে আমরা নতুন নতুন জায়গারও সন্ধান পাচ্ছি। ভ্রমণপ্রেমীদের জন্য আমাদের মাথায় সবার আগে কমন কিছু স্থানই ঘুরেফিরে আসে যেমন কক্সবাজারের সৈকতসমূহ, রাংগামাটি, খাগড়াছড়ি, সিলেটের চা বাগান, সেন্টমার্টিন, কুয়াকাটা, পাহাড়পুর, ময়নামতি, সুন্দরবন, বৌদ্ধবিহার ইত্যাদি।
সাম্প্রতিক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর মাধ্যমে কিছু ডেস্টিনেশন বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে; যেমন রুমা, বগা লেক,কেউকারাডং, থানচি, মেঘলা , শৈল প্রপাত, মিলনছড়ি, চিম্বুক পয়েন্ট, নাফাখুম, আমিয়াখুম, দেবতাখুম, সাজেক,কাপ্তাই লেক, আলিকদম, ডিম পাহাড়, আলীর গুহা, পাসিং পাড়া, সীতাকুণ্ড, গুলিয়াখালি বিচ,বাসবাড়িয়া বিচ,নিঝুম দ্বীপ ইত্যাদি। পূর্বে কতিপয় পর্যটকদের কাছে এই স্থানগুলোর সম্পর্কে তথ্য থাকলেও বিপুল প্রসারের পিছনে আছে ফেসবুকসহ অন্যান্য যোগাযোগ মাধ্যম।
বাংলাদেশে ফেসবুকে ভ্রমণ সংক্রান্ত শতাধিক ট্রাভেল গ্রুপ এবং পেইজ রয়েছে এগুলোর মাধ্যমে ভ্রমণ পিপাসুরা ভ্রমণ সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য জানতে পারছে। কিভাবে যাবে, কখন যাওয়া যাবে, কোন সময়টা ভ্রমণের জন্য ভালো, কেমন খরচ হবে বিভিন্ন ভাবে তথ্য দিয়ে সহায়তা করছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের এইসকল গ্রুপগুলো। আবার ব্যক্তিগত পোস্টগুলোর সাথে দেয়া ছবি অন্যদের আকর্ষণ করছে এই জায়গাগুলোতে ভ্রমণ করতে। এখন মানুষ যেখানেই ঘুরতে যাক না কেন সেগুলো তাদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে প্রকাশ করছে। তাতে করে মানুষ কোথায় ঘুরতে যাবে সেটার ধারণা পাচ্ছে।
আবার কিছু পেইজ বা গ্রুপ খোলা হয়েছে ব্যবসায়িক কাজে, তারা বিভিন্ন প্যাকেজ দিচ্ছে তাদের ক্রেতা অর্থাৎ ট্যুরিস্টদের জন্য। এতে করে একদিকে যেমন একটি স্পট পরিচিতি পাচ্ছে আর অন্যদিকে তারা ব্যবসায়িকভাবে লাভবান হচ্ছে। শুধুমাত্র পর্যটন বিকাশেই কাজ করছে না পর্যটন ব্যবসা প্রসারে ভূমিকা রাখছে বেশ। যেমন বেশির ভাগ এয়ারলাইনস, হোটেল,রিসোর্ট, ট্রাভেল এজেন্সি, ট্যুর অপারেটর, রেস্তোরাঁ ফেসবুক পেজ বা গ্রুপের মাধ্যমে তাদের সেবাগুলো মানুষের কাছে তুলে ধরছে।
ট্যুরিজম প্রোডাক্ট আর ডেস্টিনেশন গুলোর মার্কেটিং খুবই সহজে এবং কম সময়, কম খরচে চালানো যেতে পারে এই ফেসবুক, ইন্সটাগ্রাম এর সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমে। যেমন কেউ একজন দেশের কোনো গ্রামে বা জেলায় গিয়েছেন আর সেখানে কেমন উপভোগ করলেন, দেখার জন্য কি কি আছে এসকল অভিজ্ঞতা জানালেন ফেসবুকের মাধ্যমে, মিনিটেই তা দেখা যাচ্ছে অনেকের নিউজফিডে, ফলে নতুন কোনো স্থানের ধারণা পেতে পারে অনেকেই।
অনেকেই বিভিন্ন হোটেল, গেস্ট হাউজ, রিসোর্ট, রেস্টুরেন্টে গিয়ে সেগুলোর রিভিউ দিচ্ছেন এবং শেয়ার করে অনেকজনকে জানিয়ে দিচ্ছেন। অন্যদিকে পর্যটন ব্যবসায়ীরা লাভবান হচ্ছেন সামাজিক মাধ্যমে পরিচিতি পেয়ে। পরিচিতি লাভ, বাছাই করা, অভিজ্ঞতা শেয়ারের মাধ্যমে প্রচার ও প্রসার বাড়ছে পর্যটন খাতের। ভবিষ্যতে পরিকল্পিতভাবে উদ্যোগ নিলে এই মাধ্যমগুলো আরো ফল্প্রসু হয়ে উঠবে।
উম্মে খাদিজা অমি
শিক্ষার্থী, ট্যুরিজম এন্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগ, ড্যাফোডিল ইনিস্টিউট অব আইটি।