বাঘের হাট মসজিদ

Share on Facebook

খুলনা থেকে ১৫ মাইল দক্ষিণ পূর্ব দিকে এবং ঢাকা থেকে ২০০ মাইল দক্ষিণ পশ্চিম দিকে অবস্থিত বাগেরহাট। বাগেরহাটের অপর নাম ছিল খলিফাতাবাদ এবং এটি শাহী বাংলার পুদিনার শহর নামেও পরিচিত ছিল। তুর্কি সেনাপতি খান-ই-জাহান ১৫ শতকে এই শহরটি গড়ে তোলেন। বিশ্বের হারিয়ে যাওয়া ১৫টি শহরের একটি তালিকা তৈরী করেছিলো ফোর্বস, আর ৫০টির বেশি ইসলামিক স্থাপত্যের সমন্বয়ে তৈরী এই শহরটি এই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এই শহরটিকে ১৯৮৩ সালে ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসাবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ষাট গম্বুজ মসজিদ ঐতিহ্যবাহী স্থানগুলোর মধ্যে অত্যতম।

 

হযরত খানজাহান(রঃ) কর্তৃক তৈরি অপূর্ব কারুকার্য খচিত পাঁচ শতাব্দীরও বেশী পুরাতন বিশাল আয়তনের এ মসজিদটি তাঁর দরগাহ হতে প্রায় দেড় কিলোমিটার পশ্চিমে অবস্থিত। স্থাপত্য কৌশলে ও লাল পোড়া মাটির উপর লতাপাতার অলংকরণে মধ্য যুগীয় স্থাপত্য শিল্পে এ মসজিদ এক বিশেষ স্থান  দখল করে আছে। যদিও  এটি ষাটগম্বুজ মসজিদ নামে পরিচিত, কিন্তু প্রকৃত পক্ষে চতুস্কোনের  উপর চারটি গম্বুজসহ এখানে মোট ৭৪টি গুম্বজ আছে এবং মধ্যের সারির বাংলা চালের অনুরূপ ৭টি চৌচালা গম্বুজসহ এতে মোট ৮১টি গম্বুজ আছে। বিশেষভাবে লক্ষনীয় যে, এর প্রার্থনা কক্ষের চৌচালা ছাদ ও গম্বুজগুলি ইট ও পাথরের ৬০টি খাম্বার দ্বারা সমর্থিত খিলানের উপর নির্মিত।

 

অনেকের কাছে থেকে জানা যায় যে, হযরত খানজাহান (রঃ) ষাটগম্বুজ মসজিদ তৈরির জন্য সমুদয় পাথর সুদুর চট্রগ্রাম, মতান্তরে ভারতের উড়িষ্যার রাজমহল থেকে তাঁর অলৌকিক ক্ষমতা বলে জলপথে ভাসিয়ে নিয়ে এসেছিলেন। এ বিশাল মসজিদের চতুর্দিকে প্রাচীর ৮ফুট চওড়া, এর চার কোনে চারটি মিনার আছে। দক্ষিণ দিকের মিনারের শীর্ষে কুঠিরের নাম রোশনাই কুঠির এবং এ মিনারে উপরে উঠার সিড়ি আছে। মসজিদটি ছোট ইট দিয়ে তৈরী, এর দৈর্ঘ্য ১৬০ফুট, প্রস্থ ১০৮ ফুট, উচ্চতা ২২ফুট। মসজিদের সামনের দিকের মধ্যস্থলে একটি বড় খিলান এবং তার দুই পাশে পাঁচটি করে ছোট খিলান আছে। মসজিদের পশ্চিম দিকে প্রধান মেহরাবের পাশে একটি দরজাসহ মোট ২৬টি দরজা আছে। সরকারের প্রত্নতত্ত্ব ও যাদুঘর বিভাগ পুরাকীর্তি হিসেবে সংরক্ষণের জন্য এ ঐতিহাসিক মসজিদের দায়িত্বভার গ্রহণ করেছে । ইউনেস্কো এ মসজিদটি বিশ্ব ঐতিহ্য তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছে। ইউনেস্কো ঘোষিত বিশ্ব ঐতিহ্যের অন্তর্ভুক্ত এ মসজিদটি দেখতে দেশ-বিদেশের অগণিত পর্যটকরা সারাবছর ভিড় জমান। তবে এখানে ডিসেম্বর থেকে মার্চ সবচেয়ে বেশি পর্যটক আসেন। তাল, খেজুরের গাছ ঘেরা মসজিদটির সামনে দু’পাশে রয়েছে দু’টি শতবছরের রেইন ট্রি। জানা যায়, ১৯১৩ সালে ব্রিটিশ শাসনামলে এক বাঙালি সাইট পরিচালক কেনাট মাতব্বর গাছ দু’টি লাগান। বর্তমানে মসজিদটি আরও সুন্দরভাবে সাজানো হয়েছে যা পর্যটকদের দৃষ্টিনন্দনযোগ্য ।

 

এছাড়াও বাঘেরহাট চিংড়ি ও সুপারির জন্য বিখ্যাত

Leave a Reply