কোমর ব্যথা হলেই কি বেল্ট ব্যবহার করবেন?

Share on Facebook

কোমর ব্যথা হলেই কোমরের বেল্ট (lumbar corset) যেমন ঢালাওভাবে সবাইকে পড়াটা সঠিক নয়, তেমনি “কোনো প্রয়োজন নেই” এ কথাও রোগীর কষ্টকে বাড়িয়ে দিতে পারে। রোগীর গল্পটা জানা অনেক বেশি জরুরী। সে যখন অকপটভাবে নিজের কথাগুলো বলতে থাকে।

অনেকদিন পর এক বছর আগের রোগীর এমআরআই ছবিটা আজ পোস্ট করলাম। চমৎকার কিছু শেখার জিনিস ছিল তাই পোস্ট করা। এই এমআরআইয়ের মালিক প্রথম যেদিন সাক্ষাতে এলেন, আগের দিন হতে অসম্ভব কোমর ব্যথা।

রোগের শুরুর ইতিহাসটা ছিল খুবই সিগনিফিকেন্ট। মোটরসাইকেল গ্যারেজ উঠাতে গিয়ে কট করে ওঠা আর পুরো মেরুদন্ড জুড়ে ভয়ানক ব্যথা। সামনে পেছনে কোনভাবে বাঁকা হতে পারছিলেন না। আমাদের সন্দেহ ছিল অ্যানুলার টিয়ার। তাকে পূর্ণ বিশ্রামে পাঠিয়ে দেওয়া হলো বাধ্যতামূলক কোমরের বেল্ট ব্যবহার করার জন্য খুব শক্ত ভাবে বলে ব্যথানাশক অন্যান্য ওষুধগুলো দিয়ে দেওয়া হল। বিছানা থেকে বেল্ট উপরে উঠবে, বেল্ট পড়ে হাঁটবে ও শোবার পরেই বেল্ট খুলবে।

ডিস্কের দেয়াল, তার নামই “অ্যানুলাস ফাইব্রোসাস” আর যখন সেটি ছিড়ে জেলির মত “নিউক্লিয়াস” বের হয়ে আসতে চেষ্টা করে, তখনই সেটাকে আমরা বলি অ্যানুলার টিয়ার। এসিডের মত জেলি যখন অ্যানুলাসের কোমল শরীর স্পর্শ করে তখন সে ভয়ানক বেদনায় আত্মচিৎকার করতে থাকে। এতে প্রাথমিক অবস্থায় কোন ধরনের পায়ে ব্যথা নামা বা রেডিকুলোপ্যাথি নাও থাকতে পারে।

কিন্তু মাথা থেকে শুরু করে শরীরের ওজন যেই পথ ধরে নামে, আহত ডিস্কের অবস্থান তো ঠিক সেই পথেই। এমতাবস্থায় তাকে সাপোর্ট দিয়েই ধরে রাখতে হবে। তা না হলে আঘাতের পরে আঘাত রোগীর অবস্থা আরও সঙ্গীন করে তুলবে। বাঙালি গবেষক রোগী আরো নানা জনের সাথে আলাপ করে বেল্ট এর বিপরীত মন্তব্য শুনে সেটা ছেড়ে দিল। ২৪ ঘন্টার মধ্যে যা হবার তাই হল। দ্বিতীয়বার দেখার সুযোগ যখন হলো সে ইতিমধ্যে পুরোপুরি বাঁকা হয়ে হাঁটছে। এবার প্রেসক্রিপশনের সাথে বকা ফ্রী। মেরুদন্ডের কলাম যখন আনস্টেবল থাকে তখন সেখানে বেল্ট লাগাতে হয়। অ্যানুলার টিয়ারের অন্তর্গত।

কতদিন পড়বেন? সাধারণ টিস্যুর হিলিং টাইম কমপক্ষে এক মাস আর যেহেতু এটি অভ্যন্তরের দৃশ্য সেক্ষেত্রে আরও বেশি সময় লাগতে পারে। তবে ধীরে ধীরে কোমরে বেল্ট পড়ার সময় কমিয়ে দেওয়া হবে। একসময় শুধু ভ্রমণের ক্ষেত্রে ব্যবহার নির্দেশিত হবে। অতএব প্রাথমিক অবস্থায় সর্বনিম্ন পর্যায়ে ব্যথা না নামা পর্যন্ত এটি চলবে। শুরুর দিকে কোন ধরনের অননুমোদিত ব্যায়াম রোগের জন্য বিপদ ডেকে আনতে পারে। সে ক্ষেত্রে অধিক পরিমাণ জেলি বের হয় পেছনে থাকা নার্ভের উপর চাপ দিয়ে সায়াটিকা তৈরি করতে পারে। কিন্তু ভালো হওয়া ও ভবিষ্যতে ভালো থাকার জন্য ফিজিক্যাল থেরাপি, ব্যায়াম ও ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখার কোনো বিকল্প নেই।

এ সমস্যার ক্ষেত্রে সুখবর হল শরীরের নিজের ক্ষত শুকোবার নিয়মে, এটিও শতভাগ ভালো হয়ে যেতে পারে। মানুষ মেরুদন্ডী প্রাণী। মেরুদন্ড আপনাকে দাঁড় করিয়ে রাখে। সুতরাং মেরুদন্ডের যত্ন নিন।

Leave a Reply