পারস্য কবি জালালুদ্দিন রুমির প্রেমবচন

Share on Facebook

জালালুদ্দিন মুহাম্মদ রুমি ছিলেন ১৩ শতকের কবি, আইনজ্ঞ, ধর্মতাত্ত্বিক, অতীন্দ্রবাদী এবং সুফি সাধক। রুমি নামেই তিনি সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়। এই সুফি সাধক ১২০৭ সালে পারস্যে জন্মগ্রহণ করেন, এবং ১২৭৩ সালের ১৭ ডিসেম্বর পরলোক গমন করেন। তার বাণী যুগে যুগে মানুষকে শুদ্ধচিন্তার পথ খুঁজে দিয়েছে। রুমির দর্শনের মূল সুর মূলত প্রেম। জগৎ সৃষ্টি প্রেমের ফলস্বরূপ। মহাবিশ্ব টিকেও আছে প্রেমের ওপর ভিত্তি করেই। রুমি তার কবিতায় প্রেম বিষয়ে যেসব বচন দিয়েছেন, বিভিন্ন মাধ্যম থেকে সেগুলো একত্রিত করে পাঠকের সামনে তুলে ধরা হলো—

১.
প্রেমই মুক্তি, প্রেমই শক্তি, প্রেমই পরিবর্তনের গুপ্তশক্তি, প্রেমই দিব্য সৌন্দর্যের দর্পন স্বরূপ।
২.
আমার প্রথম প্রেমের গল্প শোনামাত্র তোমাকে খুঁজতে থাকি। কিন্তু জানি না ওটা কতটা অন্ধ ছিল। প্রেম আসলে কোথাও মিলিত হয় না। সারাজীবন এটা সবকিছুতে বিরাজ করে।
৩.
আমি আমার জন্য মরে গেছি এবং বেঁচে আছি তোমার কারণে।
৪.
বিদায় শুধু তারাই বলে যারা শুধু চোখ দিয়ে ভালোবাসে, যারা মনে করে চোখের দেখাই হলো একমাত্র ভালোবাসা। যারা আত্মা আর হৃদয় দিয়ে ভালোবাসে তাদের কাছে কোনো বিদায় নেই। কারণ আত্মা আর হৃদয় থেকে দূরে যাওয়া সম্ভব নয়।
৫.
ভালোবাসা হচ্ছে সংযোগ রেখা তোমার আর সকলের মাঝে।
৬.
তুমি চলে গেলে আমার চোখ দিয়ে রক্ত বাহিত হলো। আমি কেঁদে কেঁদে রক্তের নদী বইয়ে দিলাম। দুঃখগুলো শাখা প্রশাখায় বড় হলো, দুঃখের জন্ম হলো। তুমি চলে গেলে, এখন আমি কিভাবে কাঁদবো! শুধু তুমি চলে গেছো তাই নয়, তোমার সাথে সাথে তো আমার চোখও চলে গেছে। চোখ ছাড়া এখন আমি কিভাবে কাঁদবো প্রিয়!
৭.
কোনটা ভালো আর কোনটা মন্দ? এই দুইটি ধারণার মাঝে আরেকটি ধারণা আছে, আছে আরেকটি জগৎ। আমি তোমার সাথে সেখানেই দেখা করবো প্রিয়।
৮.
মনের যত গভীরে বাস করবে ততই হৃদয়ের দর্পন পরিষ্কার হতে থাকবে।
৯.
ধৈর্যের মর্ম কেবল নিবিষ্ট হওয়া বা অপেক্ষমান থাকা নয়, বরং তা হলো দূরদর্শন করতে পারা। যার অর্থ, কাঁটার দিকে চেয়েও গোলাপ দর্শন করা। রাতের মাঝেও দিন দেখা। প্রেমীরাই ধৈর্যশীল, আর অবগত যে চন্দ্রেরও কিছু সময় প্রয়োজন হয় পূর্ণ রূপে মোহিত হতে।
১০.
প্রত্যেকে অদেখাকে তার হৃদয়ের স্বচ্ছতার অনুপাতে দেখতে পায়।
১১.
যা গত হয়, তা ফিরেও আসে। ফিরে এসো। আমরা পরস্পরকে কখনোই ত্যাগ করিনি।
১২.
যদি তুমি কারো হৃদয়কে জয় করতে চাও, তাহলে প্রথমে অন্তরে ভালবাসার বীজ রোপণ করো। আর যদি তুমি জান্নাত পেতে চাও তাহলে অন্যের পথে কাঁটা বিছানো ছেড়ে দাও।
১৩.
বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সবচেয়ে সুন্দর জায়গা হলো তোমার হৃদয়ের গভীরতম স্থান, যেথা হতে জীবনের সূত্রপাত হয়।
১৪
যখন আমরা প্রত্যাশা, হিসাব আর চুক্তি ছাড়া কাউকে ভালবাসি; তখনই আমরা প্রকৃত অর্থে জান্নাতে বাস করি।
১৫.
ঈশ্বরের প্রেমে তোমার আত্মাকে উৎসর্গ করো। শপথ করে বলছি, তা ছাড়া অন্য কোনো পথ নেই।
১৬.
যে হৃদয় জ্বলে প্রেমের আগুনে তার প্রত্যেক কথাই হৃদয়ে ঝড় তোলে।
১৭.
তুমি তোমার হৃদয়ের কোমলতাকে খুঁজে বের করো, এরপর তুমি সব হৃদয়ের কোমলতাকেই খুঁজে পাবে।
১৮.
কোনো রকম না ভেবেই প্রেমে নিজেকে সঁপে দাও।
১৯.
দৃষ্টিশীল হও, স্রষ্টার মহানুভবতা হঠাৎ আবির্ভূত হয়। আর তা কোনো পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই উন্মুক্ত হৃদয়ের কাছে আসে।
২০
ভালোবাসায় পরিপূর্ণ হৃদয় ঠিক যেন আগুন পাখির মতো, যাকে কোনো খাঁচায়ই বন্দি করা সম্ভব নয়।
২১.
শব্দের অনুসন্ধান বাদ দাও। হৃদয়ের জানালা খুলে দাও এবং তোমার অন্তরাত্মাকে বের হয়ে উড়তে দাও।
২২.
তুমি কেবল দৃষ্টির সীমারেখা থেকে চলে গিয়েছ, হৃদয়ের অন্তঃস্থল থেকে নয় হে প্রিয়; সেখানে তুমি সর্বদা বিরাজমান।
২৩.
যদি তুমি চন্দ্রের প্রত্যাশা কর, তবে রাত্রি থেকে লুকিয়ো না। যদি তুমি একটি গোলাপের আশা কর, তবে তার কাঁটা থেকে পলায়ন করো না। যদি তুমি প্রেমের প্রত্যাশা কর, তবে আপন সত্তা থেকে লুকিয়ো না।
২৪.
অন্ধকার হয়ত বৃক্ষ বা ফুলকে দৃষ্টিসীমা থেকে লুকিয়ে ফেলতে পারে, কিন্তু হৃদয়ে প্রস্ফুটিত সত্য ভালোবাসাকে আড়াল করতে পারে না।
২৫.
যদি থাকে অতুল, তবে দান কর তোমার সম্পদ। যদি থাকে সামান্য, তবে দান কর তোমার হৃদয়।
২৬.
যে মুহূর্তে আমি প্রেমের কাহিনী শুনলাম, আমি তোমাকে খুঁজতে লাগলাম। না জেনেই যে তা কত অন্ধ ছিল, প্রেমিকেরা অবশেষে মেলে না কোথাও। কারণ তারা সব সময়ই পরস্পরের মধ্যেই বিদ্যমান থাকে।
২৭.
প্রেম কোন জ্ঞান বা বিজ্ঞান নয়, বই বা কাগজও নয়। অন্যরা যা বলে তা কখনোই প্রেমের পথ হতে পারে না।
২৮.
আমি পূর্বে হয়ত প্রেমের বর্ণনা দিয়েছি, কিন্তু সত্যিকারে যখন প্রেমকে অনুভব করেছি তখন বাকরুদ্ধ হয়েছিলাম।
২৯.
পৃথিবী আয়না ছাড়া আর কিছুই না, যা ভালবাসার নিখুঁত অবয়ব প্রতিফলিত করে।
৩০
যদি সত্যি সত্যিই মানুষ হয়ে থাকো, তবে প্রেমের জন্য সবকিছু বাজি ধরো।

Leave a Reply