কাচ্চি বিরিয়ানি রেসিপি

Share on Facebook

কাচ্চি বিরিয়ানির কাচ্চি শব্দটি এসেছে উর্দু কাচ্চা শব্দটি থেকে, যার বাংলা অর্থ কাঁচা। যেহেতু  এটি সেদ্ধ ছাড়া খাসির মাংস টকদই দিয়ে মাখিয়ে তার উপর আলু আর চালের আস্তরণ দিয়ে রান্না করা হয়, তাই এর নাম হয়েছে কাচ্চি বিরিয়ানি। এটি হিন্দি এবং উর্দুতেও একই নামে পরিচিত।

কাচ্চি বিরিয়ানির জন্ম মধ্য এশিয়ার দেশগুলোতে। তাজিকিস্তান ও উজবেকিস্তানের লোকেদের পছন্দ ছিল লাল মাংস (খাসি/ভেড়ার মাংস)। এই লাল মাংস দিয়েই কাচ্চির প্রচলন শুরু করে শীতপ্রধাণ এই অঞ্চলের মানুষগুলি। চাল, মাখন, লবণ, গোলমরিচ, এলাচ আর স্থানীয় মসলা জয়ফল সহযোগে একটি খাবার প্রস্তুত করতো তারা। তৈমুরের শাসনের শেষ দিকে যখন সমরখন্দের বাড়বাড়ন্ত, তখনই সম্ভবত এই খাবারের প্রচলন হয়। ভারত উপমহাদেশে ১৬১০ সালে কাচ্চি বিরিয়ানির প্রচলন শুরু হয় যখন মুঘল সুবেদার এবং অন্যান্য উচ্চপদস্থ আধিকারিকরা ঢাকায় প্রশাসন পরিচালনা করতে আগমণ করেন। তাদের বেশিরভাগ বর্তমান ভারতের লখনউ থেকে এসেছিলেন এবং তারা তাদের সাথে ব্যক্তিগত রাঁধুনি নিয়ে আসেন। পরবর্তীতে অনেক সুবেদার ঢাকা থেকে স্থানান্তরিত হয়ে গেলেও কিছু রাঁধুনি ঢাকাতেই রয়ে যান এবং স্বল্প পরিসরে নিজস্ব দোকান প্রতিষ্ঠা করে কাচ্চি বিরিয়ানি খাবারটিকে ঢাকায় বাঁচিয়ে রেখে মোগলাই আহার ও আপ্যায়নের ঐতিহ্যকে সমৃদ্ধ করতে থাকেন। এটি ধীরে ধীরে ঢাকার স্থানীয় খাবারগুলোর পাশাপাশি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে এবং একটি অনন্য স্বাদ তৈরি করে, সাধারণ মানুষের মন জয় করে এবং আস্তে আস্তে তাদের খাদ্য তালিকায় নিয়মিত অংশে পরিণত হয়।

উপকরণঃ

১. খাসির মাংস ১ কেজি
২. আদা বাটা দেড় টেবিল চামচ
৩. রসুন বাটা দেড় টেবিল চামচ
৪. টকদই আধা কাপ
৫. জর্দার রং বা জাফরান পছন্দ মতো
৬. দারুচিনি গুঁড়ো আধা চা চামচ
৭. এলাচ গুঁড়ো আধা চা চামচ
৮. লবঙ্গ ৩/৪ টি
৯. জয়ত্রী ১ চিমটি
১০. জিরা গুঁড়ো ১/৮ চা চামচ
১১. আস্ত দারুচিনি ২ খণ্ড
১২. চিনি ১ চা চামচ
১৩. গোলমরিচ গুঁড়ো আধা চা চামচ
১৪. পেস্তা বাদাম ১ মুঠো
১৫. তেজ পাতা ৩ টি
১৬. আলু (৪ খণ্ড করে কাটা) ২ টি
১৭. পেঁয়াজ বেরেস্তা- পরিমাণ মতো
১৮. লবণ- স্বাদমতো।
১৯. পোলাওয়ের চাল- আধা কেজি (তুলশীমালা চাল, কালিজিরা চাল, চিনিগুড়া চাল ইত্যাদি তবে বাসমতী চাল হলে সবচেয়ে ভালো হয়)

প্রস্তুত প্রণালীঃ

মাংস রান্না করার আগে ভালো করে ধুয়ে লবণ পানিতে ভিজিয়ে রাখুন কয়েক ঘণ্টা। মাংস লবণে থাকার কারণে নরম হয়ে যাবে এবং সহজে সেদ্ধ হবে। এরপর ধুয়ে রান্না করবেন। এরপর দইয়ে দারুচিনি ও এলাচি গুঁড়ো, জর্দার রং মিশিয়ে দই মাংসে দিয়ে ভালো করে মিশিয়ে নিন। তারপর জয়ত্রী, গোলমরিচ, আদা-রসুন বাটাসহ বাকি সব মসলা মাংসে দিয়ে মাংস ভালো করে মেখে নিন। চাল পানিতে আলাদাভাবে সেদ্ধ করে নিন। পেঁয়াজ বেরেস্তা করে নিন ও সাথে আলুর টুকরাগুলো ভেজে নিন। এরপর মসলা মাখানো মাংস রান্নার পাত্রে ঢেলে সাজিয়ে নিন। তার ওপর ভাজা আলু ও পেঁয়াজ বেরেস্তা ছড়িয়ে দিন। এবার মাংসের ওপরে সেদ্ধ চাল সমান করে বিছিয়ে নিন। পাত্রটি চুলায় বসিয়ে দিন এবং পাত্রের মুখে ঢাকনা দিয়ে চারপাশ আটা দিয়ে বন্ধ করে দিন যাতে ভাপ বাইরে বেড়িয়ে যেতে না পারে। তিন থেকে চার ঘণ্টার মধ্যে তৈরি হয়ে যাবে কাচ্চি বিরিয়ানি। এরপর মুখের ঢাকনা খুলে একটি নাড়ুনি দিয়ে এক দুইবার হালকা ভাবে নেড়ে মাংসের সাথে চাল মিশিয়ে নিন। হালকা ভাবে নাড়বেন, তা না হলে চাল ভেঙে যাবে। তৈরি হয়ে গেলে পরিবেশন করুন ‘কাচ্চি বিরিয়ানি’।

Leave a Reply