ইতালিয়ান ফুটবল ইতিহাসের সর্বকালের অন্যতম সেরাদের একজন টট্টি।

Share on Facebook

মোহাম্মদ আলী শাহঃ পৌরাণিক কাহিনিতে হারকিউলিসের দুই সন্তানের একজনের নাম ছিল রোমিউলাস আর অন্যজন রেমাস। জ্যোতিষের ভবিষ্যৎবাণী ছিল এই দু’জন মিলে রাজাকে পরাজিত করবেন। রাজা এমিউলিয়াস জ্যোতিষের ভবিষ্যৎবাণী শুনে এতটাই ভীত হয়ে পড়েন যে, শিশু রোমিউলাস এবং রেমাসকে মেরে ফেলার নির্দেশ দেন। যাকে মেরে ফেলার দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল, তিনি যমজ শিশু দু’জনের হাসিমুখ দেখে তাদেরকে না মেরে তাইবার নদীতে ভাসিয়ে দেন এবং ফিরে এসে রাজাকে মিথ্যে বলেন। এক নেকড়ে মা নদীর পাড়ে দু’জন শিশুকে ভেসে থাকতে দেখে তাদের উদ্ধার করেন। নেকড়ে মায়ের সান্নিধ্যে শিশু দুই ভাই জঙ্গলেই বসবাস করতে থাকেন। এমনকি সেই নেকড়ে মায়ের দুগ্ধ পাণ করে দু’জন বড় হয়। পরবর্তিতে তারা যুবক হয়ে সেই রাজ্যে ফিরে গিয়ে রাজাকে পরাজিত করেন। দুই ভাই নিজেদের শহর প্রতিষ্ঠা করেন এবং সেই সাম্রাজ্যের একক রাজা হবার বাসনায় সহোদর রেমাসকে হত্যা করেন রোমিউলাস। রোমিউলাসের নাম থেকেই রোমের নামকরণ করা হয়।

রোম নগরীকে ঘিরে এই পৌরাণিক গল্পটি বেশ পুরোনো এবং জনপ্রিয়। এ.এস. রোমা’র লোগোর পেছনের ইতিহাস ছিল এই গল্পটি।

লয়্যাল শব্দটি শোনার পর পরই যে ক’জন ফুটবলারের নাম ব্রেণে চলে আসে, সেই এলিট লিস্টের অন্যতম সেরা দুটি উদাহরণ হচ্ছেন— পাওলো মালদিনি এবং ফিলিপ লাম। পুরো ফুটবল ক্যারিয়ারে উনাদের প্রত্যেকেই যুবদল থেকে সিনিয়র দলে উঠে আসেন এবং নিজেদের ক্যারিয়ারের ইতি টানেন। যুবদল থেকে উঠে এসে সিনিয়র দলের হয়ে খেলে ফুটবলকে বিদায় জানিয়েছেন এই লিস্টটা ইতিহাসে খুব বড় নয়। এমন খেলোয়াড়দের শুধু তাদের নিজেদের সমর্থকরাই নয়, পুরো পৃথিবীর ফুটবল সমর্থকরা ভালবাসেন, সম্মান প্রদর্শন করেন।

রোমিউলাস থেকে তারকুইনিয়াস পর্যন্ত মোট সাতজন রাজা ছিলেন রোম সাম্রাজ্যে। রাজাদের নাম শোনার সাথে সাথেই চোখের সামনে ভেসে আসে যুদ্ধবিগ্রহ, রক্তাক্ত প্রান্তর, রাজনৈতিক টানাপোড়েন, রাজ্যজয়, শত্রু-মিত্র পক্ষের চক্রান্ত ইত্যাদি ইত্যাদি।

অথচ এসবের কিছু না করেও একজন মানুষকে রোমের সকল মানুষ নিজেদের অষ্টম রাজা হিসেবে গণ্য করেন। রোমের মানুষ মনেপ্রাণে বিশ্বাস করেন, তিনিই তাদের শেষ রাজা। কে তিনি?

ফ্লোরেন্তিনো পেরেজ সাহেব যখন গ্যালাক্টিকোস বানানোর স্বপ্ন দেখা শুরু করেন, তখন উনার অন্যতম টার্গেট ছিল তিনি। উনাকে দলে ভেড়ানোর জন্য বারবার এজেন্ট পাঠিয়েছেন, এমনকি শেষমেশ নিজেও একবার ছুটে গিয়েছিলেন। আকাশচুম্বী বেতন কিংবা শিরোপা প্রাপ্তির লোভ কোন কিছুই উনাকে প্রলুব্ধ করতে পারেনি। সিনিয়র দলের হয়ে পঁচিশ বছর, আমি আবারও বলছি পঁচিশ বছর খেলে জিতেছেন মাত্র একটি লীগ শিরোপা। এমনকি একটিও চ্যাম্পিয়ন্স লীগ শিরোপা জিতেন নি! [প্লিজ এই লাইনটি আবার পড়ো]

অথচ একবার যদি চাইতেন, রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে হয়ত একাধিক শিরোপা জিততে পারতেন, হয়ত একাধিক চ্যাম্পিয়ন্স লীগও জিততে পারতেন!?

পাওলো মালদিনি কিংবা ফিলিপ লামের প্রতি সর্বোচ্চ সম্মান প্রদর্শন করেই বলছি— কারন উনারা প্রত্যেকেই নিজেদের ক্লাবের প্রতি সর্বোচ্চ লয়্যাল ছিলেন, প্রত্যেকেই ফুটবল ইতিহাসের অন্যতম সেরাদের একজন। পাশাপাশি দু’জনেরই দলীয় প্রাপ্তি ভান্ডারও সুবিশাল। আমি ব্যক্তিগতভাবে এই দু’জন লিজেন্ড থেকেও শুধুমাত্র লয়্যালটির বিবেচনায় ফুটবলে সবচেয়ে বেশি যাকে এগিয়ে রাখি, তিনি হচ্ছেন L’Ottavo Re di Roma (The Eighth King of Rome), এ.এস. রোমা’র ইতিহাসের সর্বকালের সেরা, ইতালিয়ান ফুটবল ইতিহাসের সর্বকালের অন্যতম সেরাদের একজন, The Gladiator ফ্রাঞ্চেস্কো টট্টি।

ফুটবলার হিসেবে লয়্যালটির এরচে’ বড় উদাহরণ আর ইতিহাসে নেই। অনেকদিন থেকেই ভাবছিলাম উনাকে নিয়ে ছোট একটা লেখা লিখবো। ট্রাস্ট মি, এমন একজন ফুটবলারকে নিয়ে এই লেখাটি লিখতে পেরে সত্যিই এখন দারুণ অনূভব করছি।

Leave a Reply