নদী রক্ষায় বরাদ্দের ৭০% যায় পকেটে, সাব-রেজিস্ট্রারকে জবাবদিহিতার মধ্যে আনতে হবে : কমিশন চেয়ারম্যান

Share on Facebook

 

নদীর সুরক্ষায় নেওয়া প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে বরাদ্দ অর্থের ‘সিংহভাগ নিয়ে’ দুর্নীতি হয় বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান হাওলাদার।

শনিবার সন্ধ্যায় ‘নদী ভাঙন ও সিকস্তি-পয়স্তি আইন’ শিরোনামে নদী অধিকার মঞ্চ আয়োজিত এক অনলাইন সভায় তিনি এ কথা বলেন।

নদীকে ‘শোষণ’ করা হচ্ছে মন্তব্য করে মুজিবুর রহমান হাওলাদার বলেন, “নদী দখল-দূষণ বন্ধ করা, নাব্যতা ফিরিয়ে আনার জন্য যে প্রকল্পগুলো নেওয়া হচ্ছে, তার ৫০ শতাংশ সঠিকভাবে ব্যয় হয়- এ আশার বাণী আমাকে কেউ শোনায়নি। বরং তারা বলে, কমপক্ষে ৭০ শতাংশ, একশ টাকা হলে ৭০ টাকা নাই; পকেটে নিয়ে যায়।”

নদী নিয়ে ‘অববাহিকা ভিত্তিক’ নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরামর্শ রেখে তিনি বলেন, “নদী খননের বিকল্প নেই; তবে সঠিকভাবে ড্রেজিং করতে হবে।”

পানি উন্নয়ন বোর্ড নিজেদের প্রকৌশলী দিয়ে কেন কাজগুলো করাতে পারে না, কেন সব কাজ ঠিকাদারের দিতে হয়, সেই প্রশ্নও তোলেন নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান।

তিনি বলেন, তারা যায় ড্রেজিংয়ে, তাদের ড্রেজার নাই। ড্রেজিং কীভাবে করতে হয়, তাও তারা জানে না। একটা মাত্র ইঞ্জিনিয়ার যায় কি যায় না… বলে সব দোষ ঠিকাদারের।

নদী সংশ্লিষ্ট প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে দায়িত্বপ্রাপ্তদের ‘মনিটরিং’ করার উপর গুরুত্ব দিয়ে তিনি বলেন, “সে দুর্নীতি করে, না কী করে, তা নিয়ে আসতে হবে।… এমনকি আমার বিরুদ্ধেও লাগাতে হবে, যে নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান কী করে? না হলে বুঝবে কী করে যে আমি কী কাজ করছি? এটা সরকারের কাছে কীভাবে রিপোর্টিং হবে?”

হাই কোর্ট গত বছর জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনকে নদীর ‘আইনগত অভিভাবক’ ঘোষণা করে। তবে কমিশনের চেয়ারম্যান সভায় বলেছেন, চিঠি দেওয়া হলেও মন্ত্রণালয়গুলো সাহায্য করতে ‘চায় না’।

ভাঙনের কারণে নদীগর্ভে চলে যাওয়া জমি বেচাকেনা করার আইনগত সুযোগ নেই জানিয়ে এক্ষেত্রে স্বচ্ছতা আনতে বলেন ভূমি মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব মুজিবুর রহমান হাওলাদার।

তিনি বলেন, “সিকস্তি যেটি হয়ে যায়, সেই জায়গাটা তো ট্রান্সফার হতে পারে না; আইনের চোখে পারমিট করে না। সাব-রেজিস্ট্রারকে জবাবদিহিতার মধ্যে আনতে হবে, রেজিস্ট্রারকে জবাবদিহিতার মধ্যে আনতে হবে।”

প্রতিবছর নদী ভাঙনের মুখে পড়লেও এ পরিস্থিতি পরিবর্তনে যথাযথ পরিকল্পনা নেই বলে মন্তব্য করেন সেন্টার ফল ক্লাইমেট চেইঞ্জ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল রিসার্চের উপদেষ্টা এবং ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আইনুন নিশাত।

তিনি বলেন, “আমরা কিন্তু হাজার কোটি টাকা খরচ করছি প্রতি বছর। ড্রেজিংয়ের নামে হিউজ টাকা খরচ হচ্ছে এখন। সব বৃথা যাবে, নদীর কোনো উপকার হবে না। নদীর দুই তীরের লোকের কোনো উপকার হবে না। কিন্তু কিছু লোকের পকেট ভারী হবে।”

নদীতে ‘কে বা কারা জমি কিনে রাখে’- সেই প্রশ্ন রেখে আইনুন নিশাত বলেন, “চর উঠলে যে লোক খাজনা দিয়েছে, সে নিজেকে চরের মালিকানা দাবি করে; পদ্মা সেতু নির্মাণের জন্য সরকারকে নদীর মধ্যখানের জমিও কিনতে হয়েছে।”

এ প্রসঙ্গে সাবেক ভূমি প্রশাসন, ভূমি সংস্কার ও ভূমি রাজস্ব ও বন্যানিয়ন্ত্রণ, পানিসম্পদ ও বিদ্যুৎ মন্ত্রী প্রয়াত আবদুর রব সেরনিয়াবাতের নেওয়া পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন আইনুন নিশাত।

তিনি বলেন, “সেরনিয়াবাত আইন করলেন; জমি ভেঙে গেলে ডিসির কাজ হবে ওটা রেকর্ড করা, ওটা সরকারি হয়ে যাবে।” পানি উন্নয়ন বোর্ড যে বাঁধ বানায়, তার ‘নদীর সাথে ফাইট করার’ ক্ষমতা নেই বলেও মন্তব্য করেন আইনুন নিশাত।

বিভিন্ন নদী এলাকা পরিদর্শনের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে তিনি বলেন, যে জমি নদীগর্ভে চলে গেছে, তার জন্যও বছর বছর খাজনা দিয়ে যাচ্ছে মানুষ। তাদের লক্ষ্য, নদী সরে গেলে যখন সেখানে চর জাগবে, তারা সেই জমি ‘ক্লেইম’ করবে।

নদী অধিকার মঞ্চের সদস্য সচিব শমশের আলীর সঞ্চালনায় অন্যদের মধ্যে সংগঠনের সহ-আহ্বায়ক রাশেদ রিপন, ভূমি ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ ফায়েকুজ্জামান চৌধুরী, নদী অধিকার মঞ্চ ভারতের আহ্বায়ক তরিকুল ইসলাম, নেপালের সহ-আহ্বায়ক ভিরাজ কুশওয়াহা কথা বলেন।

Leave a Reply