ফেডারেশন কাপের ফাইনালে রোমাঞ্চকর ম্যাচটি জিতে নেয় সাদা-কালো বাহিনীরা।

Share on Facebook

ফুটবল ক্লাবের কথা স্মরণ করলেই সবার মনে চলে আসে আবহানী-মোহমেডান এর কথা।ঢাকার ঐতিহ্যবাহী ক্লাব দুটোর খেলা হলে তা ঢাকা ডার্বি হিসেবে বলা হয়ে থাকে।সোনালি দিনের সেই রাইভালিটি এখনো মানুষের মনে গাঁথা।আবহানী-মোহমেডান খেলাকে কেন্দ্র করে সেই সোনালি যুগেই ছিল মানুষের উত্তেজনা। কালের বিবর্তনে যার তেজ কিছুটা কমেছে।লীগে প্রতি বছর ঢাকা ডার্বি খেলা অনুষ্ঠিত হলেও ফুটবল প্রেমীদের মনে তেমন উৎসাহ উদ্দীপনা যোগাতে পারে না।এভাবেই কেটে গিয়েছে বেশ অনেক বছর।

১৪ বছর পর ফেডারেশন কাপের ফাইনালে আবহানী-মোহমেডান। ফাইনালে ঢাকা ডার্বি হওয়ায় ফুটবল ফ্যানদের মনে কিছুটা উৎসাহ কাজ করেছে।এরই সুবাদে মাঠ ভর্তি দর্শক দেখা গিয়েছে।

খেলা শুরু হওয়ার পর প্রথম হাফে ০-২ গোলে পিছিয়ে পরে সেকেন্ড হাফে মোহামেডানের সুলেমান দিয়াবাতের পাঁচ মিনিটের ম্যাজিকে ৫৯ মিনিটে ২-২ এ সমতায় ফিরে মোহমেডান। তারপর ৬৫ মিনিটে এমেকার গোলে আবারও আবাহনীর ৩-২ লিড। আবারো সুলেমান দিয়াবাতের ম্যাজিক মোমেন্ট।৮২ মিনিটে হেডে গোল করে সমতায় ফেরান দলকে।

নিদিষ্ট সময়ের নব্বই মিনিট শেষে খেলা গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে। রোমাঞ্চকর এই ম্যাচের বয়স যখন ১০৫ মিনিট ঠিক তখনই দিয়াবাত ডি বক্সে একটা রান মেইক করে গোলকিপারকে কাটিয়ে যাওয়ার সময়ে ফাউলের স্বীকার হয় আর সাথে সাথেই রেফারির বাঁশি বেজে উঠে জানান দিলো যে এটা পেনাল্টি। পেনাল্টি করতে আসেন দিয়াবাত এবং খুব নির্ভুলভাবেই আবাহনীর গোলকিপারকে পরাস্ত করেন অর্থাৎ ১০৭ তম মিনিটে মোহামেডানের ৪-৩ এ লিড। কি অবিশ্বাস্য রাজকীয় প্রত্যাবর্তন,যার মূল কারিগর মালির ৩২ বছর বয়সী এই ফরোয়ার্ড। গতকালকে প্রেস কনফারেন্সে দিয়াবাত বলেছিলেন” ম্যাচের রেজাল্ট কি হবে জানি না তবে আমি একটা গোল করবো ধরে রাখো “।সুলেমান দিয়াবাত শুধুমাত্র একটি গোল করেন নি করেছেন একে একে চারটি গোল। সুলেমান দিয়াবাত আমি আপনাকে সবসময় মনে রাখবো!

 

ম্যাচের বয়স যখন ১১২ মিনিট দুর্দান্ত এক বল সেইভ করতে গিয়ে হাতে ব্যাথা পান মোহামেডান গোলকিপার সুজন তারপর তার বদলি হিসেবে নামেন আরেক গোলকিপার বিপু। অতিরিক্ত সময়ে সুজনের তিনটা অবিশ্বাস্য সেইভে ম্যাচে টিকে ছিলো সাদা – কালো বাহিনীরা। সুজনের ইঞ্জুরির কারনে মোহামেডান ফ্যানদের কপালে চিন্তার ভাজ নেমে আসে তবে স্কোরলাইনের দিকে তাকিয়ে মনের এক কোন চিলতে হাসি দিচ্ছে আর ক্ষনগননা করছে রেফারি কখন শেষ বাঁশি বাজাবেন। প্রতি পারদে পারদে রোমাঞ্চকর এই ম্যাচের শেষ রোমাঞ্চটা বয়ে আনেন আবাহনীর রহমত মিয়া। ১১৬ তম মিনিটে দূরপাল্লার শটে চোখে লেগে থাকার মতো গোল। তৃতীয়বারের মতো খেলাটি সমতায় ফিরে।

অতিরিক্ত সময়ের ১২০ মিনিট শেষে ৪-৪ গোলে সমতা, খেলা ট্রাইব্রেকারে। সুজন যেই কাজটা অপূর্ণ রেখেছিলেন সেই কাজটাকে যেনো পূর্নতা দিলেন বিপু। আবাহনীর দুই সুপারস্টার ব্রাজিলিয়ান রাফায়েল অগাস্তো এবং ২০১৪ বিশ্বকাপে কোস্টারিকার হয়ে প্রতিনিধিত্ব করা ড্যানিয়েল কলিনদ্রেসের পেনাল্টি আটকিয়ে দিলেন।কামরুলে শেষ শট জালে জড়ানো মাধ্যমে ট্রাইবেকারে ৪-২গোলে ব্যাবধানে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আবাহনীকে হারিয়ে ১২ বছর পর ফেডারেশন কাপের চ্যাম্পিয়ন মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব!!সাদাকালোর পুনর্জাগরণ।আবারও শিরোপা যাচ্ছে মতিঝিলে।।


সুলেমান দিয়াবাত একাই চার গোল করে মোহমেডানের হয়ে।তার চার গোলের সুবাদে ও ট্রাইবেকারে পাঁচ নাম্বার গোল করে দল শেষ পর্যন্ত ট্রাইবেকার কাটিয়ে শিরোপা ঘরে তুলে নেয়।

বাংলাদেশের ক্লাব ফুটবল ইতিহাসের অন্যতম সেরা ফাইনাল ম্যাচ। বাংলাদেশের ঘরোয়া ফুটবলের অন্যতম রোমাঞ্চকর, উত্তেজনাকর ম্যাচ। ফেডারেশন কাপের ফাইনাল,ঢাকা ডার্বি।

Leave a Reply