ছয় মাস না যেতেই বন্ধ বিমানের গুয়াংজু ফ্লাইট

Share on Facebook

চালু হওয়ার ছয় মাসের মাথায় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের গুয়াংজু ফ্লাইট বন্ধ হয়ে গেছে। বিমান কর্তৃপক্ষ বলছে, চীনের বিমানবন্দর থেকে স্লট বাতিল (ফ্লাইট অবতরণের অনুমতি) হওয়ায় গত মার্চ থেকে এই গন্তব্যে আর ফ্লাইট চালাতে পারছে না সংস্থাটি। যদিও একই গন্তব্যে দেশের একটি বেসরকারি সংস্থা নিয়মিত ফ্লাইট চালাচ্ছে।

বিমানের ফ্লাইট পরিচালনায় যুক্ত একটি সূত্র জানায়, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের ব্যবসা–বাণিজ্য অনেক বেড়েছে। তাই ঢাকা–গুয়াংজু–ঢাকা গন্তব্যটি লাভজনক। গত বছর আগস্টে এই গন্তব্যে বিমান ফ্লাইট শুরু করে। চলতি বছরের মার্চে এই গন্তব্যে সর্বশেষ ফ্লাইট চালিয়েছে বিমান। হঠাৎ কেন চীন কর্তৃপক্ষ স্লট বাতিল করল, বিমানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও সেটি বুঝে উঠতে পারছেন না।

নিয়ম অনুযায়ী, অন্য কোনো দেশে বাণিজ্যিক ফ্লাইট পরিচালনা করতে হলে সংশ্লিষ্ট দেশের চুক্তি (এয়ার সার্ভিস অ্যাগ্রিমেন্ট) থাকতে হয়। এই চুক্তির মাধ্যমে ‘এয়ার ফ্রিকোয়েন্সি’ বরাদ্দ দেওয়া হয়। অর্থাৎ এক দেশ থেকে অন্য দেশে সপ্তাহে কয়টি ফ্লাইট পরিচালনা করতে পারবে, সেটি নির্ধারিত হয়। এরপর সংশ্লিষ্ট দেশ ঠিক করে কোন বিমান সংস্থাকে কয়টি ফ্লাইট বরাদ্দ দেবে। বাংলাদেশে এ বিষয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)। এ–সংক্রান্ত দুই দেশের কর্তৃপক্ষ বিমানবন্দরে ফ্লাইট পরিচালনার জন্য অন্য দেশের বিমান সংস্থাকে স্লট বরাদ্দ দেয়। গ্রীষ্মকালীন ও শীতকালীন সময়সূচি অনুযায়ী বছরে দুবার এই স্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়।

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, গ্রীষ্মকালীন সময়সূচি শুরু হয় এপ্রিলে, চলে অক্টোবর পর্যন্ত। গ্রীষ্মকালীন স্লট বরাদ্দের জন্য বিমান কর্তৃপক্ষ গত ফেব্রুয়ারিতে চীনের গুয়াংজু বাইয়ুন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করে। কিন্তু অনুমোদন পায়নি বিমান। ফলে গত মার্চ থেকে ওই গন্তব্যে বিমানের ফ্লাইট বন্ধ হয়ে গেছে।

এখন ঢাকা থেকে গুয়াংজুতে সরাসরি ফ্লাইট পরিচালনা করে বাংলাদেশের ইউএস বাংলা এয়ারলাইনস ও চীনের চায়না সাউদার্ন এয়ারলাইনস। এ ছাড়া ঢাকা থেকে কুনমিং হয়ে চায়না ইস্টার্ন, কলম্বো হয়ে শ্রীলঙ্কান এয়ারলাইনস, সিঙ্গাপুর হয়ে সিঙ্গাপুর এয়ারলাইনস, মালয়েশিয়া হয়ে মালয়েশিয়ান এয়ারলাইনস গুয়াংজুতে যাত্রী পরিবহন করে।

বিমান সূত্র বলছে, এয়ার সার্ভিস চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশের বিমান সংস্থা  চীনে প্রতি সপ্তাহে ১৭টি ফ্লাইট পরিচালনার সুযোগ পাবে। সে জন্য বিমানের পক্ষ থেকে কুনমিংয়ে সাতটি, গুয়াংজুতে সাতটি ও বেইজিংয়ে তিনটি ফ্লাইট পরিচালনার আবেদন করে রেখেছে। কিন্তু সেগুলোর অনুমোদন পাওয়া যায়নি।

ঢাকা–গুয়াংজু গন্তব্যটি লাভজনক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এই গন্তব্যে বিমানের টিকিটের চাহিদাও বেশি। বাংলাদেশের ব্যবসায়ী ও শিক্ষার্থী ছাড়াও চীনের নাগরিকেরা এই গন্তব্যে যাতায়াত করে থকেন। এখানে আবার ফ্লাইট চালু করা সম্পর্কে জানতে চাইলে বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শফিউল আজিম প্রথম আলোকে বলেন, গুয়াংজুতে স্লট (ফ্লাইট পরিচালনার অনুমতি) পাওয়ার বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে ইতিমধ্যে বেবিচককে চিঠি দেওয়া হয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়েও যোগাযোগ করা হবে।

বিমান সূত্র জানায়, গুয়াংজু বিমানবন্দরে স্লট–সংক্রান্ত সমস্যা সমাধানের জন্য দুই সপ্তাহ আগে বাংলাদেশের বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষকে (বেবিচক) চিঠি দিয়েছে বিমান কর্তৃপক্ষ। এখন পর্যন্ত কোনো সমাধান হয়নি। গত বুধবার বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের একটি বৈঠকেও বিষয়টি নিয়ে অনানুষ্ঠানিক আলোচনা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, বেবিচকের শক্ত পদক্ষেপ কিংবা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপ ছাড়া সমস্যা সমাধানের সম্ভাবনা ক্ষীণ।

বেবিচকের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মফিদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘এক মাস আগে আমরা চায়না সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়েছি। এখনো উত্তর পাইনি। আশা করি, সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে। প্রয়োজনে তাদের সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে যোগাযোগ করব।’

 

Leave a Reply