বিশেষ ধরণের পাঁচ পর্যটন

Share on Facebook

পর্যটনের রয়েছে অনেক ধরণ এবং উপধরণ। পর্যটন শিল্প যত বিস্তৃত হচ্ছে পর্যটনের শ্রেণি বিন্যাসও বাড়ছে। এই প্রতিবেদনে পর্যটনের পাঁচটি বিশেষ ধারা সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত পরিচিতি দেওয়া হল। পর্যটনের এই ধারাগুলি বাংলাদেশে জনপ্রিয় হয় নাই, তেমন পরিচিতও নয়।

১. বেদনাবহ পর্যটন (Dark Tourism)

ডার্ক ট্যুরিজমকে বাংলায় বেদনাবহ বা শোক পর্যটন বলা যায়। এই ধারার পর্যটনে মানব ইতিহাসের বেদনাবহ ঘটনাগুলির সাথে সম্পর্কিত পর্যটন গন্তব্যে ভ্রমণ করা হয়। এই পর্যটন গন্তব্যগুলি মানুষকে নির্যাতন, হত্যা, গণহত্যা, যুদ্ধ এবং মানবসৃষ্ট দুর্যোগের জন্য বিখ্যাত। এছাড়া প্রাকৃতিক দুর্যোগে বিধ্বস্ত অঞ্চলও ডার্ক বা বেদনাবহ পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে বিবেচিত হয়।

মুক্তিযুদ্ধের সময় বাঙালিদের হত্যার জন্য পাকিস্তানী বাহিনীর তৈরী করা বধ্যভূমি এবং সাইক্লোনে বিধ্বস্ত উড়ির চর বাংলাদেশের গুরুত্বাপূর্ণ ডার্ক ট্যুরিজম বা বেদনাবহ পর্যটন গন্তব্য। চেরনোবিল, আলকাট্রাজ, সান ফ্রান্সিসকো, নম পেন, কম্বোডিয়া, ইজাফজাল্লাজোকুল, আইসল্যান্ড, হিরোশিমা, ক্যাটাকম্বসসহ বহু বেদনাবহ পর্যটন গন্তব্য পৃথিবী জুড়ে ছড়িয়ে আছে।

বধ্যভূমি স্মৃতিসৌধ, রায়েরবাজার, ঢাকা

 ২. চরম পর্যটন (Extreme/Shock Tourism)

চরম পর্যটনকে বিপজ্জনক পর্যটন বলা যেতে পারে। এই ধারার পর্যটনে দুর্গম পাহাড়, জঙ্গল, মরুভূমি, গুহা, গিরিখাতসহ বিপজ্জনক স্থানে ভ্রমণ করা হয়। ঝুঁকির কারণে সৃষ্ট ‘এড্রিনাল রাশ’ তথা ঝুঁকিমূলক বিনোদন ও বিপজ্জনক আনন্দ লাভ করাই এই ধরণের পর্যটনের উদ্দেশ্য। অস্ট্রেলিয়ার কেজ অব ডেথ বা মরণ খাঁচা, নরওয়েতে ক্লিফ জাম্পিং, ব্রাজিলে ইগুয়াজু বোট রাইড, টরন্টোতে সিএন টাওয়ারের প্রান্তে হাঁটা, চিলিতে আগ্নেয়গিরিতে বাঞ্জি জাম্প , নিউজিল্যান্ডে জোর্বিং এবং স্পেনে এল ক্যামিনিটো ডেল রে ট্রেকিং পর্যটন গন্তব্যগুলো চরম পর্যটনের জন্য বিখ্যাত।

প্যারাশুট জাম্পিং, এক্সট্রিম ট্যুরিজম এক্টিভিটি

৩. শরাব পর্যটন (Booze Tourism)

বাংলাদেশের সংস্কৃতিতে মদ্যপান বা শরাব পান কার অগ্রহনযোগ্য হলেও পশ্চিমা সংস্কৃতিতে প্রাপ্তবয়ষ্কদের মদ পান করার ক্ষেত্রে কোনে বিধিনিষেধ নেই। শরাব পর্যটন মূলত মদ্যপান কেন্দ্রিক পর্যটন। এই ধরণের পর্যটন গন্তব্যে ওয়াইন স্যাম্পলিংয়ের মাধ্যমে ওয়ানের স্বাদ নেওয়া, মদ তৈরীর কারখানা পরিদর্শন এবং মদ পান করা এবং এই মদপান কেন্দ্রিক বিভিন্ন আয়োজন থাকে। প্রমোদ তরীতে অ্যালকোহল ক্রুজের আয়োজন করা হয়। বিয়ার ক্রুজ বিপুল পরিমাণ বিয়ারে বন্দোবস্ত থাকে। গ্রীক দ্বীপপুঞ্জে ৩০টি পার্টি হটস্পট এবং স্পেনের মাগালুফ এবং ইবিজায় বিয়ার বোটগুলি এই ধরণের পর্যটনের জন্য বিশ্বখ্যাত।

বার্সেলোনা বিয়ার বোট, শরাব পর্যটন

৪. পারমাণবিক পর্যটন (Atomic Tourism)

পর্যটনের সাম্প্রতিক ধারাগুলির মধ্যে পারমাণবিক পর্যটন অন্যতম। এই ধারার পর্যটনে পারমাণবিক অস্ত্র সহ জাদুঘর, ক্ষেপণাস্ত্র সাইলো, পারমাণবিক অস্ত্র বহনকারী যানবাহন, পারমাণবিক যুদ্ধ সামগ্রীর রাখার স্থানসমূহ পর্যটন গন্তব্য হিসেবে বিবেচিত হয়। দ্য ট্রিনিটি সাইট, ডুম টাউন, টাইটান মিসাইল মিউজিয়াম, হ্যানফোর্ড বি রিঅ্যাক্টর, লস আলামোস, দ্য ন্যাশনাল মিউজিয়াম অফ নিউক্লিয়ার সায়েন্স অ্যান্ড হিস্ট্রি, এনোলা গে, চেরনোবিল ও প্রিপিয়াত, হিরোশিমা, বিকিনি অ্যাটল এবং মালান মিলিটারি এক্সপো পার্ক জনপ্রিয় পারমাণবিক পর্যটন কেন্দ্র।

লস আলমোদ ন্যাশনাল ল্যাবরেটরি

৫. বিনোদনমূলক মাদক পর্যটন  (Recreational Drug Tourism)

মাদকদ্রব্য স্বাস্থ্য ও জীবনের জন্য ঝুঁকিপুর্ণ। তাই পৃথিবীর সকল দেশেই মাদক ব্যবহার ও বহনে নিষেধাজ্ঞা ও কঠোর শাস্তির বিধান রয়েছে। তবে পৃথিবীর কিছু কিছু দেশ কিছু নির্দিষ্ট ধরণের মাদককে বিভিন্ন শর্তসাপেক্ষে বৈধতা দেয়। বিনোদনমূলক মাদক পর্যটন মূলত মাদকগ্রহন কেন্দ্রিক পর্যটন। নিজের দেশে নিষিদ্ধ মাদক গ্রহণের উদ্দেশ্যে অন্যদেশে (যে দেশে পছন্দের মাদক বৈধ বা পাওয়া সহজ) ভ্রমণ করা হয়। বিনোদনমূলক মাদক পর্যটন গন্তব্য হিসেবে  পেরু, মরক্কো, কলম্বিয়া, কলোরাডো, নেদারল্যান্ডস, বলিভিয়া এবং লাওসের নাম ডাক রয়েছে।

কোকেনের জন্য বিখ্যাত কলাম্বিয়া

 

Leave a Reply