ক্যানিবালিজম: নিজ প্রজাতির মাংসখেকো প্রাণীদের কথা

Share on Facebook

সিনেমায় প্রায়শই দেখা যায়, মানুষ মানুষকে মেরে উৎসব করছে, উল্লাস করে তার মাংস খাচ্ছে। কখনো আগুনে পুড়িয়ে আবার কখনো কাঁচাই। এসব দৃশ্য দেখার পর সবার মনেই হয়তো প্রশ্ন উকি দেয়- বাস্তবেও কি মানুষ মানুষের মাংস খেতে পারে? আশ্চর্য হলেও সত্য এটাই যে- মানুষ মানুষের মাংস খায়।

নিজ প্রজাতির প্রাণীদের খেয়ে ফেলা প্রাণীজগতে নতুন কিছু নয়। প্রাণীজগতের এমন আরো অনেক প্রজাতিই তাদের নিজ প্রজাতির মাংস খেয়ে থাকে। এটি ক্যানিবালিজম নামে পরিচিত। আর রাক্ষুসে মাংসখেকো প্রাণীটিকে বলা হয় ক্যানিবাল প্রাণী। এ লেখায় আমরা প্রাণীজগতের সেই সব রাক্ষুসে ক্যানিবাল প্রাণীদের সম্পর্কে জানার চেষ্টা করবো। তার আগে জেনে নেওয়া যাক- ক্যানিবালিজম কী?

সহজ কথায় বলতে গেলে, কোনো প্রাণী যখন তারই প্রজাতির অন্য প্রাণীর মাংস বা শরীরের কোনো অংশ খায় সেটিকে ক্যানিবালিজম বলে। এটি একটি সাধারণ পরিবেশগত বিষয়। এ পর্যন্ত ১৫’শ এরও অধিক প্রজাতির মধ্যে ক্যানিবালিজমের প্রমাণ মিলেছে। মানুষের মধ্যেও বিভিন্ন সময়ে ক্যানিবালিজমের চর্চা ছিলো তারও প্রমাণ রয়েছে।
তাহলে চলুন জেনে নিই প্রাণীজগতের কিছু ক্যানিবাল প্রাণী এবং তাদের ক্যানিবালিজমের পদ্ধতি সম্পর্কে।

মাকড়শা

মাকড়শার বিভিন্ন প্রজাতির মধ্যে স্ত্রী মাকড়শা যৌন সঙ্গম চলাকালীন কিংবা সঙ্গমের পর তার পুরুষ সঙ্গীকে খেয়ে ফেলে। সাধারণত পুরুষ মাকড়শার তুলনায় স্ত্রী মাকড়শা অনেক গুণ বড় হয়ে থাকে। এ সুবিধা নিয়েই স্ত্রী মাকড়শা তার সঙ্গীকে খেয়ে ফেলতে পারে।

ওহিও’র মায়ামি বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই গবেষক শন উইল্ডার এবং অ্যান রিপস্ট্রা বলেন, যদি পুরুষ মাকড়শার তুলনায় স্ত্রী মাকড়শা আকারে বড় হয় তাহলে স্ত্রী মাকড়শা সহজেই সেটিকে শিকার করতে পারে এবং খেতে পারে। পুরুষ মাকড়শা খেয়ে ফেলার পেছনে তারা দুটি কারণ উল্লেখ করেন।

১. স্ত্রী মাকড়শা ক্ষুধার্ত থাকে এবং
২. পুরুষ মাকড়শার ছোট আকারের কারণে স্ত্রী মাকড়শা তাদের খাওয়ার সুযোগ পায়।

তারা আরো দেখেছেন যে, পুরুষ মাকড়শার আকার যদি বড় হয় তাহলে তাদেরকে খেতে পারে না স্ত্রী মাকড়শা। তবে যেসব পুরুষ মাকড়শার আকার স্ত্রী মাকড়শার চেয়ে ছোট তাদের প্রায় ৮০ শতাংশই স্ত্রী মাকড়শার পেটে চলে যায়। যৌন সঙ্গমের পর বা চলকালীন এ ধরনের খেয়ে ফেলার ঘটনার কারণে তারা একে সেক্সুয়াল ক্যানিবালিজম হিসেবে উল্লেখ করেন। সেক্সুয়াল ক্যানিবালিজমের সবচেয়ে প্রকৃষ্ট উদাহরণ হচ্ছে ব্ল্যাক উইডো।

সেক্সুয়াল ক্যানিবালিজমের কারণে পুরষ মাকড়শার কাছে যৌন সঙ্গম করা একটি ভয়ের ব্যাপার। পিটসবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক অ্যানিমেল বিহ্যাভিয়ার জার্নালে তাদের একটি গবেষণাপত্র জমা দেন। সেখানে তারা উল্লেখ করেছেন, স্ত্রী মাকড়শা সঙ্গমের আগে, সময় বা পরে পুরষ মাকড়শাকে খেয়ে ফেলে। এর কারণ হিসেবে তারা উল্লেখ করেন, বেশি ডিম পাড়া এবং তা থেকে বেশি বাচ্চা উৎপাদনের জন্যই মূলত স্ত্রী মাকড়শা পুরুষ মাকড়শাকে খেয়ে থাকে। তবে এ ধরনের ক্যানিবালিজমের ঘটনা মাকড়শার সব প্রজাতির মধ্যে ঘটে না।

স্যান্ড টাইগার শার্ক

স্যান্ড টাইগার শার্ক ‘গ্রে নার্স শার্ক’ নামেও পরিচিত। এদের বৈজ্ঞানিক নাম Carcharias taurus। স্যান্ড টাইগার শার্কই পৃথিবীর একমাত্র শার্ক যারা গর্ভে থাকা অবস্থাতেই তাদের সহোদরদের গিলে খায়। শার্ক গবেষক ডেমিয়ান চাম্পান জানান, একবার এক শার্কের গলায় আরেকটি সহোদর শার্কের ভ্রুণ পাওয়া যায়। আসলে ঐ শার্কটি ভ্রুণটিকে গিলে খাচ্ছিলো। অপেক্ষাকৃত বড় ভাই/বোনটিই ছোট ভাই/বোনকে খেয়ে থাকে।
কিন্তু কেন ভ্রুণ অবস্থাতেই নিজের সহোদরকে গিলে খায় শার্ক? আসল ব্যাপার হচ্ছে ভ্রুণ অবস্থায় শার্ক তার আপন ভাই-বোনদের খায় না। স্ত্রী শার্ক একই সাথে একাধিক পুরুষ শার্কের সাথে মিলিত হয়। ফলে শার্কের গর্ভে একাধিক পুরুষ শার্কের সন্তান থাকে। অন্য পিতার সন্তানকেই সাধারণত খেয়ে থাকে অপেক্ষাকৃত বড় সন্তান। এটি বিজ্ঞানীদের অনেক বড় একটা সাফল্য ছিলো যে, তারা জানতে সক্ষম হয়েছেন একটি স্ত্রী শার্ক একইসাথে একাধিক পুরুষ শার্কের সন্তান ধারণ করে। এই গবেষণাটি করেছিলেন চাম্পান এবং তার দল। তারা দক্ষিণ আফ্রিকার সাগর থেকে গর্ভবতী শার্ক এর ডিএনএ সংগ্রহ করেন।

গর্ভবতী শার্কের দেখা পাওয়া খুবই কঠিন একটি কাজ। মাত্র ১৫টি ডিএনএ স্যাম্পল সংগ্রহ করতে তাদের পাঁচ বছর (২০০৭-১২) লেগে যায়। গবেষণায় তারা দেখতে পান যে, একটি স্ত্রী শার্ক একাধিক পুরুষের সাথে মিলন করায় তাদের গর্ভে একাধিক পুরুষ শার্কের বাচ্চা থাকে। ফলে প্রথমদিকে নিষিক্ত শার্করাই তাদের সহোদরদের খেয়ে থাকে। শুধু তা-ই নয়, সহোদরদের খাওয়া শেষ হলে তারা অনিষিক্ত ডিমগুলোও খেয়ে ফেলে। একে বলে oophagy/ ovophagy/ egg eating। সহোদরদের খাওয়ার ফলে তারা খুব তাড়াতাড়ি বেড়ে উঠে। এটিও শার্ক ক্যানিবালিজমের একটি কারণ।

শিম্পাঞ্জী

শিম্পাঞ্জীরাও মাঝে মাঝে ক্যানিবালিস্টিক হয়ে ওঠে। তার দলের কিংবা অন্য দলের সদস্যকে হত্যা করে তার মাংস খেয়ে থাকে। শিম্পাঞ্জীও আরেক শিম্পাঞ্জীর মাংস খেয়েছে এমন দৃশ্য বেশ কয়েকবারই ধরা পড়েছে ক্যামেরায়। সময়টা ছিলো ১৯৭৭। সেসময় ব্রিটিশ প্রাণী বিশেষজ্ঞ জেন গুডল একটি দৃশ্য ধারণ করেন। তাতে একটি শিম্পাঞ্জী আরেক শিম্পাঞ্জীর মাংস খাচ্ছে এমন দৃশ্য ধরা পড়ে।

তানজানিয়ার গম্বে ন্যাশনাল পার্কে একটি পুরুষ শিম্পাঞ্জী অন্য একটি অপরিচিত স্ত্রী শিম্পাঞ্জী এবং তার বাচ্চাকে দুই দফা আক্রমণ করে। পুরুষ শিম্পাঞ্জীটি বাচ্চাকে ছিনিয়ে নিয়ে মেরে ফেলে এবং বাচ্চাটির দেহের অনেকটা অংশ খেয়ে নেয়। যদিও অন্য বাচ্চাটিকে বাঁচিয়েছিলো সাথে থাকা অন্য তিনটি পুরুষ শিম্পাঞ্জী। উগান্ডায় একই ধরনের ঘটনা দেখেছিলেন ড. সুজুকি এবং ড. নিশিডা। বাচ্চা মেরে ফেলার এবং খেয়ে ফেলার এমন আরো দৃশ্য চোখে পড়েছে গবেষকদের।

১৯৭৭ পরবর্তী বিভিন্ন সময়েও শিম্পাঞ্জীদের ক্যানিবাল আচরণ তথা নিজ প্রজাতির মাংস খাওয়ার দৃশ্য রেকর্ড করা হয়েছে। ২০১৩ সালে গবেষকরা সেনেগালে একটি ভিডিও ধারণ করেন। সেই ভিডিওতে দেখা যায় শিম্পাঞ্জীদের একটি গ্রুপ তাদের গ্রুপেরই এক শিম্পাঞ্জীকে মেরে রক্তাক্ত করে। শিস্পাঞ্জীটি মারা যায় এবং তার দেহের কিছু অংশ অন্য শিম্পাঞ্জীরা খেয়েও ফেলে। শিম্পাঞ্জীরা তাদের পুষ্টি চাহিদা মেটানো, নিজেকে টিকিয়ে রাখার জন্য, আধিপত্য বিস্তারের জন্য কিংবা বিদ্রোহে জয়ী হওয়ার জন্য এ ধরনের যুদ্ধে লিপ্ত হয়, অন্য শিম্পাঞ্জীকে মেরে ফেলে এবং তার মাংস খেয়ে থাকে।

অর্থাকান্থাস শার্ক

মানুষের পাশে যখন ছোট শিশু থাকে তখন সে শিশুটাকে কত আদর করে। কোলে তুলে নেয়। কিন্তু কখনো কি ভাবে- ইশ এই ছোট বাচ্চাটাকে যদি খেতে পারতাম? কিংবা খেয়ে ফেলে? তা কিন্তু করেনা। অথচ আজ থেকে প্রায় তিন’শ মিলিয়ন বছর আগে অর্থাকান্থাস শার্করা তাদের আপন বাচ্চাদের খেয়ে ফেলতো। শুনতে খারাপ লাগলেও এরকমই প্রমাণ পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। এ ধরনের ক্যানিবালিজমকে বলা হয় ফিলিয়াল ক্যানিবালিজম।

ট্রিনিটি কলেজ ডাবলিনের (আয়ারল্যান্ড) জীবাশ্মবিদ অ্যাওন ও গ্যাগনসহ অন্যান্যরা অর্থাকান্থাস শার্কের ফসিল নিয়ে গবেষণা করেন। তারা কানাডা থেকে অর্থাকান্থাস শার্কের ফসিল সংগ্রহ করেন। সেই ফসিল নিয়ে গবেষণা করে তারা দেখতে পান যে, অর্থাকান্থাস শার্করা নিজেদের বাচ্চাদের খেয়ে ফেলেছে। যদিও সেটিই ছিলো অর্থাকান্থাস শার্কের ক্যানিবালিজমের প্রথম দলিল।

এই গবেষণাপত্রের আরেক সহযোগী লন্ডনের রয়েল হলোওয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের হাভার্ড ফ্যালকন-ল্যাং বলেন, ঠিক কী কারণে অর্থাকান্থাসরা তাদের বাচ্চাদের খেয়ে ফেলেছিলো সেটি আমরা জানতে পারিনি। তবে কার্বোনোফেরাস পিরিয়ডের সময় (৩০০-৩৬০ মিলিয়ন বছর আগে) সমুদ্রের অনেক মাছ মিঠাপানির জলের দিকে বসতি স্থাপন করতে শুরু করে। সেসময় অর্থাকান্থাস শার্ক তাদের বাচ্চাদের লালন পালনের জন্য সমুদ্রের অভ্যন্তরীণ জলপথই ব্যবহার করছিলো। একসময় খাবারের প্রচন্ড অভাব দেখা দিলে তারা তাদের বাচ্চাদের খেয়ে থাকতে পারে।

জলহস্তী

জলহস্তী তৃণভোজী প্রাণী। এদের হিপ্পো নামেও ডাকা হয়। গড়ে ১,৫০০ কেজি ওজনের আফ্রিকান এই প্রাণীটির প্রতি রাতে ৪০ কেজি ঘাস না খেলে যেনো চলেই না। ক্ষুধার্ত অবস্থায় এরা চরম হিংস্র হয়ে উঠতে পারে। যখন এদের সময় খারাপ যায়, প্রয়োজনীয় খাবার পায় না তখন এরা সামনে যা পায় তা-ই খায়। এমনকি নিজ প্রজাতির জলহস্তীকেও খেয়ে ফেলে এরা। ক্ষুধার্ত হিপ্পো আরেকটি হিপ্পোকে খাচ্ছে এমন দৃশ্য ধরা পড়ে দক্ষিণ আফ্রিকায়।

ঘটনাটি ঘটে ২০১৪ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রুগার ন্যাশনাল পার্কে। দৃশ্যটি ধারণ করেন অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি গবেষক লিজিয়া ডরওয়ার্ড। তিনি যখন পার্কটির একটি নদী পার হচ্ছিলেন তখন একটি মৃত হিপ্পো দেখতে পান যার পাশে রয়েছে বেশ কয়েকটি কুমির। শুধু তা-ই নয়, মৃত হিপ্পোটিকে খাচ্ছিলো পাশে দাঁড়ানো আরেকটি হিপ্পো। এর আগে ১৯৯৫ সালে স্বপ্রজাতির হিপ্পো খেতে দেখা গিয়েছিলো জিম্বাবুয়ের জুয়্যাঞ্জ ন্যাশনাল পার্কে। হিপ্পো বিশেষজ্ঞ ড. কেইথ এলট্রিংগাম বলেন,

হিপ্পোরা তৃণভোজী প্রাণী। এরা ঘাস খেয়েই বেঁচে থাকে। কিন্তু যখন খাবারের অভাব চরম আকার ধারণ করে তখন এরা যেকোনো কিছুই খেয়ে থাকে। বিশেষ করে হিপ্পোর মাংস খেলে নিজের শরীরের জন্য যে পুষ্টি দরকার সেটা পূরণ হয়ে থাকে। এজন্য এদের সময় বিশেষে নিজ প্রজাতির মাংস খেতে দেখা যায়।

টাইরানোসোরাস রেক্স

টাইরানোসোরাস রেক্স সংক্ষেপে T-Rex (টি-রেক্স) নামে পরিচিত। এটি হচ্ছে ডাইনোসরের একটি প্রজাতি। টাইরানোসোরাস রেক্স যে ক্যানিবাল প্রাণী সেটার পক্ষে গুরুত্বপূর্ণ দলিল হচ্ছে ৬৬ মিলিয়ন বছর আগের একটি হাড়।
হাড়টি বিশ্লষণ করে আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়ার লোমা লিন্ডা বিশ্বিবিদ্যালয়ের জীবাশ্মবিদ ম্যাথিও ম্যাক্লেইন বাল্টিমোরে জিওলজিক্যাল সোসাইটি অব আমেরিকার বার্ষিক সম্মেলনে তার গবেষণার ফলাফল উপস্থাপন করেন। হাড়টিতে টি-রেক্সের কামড়ের চিহ্ন পাওয়া গেছে। শুধু তা-ই নয়, হাড়টিতে একাধিকবার কামড়ানোর চিহ্নও খুঁজে পেয়েছেন ম্যাক্লেইন ও তার দল। এর আগেও ২০১০ সালে নিকোলাস এবং তার সহকর্মীরা আরো চারটি হাড় হাজির করেন যেখানে টি-রেক্সেরই কামড়ের চিহ্ন রয়েছে। আসলে টি-রেক্সরা কোনো মাংসই অপচয় হতে দিতো না। তারা এমনভাবে নিজ প্রজাতির মাংস খেতো যেভাবে মানুষ মুরগির মাংস খেয়ে থাকে।

টাইগার স্যালাম্যান্ডার্স

টাইগার স্যালামান্ডারের লার্ভা দুই রকমের হতে পারে। ছোট লার্ভাগুলো সাধারণত জলজ অমেরুদণ্ডী প্রাণী খেয়ে বাঁচে। পক্ষান্তরে বড় রাক্ষুসে লার্ভাগুলো তাদের সহোদর লার্ভা খেয়ে থাকে।
রাক্ষুসে স্যালামান্ডার্সের মাথা অনেক বড়, মুখ প্রশস্ত এবং চোয়াল সাধারণ স্যালামান্ডার্সের চেয়ে তিনগুণ লম্বা হয়ে থাকে। গবেষকরা খুঁজে পেয়েছেন যে, স্যালামান্ডার্সের সংখ্যা যখন অধিক হয়ে যায় তখন রাক্ষুসে স্যালামান্ডার্স তাদের সহোদরদের খেয়ে ফেলে। ছোট স্যালামান্ডার্সগুলো রাক্ষুসে স্যালামান্ডাসের কাছে সুস্বাদু একটি খাবার এবং এটি তাদের অনেক পুষ্টি যুগিয়ে থাকে।

নিয়ান্ডারথালস (মানুষ)

মানুষ মানুষকে মেরে ফেলছে, প্রকাশ্যে কোপাচ্ছে এমন দৃশ্য আমরা প্রায়ই দেখি। কিন্তু মানুষকে মেরে তার মাংস খাচ্ছে অন্য মানুষ এমন দৃশ্য চোখে পড়েনা। রুপকথায় নরভক্ষণের গল্প থাকলেও বাস্তবেও কিন্তু নরভক্ষণের প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে। নিয়ান্ডারথালরা তাদের অন্য মানুষের মাংস রান্না করে খেয়েছে। তারা হচ্ছে আমাদের হোমো স্যাপিয়েন্সের মতো প্রায় একই বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন মানুষ।

তবে আজ থেকে প্রায় ৩০ হাজার বছর আগেই এই পৃথিবী থেকে হারিয়ে গেছে তারা। আমরা (হোমো স্যাপিয়েন্স) মানুষরাই তাদের এই পৃথিবী থেকে বিতাড়িত করেছি। যদিও পৃথিবী থেকে তাদের নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়ার পেছনে আরো অনেক কারণ উল্লেখ করেছেন গবেষকরা।
নিয়ান্ডারথালরা যে নিজ প্রজাতির মাংস খেতো তার প্রমাণ মিলেছে বেলজিয়ামের গোয়েত গুহা থেকে প্রাপ্ত মানুষের হাড়ে। সে সময় নিয়ান্ডারথালরা শুধুমাত্র ঘোড়া আর হরিণ খেয়েই বেঁচে থাকতো না, মানুষের মাংসও খেতো। গবেষকরা সেই গুহা থেকে ৪০ হাজার বছর আগের যে হাড় পেয়েছেন তার মধ্যে রয়েছে সদ্যোজাত বাচ্চা, শিশু, তরুণ এবং বয়স্ক মানুষের হাড়।

এসব হাড় বিশ্লেষণ করে তারা দেখেছেন, নিয়ান্ডারথালরা নিজ প্রজাতির মাংস খেতো। এই হাড়গুলো ঠিক সেই সময়ের যে সময় নিয়ান্ডারথালরা পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হওয়ার পথে এবং হোমো স্যাপিয়েন্সরা (বর্তমান মানুষ) তাদের জায়গা দখল করে নিচ্ছে। গবেষণায় আরো দেখা গেছে যে, নিয়ান্ডারথালরা বাস্তব বুদ্ধিসম্পন্ন ছিলো। ধ্বংসের পথে এসেও তারা তাদের মৃতদেহের দেখভাল করতো এবং দাফন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতো। কিন্তু মৃতের সংখ্যা ক্রমশ বাড়তে থাকলে তারা মৃতদেহে খেয়ে ফেলতে শুরু করে।

সম্প্রতি আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটির নৃবিজ্ঞানী হেলেন রুশিয়ের নেতৃত্বে একটি আন্তর্জাতিক টিম গোয়েত গুহা থেকে প্রাপ্ত নিয়ান্ডারথালদের হাড় নিয়ে গবেষণা করে দেখেছেন। তাদের গবেষণায়ও নরভক্ষণের প্রমাণ মিলেছে।

এ বিষয়ে ক্রিস্টিয়ান ক্যাসিয়াস বলেন, হাড়গুলোতে কেটে ফেলার চিহ্ন রয়েছে। সে হাড় থেকে মাংস বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। নিয়ান্ডারথালরা হাড়গুলো এমনভাবে ভেঙেছে যেভাবে তারা ঘোড়া এবং হরিণের হাড় ভাঙতো। এমনভাবে মাংস বিচ্ছিন্ন করেছে যেভাবে ঘোড়া এবং হরিণের মাংসা বিচ্ছিন্ন করতো হাড় থেকে। কিন্তু তারা ঠিক কী কারণে নিজেদের মাংস খেতো সেটা এখনো রহস্যের বিষয়।

শুধুমাত্র উপরে বর্ণিত প্রাণীগুলোই ক্যানিবাল প্রাণী নয়। বাঘ, সাপ থেকে শুরু করে মানুষের বিভিন্ন উপজাতিসহ প্রায় পনেরোশ প্রজাতির প্রাণী ক্যানিবালিজমে সম্পৃক্ত। তবে এটি কোনো অস্বাভাবিক বিষয় নয়। প্রাণীজগতে ক্যানিবালিজম একটি স্বাভাবিক পরিবেশগত বিষয়।

Leave a Reply