বাংলাদেশ পর্যটনের হৃদয়ের গহীনে সুখের অসুখ

Share on Facebook

বিশ্ব পর্যটন সংস্থা এবারের পর্যটন দিবসের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করেছে “রিথিংকিং ট্যুরিজম”। আমরা এখানে বসে সেই প্রতিপাদ্যের অনুবাদ বাংলায় করে নিয়েছি পর্যটনে নতুন ভাবনা। কিন্তু রিথিংক কি আসলেই নতুন কোনো ভাবনা নির্দেশ করে?

রিথিংক মানে নতুন ভাবনা কি-না সেই ফয়সালা করার আগে আসেন বোঝার চেষ্টা করি চিন্তা ও ভাবনার মধ্যে পার্থক্য কী?

ভাবনা হচ্ছে প্রাথমিক স্বতঃস্ফূর্ত ভাবগাম্ভীর্যপূর্ণ উপলব্ধি। চিন্তা হচ্ছে ভাবনার চেয়ে গভীর উপলব্ধি এবং সুশৃঙ্খল পদ্ধতি । আর অতিচিন্তার নাম দুশ্চিন্তা। সুতরাং চিন্তা ও ভাবনার মধ্যে প্রায়োগিক পার্থক্য বিদ্যমান রয়েছে।

তাহলে আপাতত অন্তত এটুকু বলা যাচ্ছে যে, মুরুব্বী সংস্থার প্রতিপাদ্য রিথিংকিং ট্যুরিজম বাংলাদেশে এসে ভুল স্লোগানে মুখরিত হচ্ছে। এমনিতেই বাংলাদেশ যদি নিজের চেতনায় নতুন ভাবনা পর্যটনে আরোপ করতে চায় তাহলে সেটা ভিন্ন কথা।

এখন আসি ওয়ার্ল্ড ট্যুরিজম অর্গানাইজেশন যে রিথিংকিং ট্যুরিজম বলে স্লোগান তুললো সেই বিষয়ে। “রিথিংক” বিষয়টা সহজ ও সাবলীলভাবে বুঝতে হলে প্রথমে বুঝতে হবে “থিংক এগেইন”। রিথিংক মানে যদিও ঠিক থিংক এগেইন নয় তবুও থিংক এগেইন চিন্তা করলে রিথিংক বুঝতে সুবিধা হবে।

ধরেন, আমি আপনার কোনো একটা সিদ্ধান্ত মূল্যায়ন করতে গিয়ে আপনাকে অনুরোধ করলাম বা আহ্বান জানালাম ‘থিংক এগেইন’ অর্থাৎ আবার চিন্তা করেন বা আরও চিন্তা করেন। তার মানে আপনার সিদ্ধান্তে হয়তো এমন কিছু ভুল বা ত্রুটি আছে, অথবা অধিকতর গভীর সম্ভাবনা আছে, যা আপনি এখনো জানেন না বা খেয়াল করেন নাই কিন্তু তা আমার চোখে ঠিকই ধরা পড়েছে।

একইভাবে যদি রিথিংক বলি তাহলে বুঝবেন যেকোনো কারণেই হোক আপনার সিদ্ধান্ত হয়তো আমার মনঃপুত হয়নি তাই আবার চিন্তা করতে বললাম। রিথিংক মানে শুধু এতোটুকুই আর কিছু না।

করোনা পরবর্তী সময়ে পৃথিবীর অধিকাংশ দেশই নিজের প্রয়োজনে টিকে থাকার তাগিদে ঠিক করে নিয়েছে নিজেদের করণীয়। করোনা ব্যারিয়ার তুলে দিয়ে পর্যটনের সহজ হাল-চাল ঠিক করে নিচ্ছে। ফল স্বরূপ প্রত্যেকটা দেশেই বিদেশী পর্যটক আকর্ষণে আবার আগের অবস্থায় চলে যাচ্ছে। অর্থ্যাত প্রতিটি দেশই রিথিংকিং লেভেল পার করে এসেছে বলা যায়।

আপনার হাতে যদি অন্যান্য দেশের করোনা পরবর্তী সময়ের পর্যটনের কোনো তথ্য না থাকে তাহলে বাংলাদেশের দিকে খেয়াল করলেও বুঝবেন। ভিসা পলিসি কিছুটা সহজতর হওয়ায় বাংলাদেশ থেকে ইউরোপ, অ্যামেরিকা কিম্বা কানাডার মতো দেশেও পর্যটকের উপচে পরা ভিড়। সেনজেনভুক্ত দেশগুলোতে ভিসার জন্য দাঁড়াতে সিরিয়াল পেতে অপেক্ষা করতে হচ্ছে বিশ/পঁচিশ দিন এমনকি কখনো কখনো একমাস পর্যন্ত। কানাডার সিরিয়াল পেতে অপেক্ষা করতে হচ্ছে ৪ থেকে ৬ মাস আর আগামী ২০২৪ সালের আগে অ্যামেরিকার ভ্রমণ ভিসা এপ্লিকেশন করার কোনো সিরিয়ালই নাই!

বাংলাদেশ থেকে যদি কানাডা, ইউরোপ-অ্যামেরিকা ভ্রমণের সিরিয়াল না পাওয়া যায় তাহলে আশেপাশের দেশগুলোতে ভ্রমণে যাওয়ার হার কী হতে পারে আশাকরি তা আপনি সহজেই অনুমান করতে পারছেন। এতেও যদি বুঝতে আপনার সমস্যা থাকে তাহলে একদিন সকালে যমুনা ফিউচার পার্কে ইন্ডিয়ান ভিসা এপ্লিকেশন সেন্টারে গিয়ে দেখতে পারেন কেমন ভিড়।

বাংলাদেশে বিদেশী পর্যটক আসে না কারণ আমরা আনতে চাই না। আমরা ফরেন কারেন্সি চাই না কারণ আমরা কানাডা, ইউরোপ-আমেরিকার মতো গরীব রাষ্ট্র নই। আমরা পর্যটনে যথাযথ নার্সিং করা ছাড়াই উন্নয়নের রোল মডেল। হাল আমলের আরেক গরীব রাষ্ট্র সৌদি আরব পর্যন্ত বিদেশী পর্যটক আকর্ষণ করতে চালু করেছে ভ্রমণ ভিসা।

টিকে থাকার জন্য আয় করার বিকল্প নাই। টিকে থাকাটা টেকসই করার জন্য বিদেশী মুদ্রা আয় করাটা এখন কৌশল। উন্নয়নের রোল মডেল বাংলাদেশ ছাড়া পৃথিবীর প্রতিটি দেশই বিদেশী পর্যটক আকর্ষণ করতে নিত্য নতুন উপায় উদ্ভাবন ও অবলম্বন করছে। অর্থ্যাত প্রতিটি দেশই পর্যটন নিয়ে যথেষ্ট রিসার্চ এন্ড ডেভেলপমেন্ট কার্যক্রমের মধ্যেই আছে। এই অবস্থায় বিশ্ব পর্যটন সংস্থা বিশ্ব পর্যটন দিবসের প্রতিপাদ্য নির্ধারন করেছে রিথিংকিং ট্যুরিজম। তারমানে এই সংস্থা বিশ্ব পর্যটনে নেতৃত্ব দিতে পারছে না। সংস্থা যথেষ্ট ব্যাকডেটেড বলে স্বীকার করে নিতে হবে।

সময়ের চেয়ে পিছিয়ে থাকা একটা সংস্থার ব্যাকারণগত ঠিক স্লোগান ভুল অনুবাদে মুখরিত হচ্ছে এই বাংলায় সেটা দেখতে পারাটাও একটা সুখ। বাংলাদেশ পর্যটনের হৃদয়ের গহীনে সুখের অসুখ।

 

আবু রায়হান সরকার

সম্পাদক, পর্যটনিয়া ডট কম

Leave a Reply