আলোকিত রন্ধনশিল্পী মায়ানুর

Share on Facebook

জ্ঞানই শক্তি তবে শক্তি মানেই জ্ঞান নয়। শক্তি ও জ্ঞান থাকার পরেও নিয়মানুবর্তিতা ছাড়া জীবনে সফল হওয়া যায় না। সত্যিকারের সফলতা অর্জন করতে হলে যে নিয়মানুবর্তিতা, জ্ঞান আর পরিশ্রমের সংমিশ্রণ ঘটাতে হয় তারই স্পষ্ট উদাহরণ মায়ানুর হাসান মনি। মায়ানুর একজন নারী উদ্যোক্তা, আলোকিত রন্ধনশিল্পী ও উদীয়মান ইউটিউবার। ইউটিউব চ্যানেল Mayas Cooking Mirror এর মাধ্যমে তিনি প্রতিনিয়ত নিজেকে ও তার রান্নার জগতকে আরও মেলে ধরছেন।

গতানুগতিকতার বাইরে পথ চলা বরাবরই কঠিন; কণ্টকাকীর্ণ। এই পথে চলতে গেলে সহ্য করতে হয় নেতিবাচক মন্তব্য, নানান রকম নিন্দা-মন্দ আর অতিক্রম করতে হয় হাজারো বাধাবিপত্তি। মায়ানুর আজ সবরকম বাধাবিপত্তি আর বন্ধুর পথ অতিক্রম করে স্বপ্ন পূরণের দ্বারপ্রান্তে। সবকিছু বাদ দিয়ে শুধুমাত্র নিজের কাজে লেগে থেকে দীর্ঘ পথ অতিক্রম করার পর আজ তিনি হয়ে উঠেছেন একজন সম্ভানাময়ী রন্ধনশিল্পী ও লেখিকা মায়ানুর হাসান মনি।

মায়ানুর হাসান মনির জন্ম ও বেড়ে উঠা পুরোনো ঢাকার লালবাগের পোস্তা ওয়াটার ওয়াকস্ রোড এলাকায়। চার বোনের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ মায়ানুর ছোটবেলা থেকেই ছিলেন আদুরে। স্কুল জীবনের শুরুতেই বাবাকে হারিয়ে শৈশব-কৈশোর কাটে মায়ের নিবিড় সানিধ্যে। স্কুল কলেজের সময়টুকুর বাইরে মা চোখের আড়াল হতেই দিতেন না। মায়ের মমতা ও স্নেহের আঁচলতলে থেকেই সফলভাবে শেষ করেন তার শিক্ষা জীবন।

বিদ্যানুরাগী মায়ানুর এএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় বোর্ড স্ট্যান্ড করে শিক্ষা জীবনের প্রারম্ভেই নিজের মেধা ও যোগ্যতা প্রমান করেছেন ১৯৯৩ ও ১৯৯৫ সালে। তারপর সমাজ কল্যান বিষয়ে ইডেন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে অনার্স ও মাস্টার্স পরীক্ষায়ও একইভাবে তিনি স্ট্যান্ড করে অবিস্মরণীয় করে রাখেন শিক্ষা জীবনের কৃতিত্ব।

বিভিন্ন বিষয়ের উপর প্রবন্ধ লিখালিখির অভ্যাসটা ছিল শিক্ষা জীবনের আরেকটি নতুন মাত্রা। এছাড়াও তিনি অসম্ভব সুন্দর কবিতা ও ছড়া লিখে অর্জন করেছেন অনেক পুরস্কার আর অসংখ্য সার্টিফিকেট।

পড়াশুনার পাশাপাশি তিনি Self-Reliant Kindergarten স্কুলে শিক্ষকতার সুযোগ পান। এখানে শিক্ষকতা করার সময় তিনি যে সম্মান পেয়েছেন তা আজও শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন।পড়াশুনা শেষে নিজের ইডেন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজেই নিজের বিভাগেও খণ্ডকালীন শিক্ষকতার প্রস্তাব পেয়েছিলেন মায়ানুর ২০০৪ সালে কিন্তু সময়ের প্রয়োজন ও পারিবারিক সিদ্ধান্তে তিনি বসেন বিয়ের পিঁড়িতে।

ছাত্রজীবনের বাইরে শুরু হয় নতুন জীবনের সম্পূর্ণ নতুন এক অধ্যায়। শ্বশুর-শাশুড়ী, দেবর-ননদে পরিপূর্ণ এক পরিবারের বড় বৌ হিসেবে পদার্পন করেন মায়ানুর। একটি স্বনামধন্য বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা স্বামী অতুলনীয় ব্যক্তিত্বের অধিকারী, উদার, ন্যায়পরায়ণ ও অসম্ভব ভালো মনের অধিকারী একজন মানুষ।


এক সময়ের টপ অব দ্যা ডিপার্টমেন্ট বিদ্যাময়ী মায়ানুর সংসার নামক কর্মক্ষেত্রেই খুঁজে নেন প্রাণ। বর্তমানে এক কন্যা ও এক পুত্র সন্তানের জননী। সাধ্যমত নিজের দায়িত্ব পালনে ব্যস্ততম এক সফল গৃহিণী। এক সময়ের বইয়ের পাতায় ডুবে থাকা আর ইডেনের সবুজ প্রান্তরে মিশে থাকা পড়ুয়া মেয়েটা যখন সংসার সাম্রাজ্যের রাণী তখনও তিনি দ্বায়িত্ব পালনে সিদ্ধহস্ত। তিনি জানতেন যখন যেকাজ করা দরকার তখন সেই কাজ করার মধ্যেই অনাবিল সুখ। তিনি অনুভব করতেন নিজেকে আনন্দ ও সুখ দেয়ার দায়ভার একান্ত নিজেরই।

স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখার গণ্ডি পেরিয়ে বাইরের পৃথিবীর সাথে মায়ানুরের কাজ-কর্মের যতটুকু অভিজ্ঞতা তা ঐ স্কুলের শিক্ষকতা পর্যন্তই সীমাবদ্ধ। অর্থাৎ শিক্ষাঙ্গনের বাইরে এখনো পথ চলা শুরু করেনি মায়ানুর। সংসার জয় করে একদিন পৃথিবীর পথে নামবেন। সংসারের বাইরেও নিজস্ব কর্মক্ষেত্রে নিজের যোগ্যতার স্বাক্ষর রাখবেন মনের মধ্যে লালন করেন এই সুপ্ত বাসনা। দিবারাত্রির সন্ধিক্ষণে গোধূলি বেলায় আকাশের রঙ মানুষকে নতুন আরেকটা দিনের স্বপ্ন দেখায়। আশায় বাঁচিয়ে রাখে। অপেক্ষার অবসান হয় ভোরের সূর্যোদয়ের মাধ্যমে। রান্না বিষয়ক বিভিন্ন ধরনের প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করার সুযোগ যেন মায়ানুরের জীবনে সেই অপেক্ষার অবসান, সেই নতুন সূর্যোদয়। একেকটি প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ আর একেকটা সফলতা অর্জন যেন মায়ানুরের জীবনকে করে গড়ে তোলে আরও আলোকিত আরও প্রতিজ্ঞাবদ্ধ আরও আত্মবিশ্বাসী।

সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত বিশিষ্ট রন্ধনশিল্পী হাসিনা আনছার সম্পাদিত ঐতিহ্যবাহী রান্নাঃ সেরা ১০০ রেসিপি বইয়ে তার একটি রেসিপি স্থান পেয়েছে। রন্ধন শিল্পকে ভালবেসে ও কেন্দ্র করেই নারী উদ্যোক্তা ও আলোকিত রন্ধনশিল্পী মায়ানুর এগিয়ে যেতে চান নিজের লক্ষ্যে।

রন্ধন শিল্পে নিজের অভিজ্ঞতা ও যোগ্যতার উপর ভ’র করে ইতোমধ্যে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল একুশে টিভিতে করেছেন রান্নার অনুষ্ঠানে। এছাড়াও বেশ কয়েকটি পত্র-পত্রিকায় নিয়মিত রেসিপি লিখছেন।

এগুলোর বাইরেও নিজের ব্যস্ত সময় পার করছেন রান্না বিষয়ক নিজস্ব ইউটিউব চ্যানেল
Maya’s Cooking Mirror নিয়ে। একমাত্র মেয়ে ও স্বামীর সহযোগিতা ও অনুপ্রেরনায় এই চ্যানেলটির যাত্রা। চ্যানেলটি নতুন হলেও গুণগতমানে সমৃদ্ধ কন্টেন্ট আর মায়ানুরের অক্লান্ত পরিশ্রমের কারণে জনপ্রিয়তা বাড়ছে উল্লেখযোগ্য হারে।

সমাজ কল্যানের একজন ছাত্রী হিসেবে সমাজের জন্য কিছু করার তীব্র বাসনা লালন করে আসছেন বহুদিন ধরে। সবসময় মনে তীব্র বাসনা তাড়া করে সবার জন্য কিছু করার।


রন্ধন শিল্পের প্রতি ভালোবাসা আর ভালোলাগা থেকেই তিনি হয়েছেন নারী উদ্যোক্তা ও রন্ধনশিল্পী। পারিবারিক উৎসাহ, নিকট আত্মীয়দের প্রশংসা আর নিজের আগ্রহ থেকেই কঠোর পরিশ্রমের কারণে একের পর এক সফলতা অর্জন করে চলছেন মায়ানুর। সফলতার বিস্তৃতি আরও ব্যাপকভাবে বাড়ানোর ইচ্ছে কারণ তিনি আরও নারীদেরকে স্বাবলম্বী হওয়ার পথে উদ্বুদ্ধ করতে চান। নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে নারীরা জনসংখ্যা থেকে হয়ে উঠুক ধনসম্পদ এই কামনা করেন তিনি।

মায়ানুর হাসান মনি তার নিজস্ব ইউটিউব চ্যানেলে শেখাচ্ছেন কিভাবে খুব সাধারণ কিছু উপকরণে অসাধারণ কিছু মুখরোচক খাবার তৈরী করা যায়। গতানুগতিকের চেয়ে একটু ভিন্ন স্বাদ, ভিন্ন রঙ, ভিন্ন পরিবেশন যেন মায়ার স্টাইল। মায়ানুরের অধীর অপেক্ষা Maya’s Cooking Mirror নিয়ে একটি শুভ্র ভোরের জন্য। বহুল প্রতিক্ষিত সেই ভোর হবে নরম আর ফুটফুটে আলোয় আলোকিত, ভালোলাগার সুগন্ধে সুবাসিত আর ভালোবাসার সৌরভে সুরভিত। এই চিরচেনা পৃথিবীটা আরো নতুন করে কাছে পেতে চায় মায়ানুর এই চ্যানেলের সফলতার মাধ্যমে। পবিত্র ও কাঙ্খিত সেই সাফল্যের ভোর দেখার সুযোগ হোক মায়ানুরের প্রতি রইলো আমাদের সেই প্রত্যাশা ও শুভ কামনা।

Leave a Reply