৬৪ বছরের নারী পর্যটক ঘুরে বেড়ান তার মোবাইল হোমে

Share on Facebook

ব্যয়বহুল ও নিয়মতান্ত্রিক
কাঠামোগত জীবনে আবদ্ধ হতে চায় না যারা, স্বাধীন ও স্বল্পখরচার জীবনযাপনই টানে তাদেরকে
বেশিরভাগ সময়। কখনো একা কখনোবা সঙ্গী কিংবা পরিবার নিয়েই তারা যাপন করে ভিন্ন
ধরনের জীবন। বেশিরভাগ সময়ই এমনটা করতে দেখা যায় আমেরিকা কিংবা ইউরোপীয়ান
দেশগুলোতে। ছোট বাড়ি কিংবা মোবাইল হোমে বসবাস করবার প্রচলণ চলে আসছে বিগত কয়েক বছর
ধরেই। তেমনই একজন ক্লেয়ার, ৬৪ বছর বয়সী অস্ট্রেলিয়ান একজন নারী পর্যটক। ঘুরে বেড়ান
তিনি তার ছোট্ট বাড়ি নিয়ে সবখানে।

পেশায় ক্লেয়ার একজন
ফটোগ্রাফার। তার সীমাবদ্ধ আয়ে একটি বড় বাড়ির খরচা চালানো দুষ্কর হয়ে উঠবার পরে, সে
সীদ্ধান্ত নেয় বাড়িটি বিক্রি করে দিয়ে ছোট্ট কোথাও বসবাস করবার। প্রায় ১ বছর ধরে
পড়াশোনা ও খোঁজখবর নেয়ার পাশাপাশি রীতিমতো গবেষনা করেই সে কেনে প্রায় ৬ মিটার
দৈর্ঘ্যের একটি ভ্যান। এবং নিজের বানানো ডিজাইনেই সে তৈরী করে ছোট্ট এই মোবাইল
হোম।

প্রায় ৬ মিটারের (১৯.৫
ফুট) ভ্যানটি আসলে ২০১৬ সালের ডুক্যাটো ম্যাক্সি টার্বো ডিজেল। কেনার সময়ে এর
মূল্য ছিলো ২৬ হাজার ডলার। ভ্যানটিকে একটি মোবাইল হোম তৈরী করবার জন্য ক্লেয়ারের
খরচ হয় আরও ৪৫ হাজার ডলার।

নিজের এই ছোট্ট বাড়িকে আদর
করে ক্লেয়ার ডাকেন ‘মাউজ হাউজ’ কিংবা ইঁদুরের ঘর বলে। এই মাউজ হাউজে ক্লেয়ারের ব্যাবহারের
জন্য আছে রান্নাঘর, প্যান্ট্রি, ডাইনিংরুম, বেডরুম, বাথরুম, মিনি ফ্রিজ, বসার
ব্যবস্থা এবং ব্যবহার করবার মতো আরও অনেক জায়গা। এখানেই কাজ করবার জন্য অফিস ডেস্কও
আছে তার একটি। ভ্যানের ছাদ, মেঝে ও চারদিকের দেয়ালে আছে ডবল বিরোধক ব্যবস্থা, যাতে
করে নিরাপদবোধ করেন তিনি আরও বেশি।

রাঁধতে ভালোবাসা ক্লেয়ার
ঢেলে সাঁজিয়েছেন তার রান্নাঘরকে। অসংখ্য মসলা এবং সসের আয়োজন তিনি সবসময়ই রাখেন
তার প্যান্ট্রিতে। রান্নার জন্য তিনি ব্যবহার করেন ৩ চুলার স্টোভ। যাতে ব্যবহার
করা হয় সিলিন্ডার গ্যাস। ভ্যানেতেই ২টি বাড়তি সিলিন্ডারও তিনি রাখেন প্রয়োজনের
জন্য। এছাড়াও, রান্নাঘরে আরও আছে ওভেন, সিংক, এবং কাপবোর্ড। কাপবোর্ডে তিনি খাবার,
থালা-বাটি ও ব্যবহার্য বিভিন্ন হাড়ি-পাতিল রাখেন তিনি সেখানে।

পানির জন্যও সুব্যবস্থা করা
আছে এখানে। ভ্যানের নীচেই রাখা আছে ৭০ লিটার পানির একটি ট্যাংক। এছাড়াও, ভ্যানে
আরও আছে পানি গরম করবার গিজার। শুধু মাত্র একটি সুইচ চাপলেই হয়ে যায়। তার যাবতীয়
কাজের জন্য ক্লেয়ার ব্যবহার করেন সৌরবিদ্যুতের প্যানেল ও ২০০ এএমপি পাওয়ারের একটি লিথিয়াম
ব্যাটারি।

ভ্যানে বসবাসের জন্য তার
কী কী প্রয়োজন তা বোঝার জন্য ক্লেয়ার প্রথমে তালিকা করেন সাধারন একটি সারাদিনে
তিনি কী কী করেন এবং সেজন্য তার কী কী বস্তুর প্রয়োজন হয়।

ভ্যানের ভেতরে থাকা তার
বিছানার ঠিক নীচেই তিনি রেখেছেন বাথরুমের জন্য ব্যবহার করার পানির পাম্প। এছাড়াও,
সেখানে তিনি রেখেছেন তার বাড়তি সৌরবিদ্যুতের প্যানেল। যাতে করে প্রয়োজনে পালতে
নিতে পারেন তিনি ব্যবহার করতে থাকা সৌরবিদ্যুতের প্যানেলটিকে। বিছানার ঠিক ওপরেই
তিনি রেখেছেন একটি স্কাইলাইট। প্রায়ই ছবি তোলেন তিনি সেখানে থেকে।

ক্লেয়ারের মাউজ হাউজ তথা মোবাইল হোম সম্পর্কে বলতে যেয়ে তিনি বলেন, এমন ক্যাম্পারভ্যানে বসবাস করার পুরো ব্যাপারটাই আসলে নির্ভরশীল ইচ্ছের ওপরে। ক্যাম্পারভ্যানে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় সবকিছুই মজুদ রয়েছে কিনা জানার জন্য সবসময়ই দরকার কেবল একটু খেয়াল রাখবার। ব্যাপারটা অনেকটা এমন যে, আপনি জানেন আপনার পানির সাপ্লাইতে আর কতটুকু পানি বাকি আছে, সেজন্য আপনি সচেতন থাকেন পানির ব্যাপারে। কিংবা আপনি জানেন যে আপনার ব্যাটারিগুলোতে কতটা চার্জ বাকি আছে আর, তাই নিজের কাজকর্ম সম্পর্কে আপনি হয়ে ওঠেন আরও বেশি সচেতন ও আরও বেশি খেয়ালি।

Leave a Reply