বাংলাদেশের একমাত্র সোয়াম্প ফরেস্ট- রাতারগুল

Share on Facebook

উত্তরে গোয়াইন নদী আর দক্ষিণে বিশাল হাওর তারই মাঝখানে ‘জলারবন’ রাতারগুল। রাতারগুল বাংলাদেশের একমাত্র সোয়াম্প ফরেট। আয়তন প্রায় ৩৩২৫ একর। এর মধ্যে ৫০৪ একর বন ১৯৭৩ সালে বন্য প্রাণী অভয়ারণ্য ঘোষণা করা হয়। ভিতরের দিকে এই বনের গভীরতা এতো বেশী যে, সুর্যের আলো গাছের পাতা ভেদ করে জল ছুঁতে পারে না।

সিলেট জেলার সীমান্তবর্তী উপজেলা গোয়াইনঘাটের ফতেহপুর ইউনিয়নে এই জলার বনের অবস্থান। সিলেট নগরী থেকে দূরত্ব প্রায় ২৬ কিলোমিটার। রাতারগুল প্রাকৃতিক বন হলেও স্থানীয় বন বিভাগ এখানে বেত, কদম, হিজল, বরুন, করচ ওমুর্তাসহ বেশকিছু গাছ রোপন করেন। এছাড়াও এখানে চোখে পড়ে কদম, জালিবেত, বট ও অর্জুন সহ প্রায় ২৫ প্রজাতির জলসহিষ্ণু উদ্ভিদ।গাছের মধ্যে করচই বেশি। তবে নদীর উলটো দিকে রাতারগুলের বেশ বড় একটা অংশেশিমুল বিল হাওর আর নেওয়া বিল হাওরের পাশ দিয়ে বাণিজ্যিকভাবে মুর্তা লাগিয়েছে বন বিভাগ। মুর্তা দিয়ে শীতল পাটি হয়। আর পাখিদের মধ্যে আছে সাদা বক, কানা বক, মাছরাঙ্গা, টিয়া, বুলবুলি, পানকৌড়ি, ঢুপি, ঘুঘু, চিল ও বাজ। শীতে মাঝেমধ্যে আসে বিশালকায় সব শকুন। আর লম্বা পথ পাড়ি দিয়ে ঘাঁটি গাড়ে বালিহাঁসসহ হরেক জাতের পাখি। সাপের মধ্যে রয়েছে অজগর, গুইসাপ, গোখরা, জলধুড়াসহ বিষাক্ত অনেক প্রজাতি। বর্ষায় বনের ভেতর পানি ঢুকলে এসব সাপ উঠে পড়ে গাছের ওপর। বনের ভেতর দাঁপিয়ে বেড়ায় মেছোবাঘ, কাঠবিড়ালি, বানর, ভোদড়, বনবিড়াল, বেজি, শিয়ালসহ নানা প্রজাতির বণ্যপ্রাণী। মায়া, আইড়, কালবাউস,টেংরা, খলিশা, রিঠা, পাবদা,  রুইসহ আরো অনেক জাতের মাছ পাবেন এখানে।

সোয়াম্প ফরেস্ট বা জলার বন কি? পানিসহিষ্ণু বড় গাছপালা একটা বনের রূপ নিলে তবেই তাকে বলে সোয়াম্প ফরেস্ট বা জলার জঙ্গল। উপকূলীয় এলাকার বাইরে অন্যান্য জায়গার সোয়াম্প ফরেস্টগুলো সব সময় জলে প্লাবিত থাকে না। কেবল বর্ষায় এই বনের গাছগুলো আংশিক জলে ডুবে থাকে।

“সিলেটের সুন্দরবন”খ্যাত রাতারগুল সোয়াম্প ফরেস্টকে অনেকেই বাংলার আমাজন নামে ডাকে। বাংলার আমাজন ভ্রমণের জন্য বর্ষাকাল উপযুক্ত সময় হলেও শীতকালেও এর আবেদন একটুও ফুরায় না।হাওর আর নদী বেষ্টিত অপূর্ব সুন্দর বনের দক্ষিণ পাশে সবুজের চাদরে আচ্ছাদিত জালি ও মূর্তা বেত বাগান। এর পেছনেই মাথা উঁচু করে আছে সারি সারি জারুল-হিজল-কড়চ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে বাংলার গর্ব রাতারগুল। শীতকালে হাজার হাজার মাইল দূরে থেকে এসে ভিড় জমায় অতিথি পাখিরা। ডিঙ্গি নিয়ে বনের ভেতরে গেলে ঝাঁকে ঝাঁকে অতিথি পাখি আপনাকে উড়ে সরে গিয়ে পথ করে দিবে। এ দৃশ্য আসলেই মনোরম!

কীভাবে যাবেনঃ ঢাকা বা বাংলাদেশের যেকোনো প্রান্ত হতে প্রথমে সিলেট যেতে হবে। সিলেট থেকে রাতারগুল সোয়াম্প ফরেস্টে যাওয়া যায় দুভাবে। সিলেট শহরের পাশে খাদিম চা বাগান ও খাদিম নগর জাতীয় উদ্যানের ভিতরের রাস্তা দিয়ে খুব অল্প সময়ে রাতারগুল যাওয়া যায়। এই পথে সিএনজি অটোরিকশা বা জিপ নিয়ে শ্রীঙ্গি ব্রীজ যেতে হয়। সিলেট থেকে সকালে রাতারগুল গিয়ে বিকেলের মধ্যেই ফিরে আসা যায়। সারাদিনের জন্য সিএনজি বা অটোরিকশার ভাড়া ১২০০ থেকে ১৫০০ টাকা। আবার সিলেটের আম্বরখানা থেকে লোকাল সিএনজিতে করে শ্রীঙ্গি ব্রীজ পর্যন্ত যাওয়া যায় ভাড়া জনপ্রতি ১০০ টাকা। শ্রীঙ্গি ব্রীজ থেকে রাতারগুল ফরেস্টে ঢোকার জন্য জেলেদের ছট নৌকা পাওয়া যায় ৪ থেকে ৬ জন উঠতে পারে এরকম একটা নৌকার ভাড়া ৫০০/৬০০ টাকা।

রাতারগুল যাওয়ার দ্বিতীয় পথটি হলো, সিলেট থেকে জাফলংগামী গাড়িতে গিয়ে সারিঘাট নামতে হবে। ভাড়া জনপ্রতি ৪০-৫০ টাকা। সারিঘাট থেকে বেবিট্যাক্সিতে করে গোয়াইনঘাট বাজার। অথবা সিলেট থেকে একটি মাইক্রোবাস নিয়ে সোজা গোয়াইনঘাট। সেখান থেকে প্রায় আধঘন্টা ইঞ্জিনচালিত নৌকায় করে যেতে হবে রাতারগুল সোয়াম্প ফরেস্টের পাশে। খরচ পরবে ৫০০ থেকে ১০০০ টাকার মত। ইঞ্জিনচালিত নৌকা বনের ভেতর ঢুকবে না। বনে ঢুকতে হবে ডিঙ্গি নৌকা নিয়ে। ১০-১২ জন উঠতে পারে এরকম একটি নৌকার সারাদিনের জন্য ভাড়া ১২০০ থেকে ১৫০০ টাকা।

সর্তকতাঃ

রাতারগুল বেড়ানোর উপযুক্ত সময় বর্ষাকাল। এ বনের চারিদিকে জলে পূর্ণ থাকে বলে ভ্রমণকালীন কিছু বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। বর্ষায় বন ডুবে গেলে বেশিরভাগ সাপ আশ্রয় নেয় গাছের ডাল কিংবা শুকনো অংশে। তাই চারপাশ খেয়াল করে চলতে হবে। এ ছাড়া এ সময় জোঁকেরও উপদ্রব আছে। সাঁতার না জানলে সঙ্গে লাইফ জ্যাকেট রাখা জরুরি। এ ছাড়া বর্ষাকাল বলে ছাতা, বর্ষাতি কিংবা পঞ্চ সঙ্গে নিতে হবে।

 

কোথায় থাকবেন:

সিলেট শহরে রাতে অবস্থান করার জন্য বিভিন্ন মানের হোটেল আছে। তবে এ ভ্রমণে প্রকৃতির একান্ত সান্নিধ্য উপভোগ করতে চাইলে অবস্থান করতে পারেন শুকতারা প্রকৃতি নিবাসে। পাহাড় চূড়ায় চমত্কার আর আধুনিক কটেজ আছে শুকতারায়। শুকতারার কক্ষ ভাড়া ৫০০০-৬৫০০ টাকা। তবে বৃহস্পতি, শুক্র ও শনিবার ছাড়া সপ্তাহের অন্যান্য দিনে এ মূল্যের উপরে মিলবে ১০ ভাগ ছাড়। যোগাযোগ :শুকতারা প্রকৃতি নিবাস, উদ্দীনের টিলা, শাহপরাণ উপশহর, খাদিমনগর সিলেট। ফোন :০৮২১-২৮৭০৯৯৪-৫,০১৭৬৪৫৪৩৫৩৫।

 

Leave a Reply